Dhaka বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই ঘোষণাপত্রে সরকার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেনি : নুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই ঘোষণাপত্রে সরকার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেনি বলে অভিযোগ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয় জাতির সামনে হাজির করলেন, সেটাতেও শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) পুরানা পল্টনের আলরাজি কমপ্লেক্সে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নুর বলেন, মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল। সেই দিনে আরেকটি নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের মাধ্যমে। এজন্য অবশ্যই সরকার এবং সরকারের প্রধানকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। কিন্তু আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই, এমন একটা অবস্থায় অর্ধেক সন্তুষ্টি আর অর্ধেক অসন্তুষ্টি নিয়ে সরকারকে আমাদের ধন্যবাদ জানাতে হচ্ছে। কারণ যেহেতু আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সবার সরকার, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে আমাদের সবার ব্যর্থতা।

তিনি বলেন, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে দেশ আরেকটা নতুন সংকটে পতিত হওয়া। সেই জায়গা থেকে আমরা সরকারকে ওন করেছি, ধারণ করেছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমরা সরকারকে যতটা ধারণ করেছি সরকার আমাদের ততটা ধারণ করেনি। সরকার শুধু ধারণ করেছে এনসিপিকে। যে কারণে সব কর্মকাণ্ডে দেখবেন এনসিপির একটা প্রাধান্য। সদ্য নতুন দল গঠিত দল। এমনকি এই যে ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হলো। ইতিহাস টেনে গালগপ্প অনেক করা যায়। কিন্তু যে কোনো একটা বিষয়ে আপনাকে টু দ্য পয়েন্টে আসতে হয়। সামারিতে আসতে হয়। প্রত্যেকটা জিনিসের একটা জিস্ট থাকে। এই গণঅভ্যুত্থানের জিস্ট ও গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রেক্ষাপট ছিল ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। যেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল আমাদের ছোট ভাই-বন্ধুদের, কিশোর বন্ধুদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।

নুর বলেন, কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, ১৩৩ জন শিশু মারা গেছে। শিশু কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল? কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ জনতা যারা জীবন দিয়েছিল, তারা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন? রাজনৈতিক দলগুলো তো ক্রেডিটবাজি করছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের বলতে চাই, কোন নেতার কয়জন ছেলে মেয়ে মারা গেছে, দেখেন কয়জন এমপির ছেলে, কয়জন মন্ত্রীর ছেলে, কয়জন বড় বড় নেতার ছেলে মেয়ে আত্মীয়-স্বজনরা মারা গেছে। এই দেশের আম জনতা সবসময় যারা জীবন দিয়েছে, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যারা সংগ্রাম করেছে, সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ মারা গেছে। তাদের লাশের উপর দিয়ে আজকে অনেকে নেতা হচ্ছেন, অনেকে এমপি হচ্ছেন, অনেকে পয়সা কামাচ্ছেন, অনেকে উপদেষ্টা হয়েছেন।

তিনি বলেন, আজকে অনেকে হিরো হয়ে গেছেন। ১০-১৫ দিনের আন্দোলনে হিরো হয়ে গেছেন। অন্যদের সব অবদানকে অস্বীকার করে আজকে সরকারের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, সরকারকে ব্যবহার করে, উপদেষ্টা পরিষদকে ব্যবহার করে কিংস পার্টি গঠন করা হয়েছে। আর সেই কিংস পার্টির কার্যকলাপ আপনারা দেখছেন যে, কিংস পার্টি আজকে তরুণ প্রজন্মকে বিপদগামী করছে। রাজনীতিকে কলুষিত করছে। যেই তরুণদেরকে নিয়ে মানুষ পরিচ্ছন্ন রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছিল, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। আজকে সেই তরুণরা চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, তদবির, লুটপাটে ব্যস্ত। এই ইতিহাস কারা রচনা করেছে? এগুলো কারা তৈরি করেছে? তাদের বিচারও এই দেশে আগামীতে হবে। এই দেশের মানুষের যে তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন ছিল, তরুণদের নিয়ে আশা ছিল, সেই আশা-আকাঙ্ক্ষায় যারা গুড়েবালি দিয়েছে, সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে যারা ধ্বংস করেছে, তাদের বিচার হবে। আজকে তরুণ হিসেবে আমরাও নিজেরা প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তোমাদের ভাই বন্ধু সহকর্মীরা এগুলো কি করছে? তাই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা আশকারা দিয়ে এগুলো করেছেন। আপনাদের দায় রয়েছে, সেই দায় মোচনের জন্য হলে অন্তত এই আন্দোলনের অন্যান্য অংশীজনদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করে এই ঘোষণাপত্রে তার সঠিক বিবৃতি জাতির সামনে প্রকাশ করবেন।

