নিজস্ব প্রতিবেদক :
জোর করে চাঁদাবাজি করতে গেলেতো আবার আমরা আওয়ামী লীগ হয়ে গেলাম বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জোর করে নয়, ভালোবেসে জনগণের ভোট নিতে হবে।
বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে উত্তরায় বিএনপির সদস্য নবায়ন এবং প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচির ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কারো ব্যবসা দখল করে, চাঁদাবাজি করে, আইন হাতে তুলে নিয়ে বিএনপি যেন আওয়ামী লীগ না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
দলীয় সদস্য সংগ্রহের তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ নেব না, কিন্তু যারা ভালো মানুষ তাদের বাদও দেব না। আওয়ামী লীগের যারা প্রমাণিত খারাপ মানুষ, মাফিয়া, দখলদার, ডাকাত; তাদের দলে নেয়া যাবে না। তবে যারা রাজনীতি করেনি, খারাপ না, ভালো মানুষ; তাদের বাছাই করে দলে নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শক্তি বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছিল। ছাত্রদের জীবনদান এবং ১৫ বছরের ত্যাগ শিকার হয়েছে শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার জন্য।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা বলেন, দেশের ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা ধ্বংস করেছিল আওয়ামী লীগ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সরকারের সঙ্গে যখন দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল, তখন ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে তারেক রহমান বৈঠক করেন। যে বৈঠক ঐতিহাসিক ঘটনা। সংঘর্ষে না গিয়ে দুই নেতা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। একেই বলে রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা। সবাই পছন্দ করেছে তাদের এ বৈঠক ও সিদ্ধান্তকে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সবাই লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইউনূস-তারেক বৈঠক পছন্দ হয়নি বলেই নারাজ হয় একটি দল। তাই তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যায়নি। এখন নির্বাচন নাই তাদের গুরুত্ব আছে; যখন নির্বাচন হবে–নতুন সরকার আসবে-তখন তাদের গুরুত্ব থাকবে না। তারা জানে নির্বাচন হলে তাদের গুরুত্ব কমে যাবে, তাই তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে নারাজ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার দল আওয়ামী লীগের মতো ভোট কারচুপি করবে না এবং আইন ভঙ্গ করবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, ‘বিএনপি জনগণের অধিকার হরণ করে নয়; বরং বিনয়ী হয়ে ভোট চাইবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময় ভোটকেন্দ্রে কেউ যেতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই তার ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা এটি চাই না। আমরা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলাম, যাতে সবাই তার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই কথা বলেছেন যে, মানুষকে শাসিয়ে বা তাদের অধিকার হরণ করে ভোট পাওয়া যাবে না; বরং বিনয়ী হয়ে ভোট চাইতে হবে।
১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১৫ বছর ধরে আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। এই ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যা করেছে আমরা এসব কিছুই করব না। আওয়ামী লীগের পরিণতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যেন সকলের অধিকার রক্ষা করতে পারি।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের বিচক্ষণতার প্রশংসা ও ড. ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে লন্ডনের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলেছিলাম, আর ইউনূস সাহেব বলেছিলেন এপ্রিলে। এখানে এক প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু তারেক রহমানের বিচক্ষণতা দেখেন, তিনি দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন, যাতে কোনো বিপদ না আসে। এমন বিচক্ষণ নেতা খুব কমই আছে। তাই তারেক রহমান ও ড. ইউনূসকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে নিজের বয়স এবং দলের তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ফখরুল বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে। যে কারণে বক্তব্য শুরু করতে আমার সময় লেগেছে। তার মানে আমাদের বয়স হওয়ায় কর্মক্ষমতা কমে গেছে। তাই আমাদের জায়গায় তরুণদের আসতে হবে, তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। তরুণদের নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে হবে।
তুরাগ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ খোকনের সভাপতিত্বে ও থানার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মো. জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. মোস্তফা জামান।