নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় নাগরিক পাটি (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের ড্রাফট আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত উপস্থাপন করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অপারগতা প্রকাশ করেছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ যেন কোনো দলের চাপে পড়ে প্রতারণার বস্তু না হয়, সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এক দল জুলাই সনদকে মুছে দিতে চায়, আরেক দল চায় তা ভেস্তে দিতে। জুলাই সনদ যেন কোনো দলের চাপে পড়ে প্রতারণার বস্তু না হয় সে বিষয়ে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছি।
আখতার হোসেন বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কেউ সনদ থেকে স্বাক্ষর মুছে ফেলার চেষ্টা করছে আবার কেউ জুলাই সনদ যেন বাস্তবায়ন না হয় সেজন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর শুধু আনুষ্ঠানিকতা উল্লেখ করে এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, সনদ বাস্তবায়নে আদেশের খসড়া এবং এর পরিধি জনগনকের জানাতে হবে। স্পষ্ট করতে হবে। এসব দেখে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এনসিপি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হলেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এ সনদে সই করবে বলে জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয় একটা আনুষ্ঠানিকতা; যে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জুলাই সনদের বাস্তবায়নের যে জায়গাটি আছে—সেটা আসলে সুনিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জায়গাটা সুনিশ্চিত হলে পরেই জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে আগ্রহী রয়েছে।
এনসিপি নেতা বলেন, কমিশন আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি আদেশ প্রস্তুত করছেন, যেটাকে আমরা একটা অগ্রগতি হিসেবে দেখি। তথাপিও সে আদেশের মধ্যকার বক্তব্য কী, সে বিষয়গুলো তারা আমাদের কাছে এখনো পর্যন্ত উপস্থাপন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন, যেটা আমাদেরকে এখনো পর্যন্ত আশাবাদী হতে দেয় নাই।আমরা মনে করি যে, কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে যে আন্তরিকতার জায়গা থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রস্তুত করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেটাও যেন কোনোভাবেই জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো করে কোনো দলের চাপে পড়ে একটা কাগুজে দলিল হিসেবে জাতির কাছে বাস্তবায়ন পরিপন্থিভাবে উপস্থাপিত না হয়, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যমত কমিশনকে সর্বাধিক খেয়াল রাখার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের দলের তরফ থেকে ঐক্যমত কমিশনের আলোচনাতেই এবং বিভিন্ন সময় আমরা এ কথা বলেছি যে, সংস্কারের যে আলোচনা সেটা সমাপ্ত করে বিচারের রোডম্যাপ প্রকাশ করে তারপরে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে। সে হিসাবে এখনো সময় রয়েছে; সরকার চাইলে এই সময়ের মধ্যেই গণভোটের তারা প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু তারও আগে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—যে আদেশ জারি করা হবে, সে আদেশের কন্টেন্ট কী হবে, টেক্সট কী হবে, তার কার্যকারিতার জায়গাগুলো কী হবে- সেটা পরিষ্কার করা। যদি আদেশের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র গণভোট আমাদের সংস্কারের বাস্তবায়নকে সিকিউর করতে পারবে না। এই কারণে আমরা আদেশের বিষয়টাতে সরকারের তরফ থেকে পরিপূর্ণভাবে আশ্বস্ত হয়ে তারপরেই গণভোট এবং স্বাক্ষরের মত বিষয়গুলোতে আমরা অগ্রসর হতে চাই।
শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করতে চান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জোট হতে পারে।
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের প্রসঙ্গে বলেন, এই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি হলেই সনদে স্বাক্ষর করবে এনসিপি। একইসাথে, জুলাই সনদে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে ২০২৬ সালে সংশোধিত সংবিধান প্রনণয়ন করার দাবিও জানিয়েছে দলটি।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং আরপিওর সংশোধিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন থেকে সরে এলে লন্ডনের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়া বলে প্রতীয়মান হবে বলে জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করা হবে, সে আদেশের কনটেন্ট কি হবে? টেক্সট কি হবে তার কার্যকর্তার জায়গাগুলো কি হবে? সেটি পরিষ্কার করা দরকার। যদি আদেশের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র গণভোট আমাদের সংস্কারের বাস্তবায়নকে সিকিউর করতে পারবে না। এই কারণে আমরা আদেশের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণভাবে আশ্বস্ত হয়ে তারপরেই গণভোট এবং স্বাক্ষরের মতো বিষয়গুলোতে অগ্রসর হতে চাই।
আরপিও তে যে সংশোধনীর বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়েছে, এগুলোকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা খেয়াল করেছি যে আরপিও তে সংশোধনী আনার পরে বিএনপি তাদের আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে, সে আরপিও সংশোধনীকে তারা বাতিল করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে দরখাস্ত দেবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন।
আখতার বলেন, আইন উপদেষ্টার কাছে দরখাস্ত দিয়ে আরপিও সংশোধনীকে আটকে দেওয়ার যে মানসিকতার কথা বলা হচ্ছে, তাতে করে মনে হয় সরকার কোনো বিশেষ উপদেষ্টার মধ্য থেকে কারো কারো সঙ্গে কোনো কোনো দলের সম্পর্কের জায়গা থেকে সেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে তারা কোনো একটা বিষয়কে বাস্তবায়ন করতে চান। যেটাকে আমরা ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট মনে করি।
‘একই সঙ্গে এটাও মনে হয়, যদি কোনো দলের কারণে সরকার এই সংশোধনী প্রস্তাবনাগুলো থেকে সরে আসে তাহলে আমাদের কাছে আবারও প্রতীয়মান হবে যে, সরকার লন্ডনে যে বৈঠক করেছিল তার ধারাবাহিকতায় সেভাবেই তারা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর, এটা কোনোভাবেই জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া হতে পারে না,’ বলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার।
নির্বাচনী জোট প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় স্বার্থে ও দেশের প্রয়োজনে যদি জোটবদ্ধ নির্বাচন করার প্রয়োজন থাকে তাহলে তখন আমরা ভেবে দেখবো। এখনো কোনো দলের সাথে জোট যায়নি এনসিপি।
সংস্কার কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কে বলেন, নোট ডিসেন্টকে যদি বাস্তাবায়ন করতে হয় তাাহলে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিবে তার কোনো গুরুত্বই থাকবে না। ঐক্যমত্য কমিশন যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে সেই সিদ্ধান্তকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে, নোট অব ডিসেন্টকে বাস্তবায়ন করা প্রশ্নেই আসে না।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
অন্যদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















