Dhaka বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাইয়ে আহত-নিহতদের তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে : ফারুক-ই-আজম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ইতিমধ্যে জুলাইয়ে আহত-নিহতদের তালিকায় কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও যারা সেসময় মারা গেছে, এরকম অনেক নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু, তাদের নাম জুলাই শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেগুলোকে অচিরেই আমরা গেজেট থেকে বাতিল করবো। একইভাবে আমরা আহতদের ব্যাপারেও চেষ্টা করছি।

বুধবার (৩০ জুলাই) জহুর হোসেন চৌধুরী হলে পেনিনসুলা ডেভেলপমেন্ট’র উদ্যোগে আয়োজিত মুগ্ধতার আলো সব শিশুর মাঝে ছড়িয়ে দিতে, ছোটদের মাসিক পত্রিকা মুগ্ধ জুলাই বিশেষ সংখার প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।

ফারুক-ই-আজম বলেন, জুলাইয়ের স্মৃতি যাতে অম্লান থাকে সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। জুলাই যোদ্ধাদের জন্য একটি অধ্যাদেশ করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিসেম্বরের শেষে এসে। সেই অধিদপ্তরটি গঠিত হবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে। জানুয়ারির প্রথম দিকে এরকম পরিপত্র জারি করেছে কেবিনেট সচিবালয় থেকে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই শহীদদের একটি তালিকা পেয়েছি, এবং রাত তিনটায় এটাকে গেজেট করা হয়েছে। এটা অনেক গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। একইভাবে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমরা জুলাই আহতদের তালিকা পেয়েছি। যেদিন আমরা তালিকা পেয়েছি ওইদিনই সেটিকে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত আছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে। আজকের ৫৪ বছর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো পরিপূর্ণ তালিকা হয়নি। শহীদদেরও কোনো তালিকা হয়নি। ২০০৫ সালে ৫৩৫ শহীদদের একটা তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এখানো পর্যন্ত ঐটাই হলো শহীদের সংখ্যা। জুলাই শহীদ এবং যোদ্ধাদের সাথে যাতে এরকম কিছু না হয়, সেজন্য সতর্কতার সাথে আমরা এটা সম্পন্ন করেছি। জুলাইয়ে আহত এবং নিহতদের দুই তালিকায় আমরা সক্রিয়ভাবে যাচাই-বাছাই করছি। এটা যাতে একেবারে পরিশুদ্ধ হয় সেজন্য আমরা মন্ত্রণালয় এবং সমগ্র দেশের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন থেকে আমরা যাচাই-বাছাই করে নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জুলাইেয় আহতদের মাসিক ভাতার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। একইভাবে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে। গুলো লিপিবদ্ধ ভাবে সরকারি প্রচেষ্টায় আমরা নিচ্ছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা আগে বাইর থেকে যেরকম বুঝতাম সচিবালয় কি জিনিস, মন্ত্রণালয় কি জিনিস। কিন্তু দায়িত্বে এসে মনে হচ্ছে এগুলোর অতিদ্রুত পরিবর্তন দরকার। এগুলোর কোনোটাই সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য করা হয়নি। এগুলো সংস্কার করতে পারলে মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

জুলাই আন্দোলনে শহীদ মীর মুগ্ধের পিতা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মুগ্ধ-স্নিগ্ধ বড় হবার পর তাকে কোন খরচ দিতে হয়নি বরং মুগ্ধই মাসে মাসে আমার পরিবারের খরচ চালাত। কারন তারা ফ্রিল্যান্সিং করে ভালোই আয় করত।

তিনি বলেন, ১৮ জুলাই ২০২৪ আমরা পরিবারের সবাই মিলে কথা বলতেছিলাম, তখন মুগ্ধ আমাকে বলে বাবা ছাত্রদের আন্দোন কি যৌক্তিক? আমি বললাম অবশ্যই। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় যদি আমার বয়স থাকতো তাহলে আমি যুদ্ধে যোগ দিতাম। আমার একথা শোনার পরই মুগ্ধ তার মাকে বলে আমিও ছাত্রদের নৈতিক আন্দোলনে যোগ দিব। এরপরই সে আন্দোলনে অংশ নেয়। জুলাই আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি ও বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে মুগ্ধ শহীদ হন। সে আমাদের দেশের সবাইকে একটি বার্তা দিয়ে গেছে, মানুষ মানুষের জন্য। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মাননার জন্য হাইকোর্টে রিটকারী ও এডিটর ইমেরিটাস এম এ এন শাহীন বলেন, যারা সরকারের দায়িত্বে আছেন তাদের বলবো, যাদের কারনে আমরা মুক্ত ভাবে কথা বলতে পারছি তাদের যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মাননা দেওয়া হয় সেই বিষয়ে কাজ করছি। ৭১ দেখেনি। কিন্তু পরবর্তীতে যারা এদেশের পতাকা আগলে রাখার কথা ছিলো তারাই দেশটাকে ধ্বংস করে গিয়েছে।