নুরুল হক নুর বলেন, আগামীতে যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে সেই জুলাই সনদে কীভাবে সবার আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করা যায়, অংশীদারদের ত্যাগের মূল্যায়ন কীভাবে করা যায়, তাদের ইতিহাসকে কীভাবে তুলে ধরা যায় এবং এই জুলাই সনদকে জাতির মুক্তির সনদে রূপান্তর করা যায়, আইনি ভিত্তি দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে আপনারা পদক্ষেপ নিন। আলাপ আলোচনা করুন এবং এই জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামীর নির্বাচন হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতির গলায় গামছা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোমরের রশি, এই ইতিহাস কিন্তু বাংলাদেশের ৫০ বছরে ছিল না, কিন্তু হয়েছে। কাজেই আগামীতেও যদি এভাবে ল্যাপস্যাপ দিয়ে জোড়াতালি দিয়া খালি একটি নির্বাচন করতে চান, যারা এই ধরনের নির্বাচন করতে চান, তাদের পরিণতিও কিন্তু এই যে খাইরুল হক কিংবা নুরুল হুদাদের মতো হবে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই।

নির্বাচন নিয়ে সবার একটা উদ্বেগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারপ্রধান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের বিষয়ে একটা সম্ভাব্য ভালো এবং উপযুক্ত সময়ের ঘোষণা করেছেন। এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। একইসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য যেই এলিমেন্টগুলো প্রয়োজন, যেই বিষয়গুলো প্রয়োজন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, সৎ দক্ষ পেশাদার অফিসারদের মাধ্যমে প্রশাসনের পুনর্গঠন এবং প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো সেই কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে।

এখন পর্যন্ত প্রশাসনের মধ্যে নিরপেক্ষ চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়নি অভিযোগ তুলে নুর বলেন, একদলকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দিচ্ছে, অনিবন্ধিত দল কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নিয়ে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে জেলা লেভেলে, উপজেলা লেভেলে, অন্য অনেক দলকে গণঅভ্যুত্থান অংশীজনদেরকে দাওয়াতও দেওয়া হয় না ডিসি অফিসে, ইউএন অফিসে, এসপি অফিসে। তাহলে এই প্রশাসন কীভাবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। সেজন্য আমরা বারবার বলছিলাম যে, আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচনের দাবিতে সবচেয়ে স্পষ্ট অবস্থান সর্বপ্রথম শুরু থেকে তুলেছে গণঅধিকার পরিষদ। কারণ আমরা বলেছিলাম যে, নির্বাচনের যদি একটা স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র দানা বাঁধবে। যেটা আমাদেরকে সংকটে ফেলবে। কাজেই সেই জায়গা থেকে আমরা এখনো বলছি যে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করেছেন, জানুয়ারিতেও যদি করেন আমাদের আপত্তি নেই। ডিসেম্বরেও যদি করেন আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচনের আগে উপযুক্ত পরিবেশ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সবার জন্য সেটি তৈরি করতে হবে।

‘আমাদের যে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা এই রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার, রাষ্ট্র পুনর্গঠন, নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে যেন কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি না হয়, স্বৈরাচার তৈরি না হয়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই এই জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচনের দিকে যেতে হবে, তার জন্য যেই সংস্কার প্রয়োজন, যেই যেই পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো নিতে হবে, বলেন নুর।

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নুর বলেন, আপনাদেরকেও আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না। আপনাদের অনেক প্রশংসা করেছি, আপনাদের পাশে ছিলাম। নির্বাচনের বাকি যে ছয় মাস আছে আপনাদের ছয় মাসের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে এখন থেকে আমাদের মুখোমুখি হওয়া লাগবে। কারণ আমরা আপনাদেরকে বসিয়েছি, আমাদের রক্তের উপর দিয়ে আমাদের আবেগকে পুঁজি করে আপনারা ওখানে উপদেষ্টা হয়েছেন। আমরা আপনাদেরকে সম্মান করে ওইভাবে এতদিন কিছু বলিনি। আপনারা গত এক বছরে যা করেছেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন। এখনো আপনাদের প্রতি আস্থাটুকু রাখতে চাই। আপনারা সেই আস্থাটুকু ধরে আমাদের এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে একটা নতুন দিকে নিয়ে যাবেন। সেই প্রত্যাশা রইল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের ফ্লাইট

