Dhaka শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা সবাই মিলে যে কাজটা করলাম, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম, সেটা দিয়ে আমার বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে, আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। যে তরুণরা এই দিনটিকে সম্ভব করেছে, এই পরিবর্তনের জন্য যারা জীবন দিয়েছে, তারাই বাংলাদেশকে গড়বে।’

ঐক্যের সুর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ যে সনদ স্বাক্ষর করা হলো, এটা থেকে বহু দেশ শিখতে আসবে—এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে আপনাদের বলে রাখলাম। একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, এরকম বহু উদাহরণ আরও সৃষ্টি করতে পারবেন-সেই পথে যেন আমরা যাই। আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। এই সুর-যে সুর আমরা আজকে এখানে বাজালাম-সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ঐক্যের সুর, ঐক্যের সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজকে ঐক্যমতের মতো আমরা যেমন সনদ করলাম, নির্বাচনের ব্যাপারেও আপনারা রাজনৈতিক নেতারা বসে, বিভিন্ন দলের নেতারা বসে একটা সনদ করেন—কীভাবে নির্বাচন করবেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের দিনটি শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় এটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, ক্লাস রুমে আলোচনা হবে। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা হবে, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, তারা কি বললো, আমরা কি চাই। তারা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে সেটা সম্ভব কি না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। দেশকে তারা বহু উচ্চে নিয়ে গেছেন।

ড. ইউনূস বলেন,জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জুলাই সনদ প্রণয়ন ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাদের নাম ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে কীভাবে এটা তারা করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন, সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায়, যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কি না, সেটা চেষ্টা করে দেখবে—তাদের দেশে এটা সম্ভব কি না। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর মনে আশা ছিল যে, হয়তো দু-একটা বিষয়ে দলগুলোকে একমত করতে পারব। রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, কেউ কারও কথা শুনবে না। কাজেই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। উনি একজন গুণীজন। উনি বুঝে বুঝে যদি অগ্রসর হতে পারেন! অবাক কাণ্ড! সারা দেশ দেখল, সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু আলাপে বসল না, চমৎকার আলাপ করল। এত গভীরভাবে, এত গভীর জ্ঞানের সঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হলো, এত সৌহার্দ্যের সঙ্গে আলোচনা হলো—এটা না দেখলে আমাদের বিশ্বাস হতো না।

রাজনৈতিক নেতাদের ড. ইউনূস বলেন, আপনারা যাঁরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছেন, বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তাঁরা প্রত্যেকে দেখেছেন; কারণ, টেলিভিশনে এটা প্রচার হচ্ছিল ক্রমাগতভাবে। কীভাবে তাঁরা তাঁদের যাঁর যাঁর নীতিগুলো তুলে ধরছেন, বক্তব্যগুলো তুলে ধরছেন—সেটা সব মানুষ শুনতে পেয়েছে। শুনতে পেয়েছে শুধু নয়, তারা অংশগ্রহণ করেছে। মনে মনে অংশগ্রহণ করেছে। ঘরের মধ্যে তর্কবিতর্ক করেছে—কার কথা ঠিক, কার কথা উচিত, কোনটা মানলে ভালো হবে, কোনটা গ্রহণ করা উচিত হবে এবং সেটা নিজেদের মধ্যে লেখালেখি করেছে, তর্কবিতর্ক করেছে। সারা জাতিকে এটার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে। আপনারা শুধু সীমাবদ্ধ কামরাতে বসে আলাপ করেননি, আপনারা সারা জাতিকে এটার মধ্যে, আলোচনার মধ্যে শরিক করেছেন।

ড. ইউনূস বলেন, কেউ তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়ে গেছে—এমন ছিল না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, বেশি দূর বোধ হয় অগ্রসর হবে না। কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়ে বোধ হয় সমাপ্ত হবে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে যত জটিল বিষয় হোক না কেন, ঐকমত্যে এসেছে। আজকে আমরা একটা দীর্ঘ তালিকা নিয়ে এই সনদ প্রণয়ন করতে পারছি। আমরা রাজনৈতিক দলের সদস্যদের জন্য এবং আমাদের ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যবৃন্দের জন্য জোরে একটা হাততালি দিই—অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে যে, তারা কীভাবে এটা করেছিল।

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের এক নতুন জন্ম হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের কারণে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে তিনি এই সনদ স্বাক্ষরকে অভ্যুত্থানের ‘দ্বিতীয় অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং অভ্যুত্থান সফলের পেছনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

ড. মোহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, জাতি আজ এক নবজন্মের সন্ধিক্ষণে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের কারণে, বিশেষ করে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের কারণে। তিনি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটিকে সেই অভ্যুত্থানের “দ্বিতীয় অংশ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন রক্ত দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেন। একই সঙ্গে যারা আহত হয়েছেন বা কষ্টে আছেন, সেই বীর যোদ্ধাদের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আজকের এই দিনটি সম্ভব হয়েছে এবং সারা জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।

সংবিধান ও সরকার পরিচালনায় পরিবর্তন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে জাতি পুরনো ও অপ্রয়োজনীয় আলোচনা (পুরন পুরনো কথাবার্তা সব পেছনে ফেলে) বাদ দিয়ে নতুন বিষয়গুলোকে জাতীয় জীবনে নিয়ে এসেছে। এই পরিবর্তনের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের পরিবর্তন এবং সরকার পরিচালনার (সরকার চালানো বিষয়) সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়।

তিনি নিশ্চিত করেন, এই পরিবর্তনের ভেতরে অনেক নতুন বিষয় এসেছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খাগড়াছড়িতে বাস উল্টে প্রাণ গেল দুজনের

