Dhaka বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জ্বালাও-পোড়াও-খুন, বিএনপির একমাত্র গুণ: প্রধানমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও-পোড়াও-খুন, বিএনপির একমাত্র গুণ। বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পায়। এ কারণে নির্বাচন বন্ধের জন্য তারা সন্ত্রাস করে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে যায়, আওয়ামী লীগ এগিয়ে নেয়।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় একেএম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়েছে, আর বিএনপি পিছিয়েছে। বিএনপির দুঃশাসনে সবাই ভীত। বোমা হামলা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এসবই বিএনপির কাজ।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি ভোটে আসতে ভয় পায়। নির্বাচনে জিতবে না বলেই জনগণকে ভোট থেকে বঞ্চিত করতে চায় বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেবার বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট ছিল। সেই নির্বাচনে শুধুমাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি সিট। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। বাকিগুলো আমাদের যারা জোটে ছিল তারা পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না, ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে।

jagonews24

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ থেকে তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তিন হাজারের ওপর তারা মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। তিন হাজার আট শর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ। এটাই তারা পারে। আর কিছু পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা দেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। বিএনপির আমলে শিক্ষার হার কমেছে আর দারিদ্র্যের হার বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন দেশের দায়িত্ব দেন তখন এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। মানুষের ধানের গোলাও ছিল না। পাকিস্তানি আর্মি সব পুড়িয়ে দেয়। শূন্য হাতে বঙ্গবন্ধু দেশের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করেন। প্রতিটি ঘরে ঘরে তিনি রিলিফ পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি মাত্র তিন বছর সাত মাস দেশ শাসনের সুযোগ পান। এসময় তিনি দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা-বাবা, ভাই ও চাচাকেসহ ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশ থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু এ বেঁচে থাকাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি থাকলে পেছনের দিকে যায়। আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে দুঃশাসন, দুর্নীতি করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো মানুষের ওপর অত্যাচার করে।

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, মুজিববর্ষে আমার অঙ্গীকার ছিল কোনো কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীনদের ভূমি দিয়েছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করেছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়েছি। এখন আর শিশুদের জন্য বই কিনতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। তবে আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। অযথা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষের নতুনভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন দেওয়া।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাবে।

নির্বাচন যাতে না হয়, সে চক্রান্ত এখনো আছে: শেখ হাসিনা

‘আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের প্রাচীন প্রজ্ঞাশীল সংগঠন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা কারোর ওপর মুখাপেক্ষী না। কারোর ওপর নির্ভর করবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময়ে বিনা টাকায় টিকা দিয়েছি। শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছি। দলিত সম্প্রদায়ের আরও ফ্ল্যাট বানিয়ে দেবো। আমরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি মানুষ হত্যা করে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। পুলিশকে হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতি বাড়িতে হামলা করেছে।

জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবা না’। তো বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। নির্বাচন ঘিরে অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনো আছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, কাজেই দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে। মিলিটারি ডিকটেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা সেই একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে।’

তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে। আজ ৪ তারিখ। ৭ তারিখের নির্বাচনে আমি আপনাদের অনুরোধ করব সবাই শান্তিপূর্ণ থাকবেন। আমি দেশের সবার কাছে অনুরোধ করব, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগই জনগণকে নিয়ে জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। এই টের অধিকার সাংবিধানিক অধিকার, সে অধিকার আমরা সংরক্ষিত করেছি। সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ২০০৯ থেকে ২০২৩ ,গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আজ আমরা ২০২৪ সালে পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের এত উন্নতি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এখন মানুষ সেবা পাচ্ছে, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি সেখানে কী করে, আপনারা দেখেছেন। ২৮ অক্টোবর তারা কী ভয়ংকরভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশকে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে, সে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে এবং সেখানে অনেক পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে। ঠিক ২০১৩ সালে যেভাবে হত্যা করেছিল, ঠিক একইভাবে আবারো করেছে।