জুলাই ঘোষণাপত্রে সরকার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেনি : নুর

প্রকাশের সময় : ০৪:২৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই ঘোষণাপত্রে সরকার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেনি বলে অভিযোগ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয় জাতির সামনে হাজির করলেন, সেটাতেও শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) পুরানা পল্টনের আলরাজি কমপ্লেক্সে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নুর বলেন, মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল। সেই দিনে আরেকটি নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের মাধ্যমে। এজন্য অবশ্যই সরকার এবং সরকারের প্রধানকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। কিন্তু আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই, এমন একটা অবস্থায় অর্ধেক সন্তুষ্টি আর অর্ধেক অসন্তুষ্টি নিয়ে সরকারকে আমাদের ধন্যবাদ জানাতে হচ্ছে। কারণ যেহেতু আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সবার সরকার, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে আমাদের সবার ব্যর্থতা।

তিনি বলেন, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে দেশ আরেকটা নতুন সংকটে পতিত হওয়া। সেই জায়গা থেকে আমরা সরকারকে ওন করেছি, ধারণ করেছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমরা সরকারকে যতটা ধারণ করেছি সরকার আমাদের ততটা ধারণ করেনি। সরকার শুধু ধারণ করেছে এনসিপিকে। যে কারণে সব কর্মকাণ্ডে দেখবেন এনসিপির একটা প্রাধান্য। সদ্য নতুন দল গঠিত দল। এমনকি এই যে ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হলো। ইতিহাস টেনে গালগপ্প অনেক করা যায়। কিন্তু যে কোনো একটা বিষয়ে আপনাকে টু দ্য পয়েন্টে আসতে হয়। সামারিতে আসতে হয়। প্রত্যেকটা জিনিসের একটা জিস্ট থাকে। এই গণঅভ্যুত্থানের জিস্ট ও গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রেক্ষাপট ছিল ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। যেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল আমাদের ছোট ভাই-বন্ধুদের, কিশোর বন্ধুদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।

নুর বলেন, কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, ১৩৩ জন শিশু মারা গেছে। শিশু কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল? কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ জনতা যারা জীবন দিয়েছিল, তারা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন? রাজনৈতিক দলগুলো তো ক্রেডিটবাজি করছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের বলতে চাই, কোন নেতার কয়জন ছেলে মেয়ে মারা গেছে, দেখেন কয়জন এমপির ছেলে, কয়জন মন্ত্রীর ছেলে, কয়জন বড় বড় নেতার ছেলে মেয়ে আত্মীয়-স্বজনরা মারা গেছে। এই দেশের আম জনতা সবসময় যারা জীবন দিয়েছে, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যারা সংগ্রাম করেছে, সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ মারা গেছে। তাদের লাশের উপর দিয়ে আজকে অনেকে নেতা হচ্ছেন, অনেকে এমপি হচ্ছেন, অনেকে পয়সা কামাচ্ছেন, অনেকে উপদেষ্টা হয়েছেন।

তিনি বলেন, আজকে অনেকে হিরো হয়ে গেছেন। ১০-১৫ দিনের আন্দোলনে হিরো হয়ে গেছেন। অন্যদের সব অবদানকে অস্বীকার করে আজকে সরকারের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, সরকারকে ব্যবহার করে, উপদেষ্টা পরিষদকে ব্যবহার করে কিংস পার্টি গঠন করা হয়েছে। আর সেই কিংস পার্টির কার্যকলাপ আপনারা দেখছেন যে, কিংস পার্টি আজকে তরুণ প্রজন্মকে বিপদগামী করছে। রাজনীতিকে কলুষিত করছে। যেই তরুণদেরকে নিয়ে মানুষ পরিচ্ছন্ন রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছিল, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। আজকে সেই তরুণরা চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, তদবির, লুটপাটে ব্যস্ত। এই ইতিহাস কারা রচনা করেছে? এগুলো কারা তৈরি করেছে? তাদের বিচারও এই দেশে আগামীতে হবে। এই দেশের মানুষের যে তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন ছিল, তরুণদের নিয়ে আশা ছিল, সেই আশা-আকাঙ্ক্ষায় যারা গুড়েবালি দিয়েছে, সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে যারা ধ্বংস করেছে, তাদের বিচার হবে। আজকে তরুণ হিসেবে আমরাও নিজেরা প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তোমাদের ভাই বন্ধু সহকর্মীরা এগুলো কি করছে? তাই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা আশকারা দিয়ে এগুলো করেছেন। আপনাদের দায় রয়েছে, সেই দায় মোচনের জন্য হলে অন্তত এই আন্দোলনের অন্যান্য অংশীজনদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করে এই ঘোষণাপত্রে তার সঠিক বিবৃতি জাতির সামনে প্রকাশ করবেন।