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৭:০১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা সবাই মিলে যে কাজটা করলাম, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম, সেটা দিয়ে আমার বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে, আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। যে তরুণরা এই দিনটিকে সম্ভব করেছে, এই পরিবর্তনের জন্য যারা জীবন দিয়েছে, তারাই বাংলাদেশকে গড়বে।’

ঐক্যের সুর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ যে সনদ স্বাক্ষর করা হলো, এটা থেকে বহু দেশ শিখতে আসবে—এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে আপনাদের বলে রাখলাম। একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, এরকম বহু উদাহরণ আরও সৃষ্টি করতে পারবেন-সেই পথে যেন আমরা যাই। আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। এই সুর-যে সুর আমরা আজকে এখানে বাজালাম-সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ঐক্যের সুর, ঐক্যের সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজকে ঐক্যমতের মতো আমরা যেমন সনদ করলাম, নির্বাচনের ব্যাপারেও আপনারা রাজনৈতিক নেতারা বসে, বিভিন্ন দলের নেতারা বসে একটা সনদ করেন—কীভাবে নির্বাচন করবেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের দিনটি শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় এটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, ক্লাস রুমে আলোচনা হবে। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা হবে, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, তারা কি বললো, আমরা কি চাই। তারা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে সেটা সম্ভব কি না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। দেশকে তারা বহু উচ্চে নিয়ে গেছেন।

ড. ইউনূস বলেন,জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জুলাই সনদ প্রণয়ন ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাদের নাম ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে কীভাবে এটা তারা করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন, সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায়, যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কি না, সেটা চেষ্টা করে দেখবে—তাদের দেশে এটা সম্ভব কি না। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর মনে আশা ছিল যে, হয়তো দু-একটা বিষয়ে দলগুলোকে একমত করতে পারব। রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, কেউ কারও কথা শুনবে না। কাজেই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। উনি একজন গুণীজন। উনি বুঝে বুঝে যদি অগ্রসর হতে পারেন! অবাক কাণ্ড! সারা দেশ দেখল, সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু আলাপে বসল না, চমৎকার আলাপ করল। এত গভীরভাবে, এত গভীর জ্ঞানের সঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হলো, এত সৌহার্দ্যের সঙ্গে আলোচনা হলো—এটা না দেখলে আমাদের বিশ্বাস হতো না।

রাজনৈতিক নেতাদের ড. ইউনূস বলেন, আপনারা যাঁরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছেন, বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তাঁরা প্রত্যেকে দেখেছেন; কারণ, টেলিভিশনে এটা প্রচার হচ্ছিল ক্রমাগতভাবে। কীভাবে তাঁরা তাঁদের যাঁর যাঁর নীতিগুলো তুলে ধরছেন, বক্তব্যগুলো তুলে ধরছেন—সেটা সব মানুষ শুনতে পেয়েছে। শুনতে পেয়েছে শুধু নয়, তারা অংশগ্রহণ করেছে। মনে মনে অংশগ্রহণ করেছে। ঘরের মধ্যে তর্কবিতর্ক করেছে—কার কথা ঠিক, কার কথা উচিত, কোনটা মানলে ভালো হবে, কোনটা গ্রহণ করা উচিত হবে এবং সেটা নিজেদের মধ্যে লেখালেখি করেছে, তর্কবিতর্ক করেছে। সারা জাতিকে এটার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে। আপনারা শুধু সীমাবদ্ধ কামরাতে বসে আলাপ করেননি, আপনারা সারা জাতিকে এটার মধ্যে, আলোচনার মধ্যে শরিক করেছেন।

ড. ইউনূস বলেন, কেউ তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়ে গেছে—এমন ছিল না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, বেশি দূর বোধ হয় অগ্রসর হবে না। কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়ে বোধ হয় সমাপ্ত হবে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে যত জটিল বিষয় হোক না কেন, ঐকমত্যে এসেছে। আজকে আমরা একটা দীর্ঘ তালিকা নিয়ে এই সনদ প্রণয়ন করতে পারছি। আমরা রাজনৈতিক দলের সদস্যদের জন্য এবং আমাদের ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যবৃন্দের জন্য জোরে একটা হাততালি দিই—অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে যে, তারা কীভাবে এটা করেছিল।

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের এক নতুন জন্ম হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের কারণে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে তিনি এই সনদ স্বাক্ষরকে অভ্যুত্থানের ‘দ্বিতীয় অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং অভ্যুত্থান সফলের পেছনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

ড. মোহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, জাতি আজ এক নবজন্মের সন্ধিক্ষণে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের কারণে, বিশেষ করে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের কারণে। তিনি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটিকে সেই অভ্যুত্থানের “দ্বিতীয় অংশ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন রক্ত দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেন। একই সঙ্গে যারা আহত হয়েছেন বা কষ্টে আছেন, সেই বীর যোদ্ধাদের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আজকের এই দিনটি সম্ভব হয়েছে এবং সারা জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।

সংবিধান ও সরকার পরিচালনায় পরিবর্তন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে জাতি পুরনো ও অপ্রয়োজনীয় আলোচনা (পুরন পুরনো কথাবার্তা সব পেছনে ফেলে) বাদ দিয়ে নতুন বিষয়গুলোকে জাতীয় জীবনে নিয়ে এসেছে। এই পরিবর্তনের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের পরিবর্তন এবং সরকার পরিচালনার (সরকার চালানো বিষয়) সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়।

তিনি নিশ্চিত করেন, এই পরিবর্তনের ভেতরে অনেক নতুন বিষয় এসেছে।