তিনি বলেন, ঠিক প্যালেস্টাইনে (ফিলিস্তিন) ইসরায়েল যেভাবে হামলা করছে, হাসপাতালের ওপর বম্বিং (বোমাবর্ষণ) করছে, ঠিক বিএনপিও সেই ইসরায়েলকে অনুসরণ করে আজ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করছে। ওদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। আজকে নির্বাচনে তারা আসেনি, সেটি তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকারে বাধা দেওয়া কখনোই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। এ অধিকার মানুষের অধিকার। সুতরাং ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ইনশাআল্লাহ হবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাংক মনে করেছিল, তারা টাকা না দিলে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে না। কিন্তু আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতির কথা বলেছিল তারা। আমি বলেছিলাম, প্রমাণ দিতে হবে। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। মামলা হয়েছিল কানাডার কোর্টে। কোর্ট বলেছিল, এখানে দুর্নীতি হয়নি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমরা নিজের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ করব। আমরা তা করতে পেরেছি।

স্বাধীনতার ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ধারক নারায়ণগঞ্জ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা ঘোষণা দেন তখন ৮মে তিনি এই নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে বিশাল জনসভা করেন। ৬ দফাকে প্রতিষ্ঠিত করতে নারায়ণগঞ্জ ও এখানকার মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা মানুষের ঘর করে দিচ্ছি। আজকে ৩৩টি জেলা ভূমিহীন পরিবারমুক্ত। বাকিগুলোও আমরা করে ফেলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৮ লাখ ৪১ হাজার পরিবারকে আমরা বিনা পয়সায় ২ কাটা জমি ও ঘর করে দিয়েছি। আমরা মানুষকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বয়স্ক ও বিধবা ভাতার সুব্যবস্থা করেছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পৌঁছে গেছে।

Untitled-2

সবাইকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো? এসময় উপস্থিত জনতা উল্লাস করে সম্মতি জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিবেন। অবশ্য নৌকায় এবার লাঙ্গলও চড়ে বসেছে। আপনারা সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দলকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের মার্কা নৌকা মার্কা, এ নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, এ  নৌকা আজ উন্নয়ন দিয়েছে, এই নৌকা-ই আগামী উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের আপনারা জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের কাছে সে আহ্বান জানাই।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাতের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর আগে বক্তব্য দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

 

আবহাওয়া

আ.লীগ কর্মীদের প্রবেশ, দুধে ধোয়া হলো বিএনপির অফিস

জ্বালাও-পোড়াও-খুন, বিএনপির একমাত্র গুণ: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও-পোড়াও-খুন, বিএনপির একমাত্র গুণ। বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পায়। এ কারণে নির্বাচন বন্ধের জন্য তারা সন্ত্রাস করে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে যায়, আওয়ামী লীগ এগিয়ে নেয়।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় একেএম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়েছে, আর বিএনপি পিছিয়েছে। বিএনপির দুঃশাসনে সবাই ভীত। বোমা হামলা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এসবই বিএনপির কাজ।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি ভোটে আসতে ভয় পায়। নির্বাচনে জিতবে না বলেই জনগণকে ভোট থেকে বঞ্চিত করতে চায় বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেবার বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট ছিল। সেই নির্বাচনে শুধুমাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি সিট। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। বাকিগুলো আমাদের যারা জোটে ছিল তারা পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না, ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে।

jagonews24

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ থেকে তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তিন হাজারের ওপর তারা মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। তিন হাজার আট শর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ। এটাই তারা পারে। আর কিছু পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা দেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। বিএনপির আমলে শিক্ষার হার কমেছে আর দারিদ্র্যের হার বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন দেশের দায়িত্ব দেন তখন এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। মানুষের ধানের গোলাও ছিল না। পাকিস্তানি আর্মি সব পুড়িয়ে দেয়। শূন্য হাতে বঙ্গবন্ধু দেশের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করেন। প্রতিটি ঘরে ঘরে তিনি রিলিফ পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি মাত্র তিন বছর সাত মাস দেশ শাসনের সুযোগ পান। এসময় তিনি দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা-বাবা, ভাই ও চাচাকেসহ ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশ থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু এ বেঁচে থাকাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি থাকলে পেছনের দিকে যায়। আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে দুঃশাসন, দুর্নীতি করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো মানুষের ওপর অত্যাচার করে।