নুরুল হক নুর বলেন, আগামীতে যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে সেই জুলাই সনদে কীভাবে সবার আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করা যায়, অংশীদারদের ত্যাগের মূল্যায়ন কীভাবে করা যায়, তাদের ইতিহাসকে কীভাবে তুলে ধরা যায় এবং এই জুলাই সনদকে জাতির মুক্তির সনদে রূপান্তর করা যায়, আইনি ভিত্তি দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে আপনারা পদক্ষেপ নিন। আলাপ আলোচনা করুন এবং এই জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামীর নির্বাচন হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতির গলায় গামছা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোমরের রশি, এই ইতিহাস কিন্তু বাংলাদেশের ৫০ বছরে ছিল না, কিন্তু হয়েছে। কাজেই আগামীতেও যদি এভাবে ল্যাপস্যাপ দিয়ে জোড়াতালি দিয়া খালি একটি নির্বাচন করতে চান, যারা এই ধরনের নির্বাচন করতে চান, তাদের পরিণতিও কিন্তু এই যে খাইরুল হক কিংবা নুরুল হুদাদের মতো হবে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই।

নির্বাচন নিয়ে সবার একটা উদ্বেগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারপ্রধান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের বিষয়ে একটা সম্ভাব্য ভালো এবং উপযুক্ত সময়ের ঘোষণা করেছেন। এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। একইসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য যেই এলিমেন্টগুলো প্রয়োজন, যেই বিষয়গুলো প্রয়োজন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, সৎ দক্ষ পেশাদার অফিসারদের মাধ্যমে প্রশাসনের পুনর্গঠন এবং প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো সেই কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে।

এখন পর্যন্ত প্রশাসনের মধ্যে নিরপেক্ষ চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়নি অভিযোগ তুলে নুর বলেন, একদলকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দিচ্ছে, অনিবন্ধিত দল কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নিয়ে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে জেলা লেভেলে, উপজেলা লেভেলে, অন্য অনেক দলকে গণঅভ্যুত্থান অংশীজনদেরকে দাওয়াতও দেওয়া হয় না ডিসি অফিসে, ইউএন অফিসে, এসপি অফিসে। তাহলে এই প্রশাসন কীভাবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। সেজন্য আমরা বারবার বলছিলাম যে, আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচনের দাবিতে সবচেয়ে স্পষ্ট অবস্থান সর্বপ্রথম শুরু থেকে তুলেছে গণঅধিকার পরিষদ। কারণ আমরা বলেছিলাম যে, নির্বাচনের যদি একটা স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র দানা বাঁধবে। যেটা আমাদেরকে সংকটে ফেলবে। কাজেই সেই জায়গা থেকে আমরা এখনো বলছি যে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করেছেন, জানুয়ারিতেও যদি করেন আমাদের আপত্তি নেই। ডিসেম্বরেও যদি করেন আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচনের আগে উপযুক্ত পরিবেশ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সবার জন্য সেটি তৈরি করতে হবে।

‘আমাদের যে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা এই রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার, রাষ্ট্র পুনর্গঠন, নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে যেন কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি না হয়, স্বৈরাচার তৈরি না হয়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই এই জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচনের দিকে যেতে হবে, তার জন্য যেই সংস্কার প্রয়োজন, যেই যেই পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো নিতে হবে, বলেন নুর।

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নুর বলেন, আপনাদেরকেও আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না। আপনাদের অনেক প্রশংসা করেছি, আপনাদের পাশে ছিলাম। নির্বাচনের বাকি যে ছয় মাস আছে আপনাদের ছয় মাসের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে এখন থেকে আমাদের মুখোমুখি হওয়া লাগবে। কারণ আমরা আপনাদেরকে বসিয়েছি, আমাদের রক্তের উপর দিয়ে আমাদের আবেগকে পুঁজি করে আপনারা ওখানে উপদেষ্টা হয়েছেন। আমরা আপনাদেরকে সম্মান করে ওইভাবে এতদিন কিছু বলিনি। আপনারা গত এক বছরে যা করেছেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন। এখনো আপনাদের প্রতি আস্থাটুকু রাখতে চাই। আপনারা সেই আস্থাটুকু ধরে আমাদের এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে একটা নতুন দিকে নিয়ে যাবেন। সেই প্রত্যাশা রইল।