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, মুজিববর্ষে আমার অঙ্গীকার ছিল কোনো কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীনদের ভূমি দিয়েছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করেছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়েছি। এখন আর শিশুদের জন্য বই কিনতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। তবে আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। অযথা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষের নতুনভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন দেওয়া।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাবে।

নির্বাচন যাতে না হয়, সে চক্রান্ত এখনো আছে: শেখ হাসিনা

‘আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের প্রাচীন প্রজ্ঞাশীল সংগঠন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা কারোর ওপর মুখাপেক্ষী না। কারোর ওপর নির্ভর করবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময়ে বিনা টাকায় টিকা দিয়েছি। শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছি। দলিত সম্প্রদায়ের আরও ফ্ল্যাট বানিয়ে দেবো। আমরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি মানুষ হত্যা করে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। পুলিশকে হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতি বাড়িতে হামলা করেছে।

জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবা না’। তো বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। নির্বাচন ঘিরে অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনো আছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, কাজেই দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে। মিলিটারি ডিকটেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা সেই একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে।’

তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে। আজ ৪ তারিখ। ৭ তারিখের নির্বাচনে আমি আপনাদের অনুরোধ করব সবাই শান্তিপূর্ণ থাকবেন। আমি দেশের সবার কাছে অনুরোধ করব, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগই জনগণকে নিয়ে জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। এই টের অধিকার সাংবিধানিক অধিকার, সে অধিকার আমরা সংরক্ষিত করেছি। সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ২০০৯ থেকে ২০২৩ ,গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আজ আমরা ২০২৪ সালে পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের এত উন্নতি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এখন মানুষ সেবা পাচ্ছে, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি সেখানে কী করে, আপনারা দেখেছেন। ২৮ অক্টোবর তারা কী ভয়ংকরভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশকে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে, সে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে এবং সেখানে অনেক পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে। ঠিক ২০১৩ সালে যেভাবে হত্যা করেছিল, ঠিক একইভাবে আবারো করেছে।

তিনি বলেন, ঠিক প্যালেস্টাইনে (ফিলিস্তিন) ইসরায়েল যেভাবে হামলা করছে, হাসপাতালের ওপর বম্বিং (বোমাবর্ষণ) করছে, ঠিক বিএনপিও সেই ইসরায়েলকে অনুসরণ করে আজ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করছে। ওদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। আজকে নির্বাচনে তারা আসেনি, সেটি তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকারে বাধা দেওয়া কখনোই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। এ অধিকার মানুষের অধিকার। সুতরাং ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ইনশাআল্লাহ হবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাংক মনে করেছিল, তারা টাকা না দিলে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে না। কিন্তু আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতির কথা বলেছিল তারা। আমি বলেছিলাম, প্রমাণ দিতে হবে। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। মামলা হয়েছিল কানাডার কোর্টে। কোর্ট বলেছিল, এখানে দুর্নীতি হয়নি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমরা নিজের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ করব। আমরা তা করতে পেরেছি।

স্বাধীনতার ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ধারক নারায়ণগঞ্জ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা ঘোষণা দেন তখন ৮মে তিনি এই নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে বিশাল জনসভা করেন। ৬ দফাকে প্রতিষ্ঠিত করতে নারায়ণগঞ্জ ও এখানকার মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা মানুষের ঘর করে দিচ্ছি। আজকে ৩৩টি জেলা ভূমিহীন পরিবারমুক্ত। বাকিগুলোও আমরা করে ফেলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৮ লাখ ৪১ হাজার পরিবারকে আমরা বিনা পয়সায় ২ কাটা জমি ও ঘর করে দিয়েছি। আমরা মানুষকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বয়স্ক ও বিধবা ভাতার সুব্যবস্থা করেছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পৌঁছে গেছে।

Untitled-2

সবাইকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো? এসময় উপস্থিত জনতা উল্লাস করে সম্মতি জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিবেন। অবশ্য নৌকায় এবার লাঙ্গলও চড়ে বসেছে। আপনারা সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দলকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের মার্কা নৌকা মার্কা, এ নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, এ  নৌকা আজ উন্নয়ন দিয়েছে, এই নৌকা-ই আগামী উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের আপনারা জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের কাছে সে আহ্বান জানাই।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাতের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর আগে বক্তব্য দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম প্রমুখ।