জুলাই আন্দোলেনে আহত শিক্ষার্থী কামরুল আহসান বলেন, শুধু জুলাই আন্দোলনের কারনে আজ আমরা স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারছি। বিগত ১৫ বছরের বেশি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কথা বলতে গেলেই গুম করা হতো, হত্যা করা হতো। আমরা কোন রাজনৈতিক দলের না। আমরা দেশের সম্পদ। দেশের স্বার্থে আমরা আন্দোলন করেছি। আবারও কোন সময় দরকার হলে আবারও মাঠে নেমে যাবো। বাংলাদেশ থেকে সকল রকমের দুর্নীতি অপকর্ম জন্য লড়াই করে যাবো।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নেত্রকোনায় বাঁশ-কাঠে জোড়াতালি দেওয়া সেতু যেন এখন মৃত্যুফাঁদ

জুলাইয়ে আহত-নিহতদের তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে : ফারুক-ই-আজম

প্রকাশের সময় : ০৮:২৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ইতিমধ্যে জুলাইয়ে আহত-নিহতদের তালিকায় কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও যারা সেসময় মারা গেছে, এরকম অনেক নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু, তাদের নাম জুলাই শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেগুলোকে অচিরেই আমরা গেজেট থেকে বাতিল করবো। একইভাবে আমরা আহতদের ব্যাপারেও চেষ্টা করছি।

বুধবার (৩০ জুলাই) জহুর হোসেন চৌধুরী হলে পেনিনসুলা ডেভেলপমেন্ট’র উদ্যোগে আয়োজিত মুগ্ধতার আলো সব শিশুর মাঝে ছড়িয়ে দিতে, ছোটদের মাসিক পত্রিকা মুগ্ধ জুলাই বিশেষ সংখার প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।

ফারুক-ই-আজম বলেন, জুলাইয়ের স্মৃতি যাতে অম্লান থাকে সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। জুলাই যোদ্ধাদের জন্য একটি অধ্যাদেশ করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিসেম্বরের শেষে এসে। সেই অধিদপ্তরটি গঠিত হবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে। জানুয়ারির প্রথম দিকে এরকম পরিপত্র জারি করেছে কেবিনেট সচিবালয় থেকে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই শহীদদের একটি তালিকা পেয়েছি, এবং রাত তিনটায় এটাকে গেজেট করা হয়েছে। এটা অনেক গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। একইভাবে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমরা জুলাই আহতদের তালিকা পেয়েছি। যেদিন আমরা তালিকা পেয়েছি ওইদিনই সেটিকে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত আছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে। আজকের ৫৪ বছর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো পরিপূর্ণ তালিকা হয়নি। শহীদদেরও কোনো তালিকা হয়নি। ২০০৫ সালে ৫৩৫ শহীদদের একটা তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এখানো পর্যন্ত ঐটাই হলো শহীদের সংখ্যা। জুলাই শহীদ এবং যোদ্ধাদের সাথে যাতে এরকম কিছু না হয়, সেজন্য সতর্কতার সাথে আমরা এটা সম্পন্ন করেছি। জুলাইয়ে আহত এবং নিহতদের দুই তালিকায় আমরা সক্রিয়ভাবে যাচাই-বাছাই করছি। এটা যাতে একেবারে পরিশুদ্ধ হয় সেজন্য আমরা মন্ত্রণালয় এবং সমগ্র দেশের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন থেকে আমরা যাচাই-বাছাই করে নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জুলাইেয় আহতদের মাসিক ভাতার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। একইভাবে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে। গুলো লিপিবদ্ধ ভাবে সরকারি প্রচেষ্টায় আমরা নিচ্ছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা আগে বাইর থেকে যেরকম বুঝতাম সচিবালয় কি জিনিস, মন্ত্রণালয় কি জিনিস। কিন্তু দায়িত্বে এসে মনে হচ্ছে এগুলোর অতিদ্রুত পরিবর্তন দরকার। এগুলোর কোনোটাই সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য করা হয়নি। এগুলো সংস্কার করতে পারলে মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

জুলাই আন্দোলনে শহীদ মীর মুগ্ধের পিতা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মুগ্ধ-স্নিগ্ধ বড় হবার পর তাকে কোন খরচ দিতে হয়নি বরং মুগ্ধই মাসে মাসে আমার পরিবারের খরচ চালাত। কারন তারা ফ্রিল্যান্সিং করে ভালোই আয় করত।

তিনি বলেন, ১৮ জুলাই ২০২৪ আমরা পরিবারের সবাই মিলে কথা বলতেছিলাম, তখন মুগ্ধ আমাকে বলে বাবা ছাত্রদের আন্দোন কি যৌক্তিক? আমি বললাম অবশ্যই। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় যদি আমার বয়স থাকতো তাহলে আমি যুদ্ধে যোগ দিতাম। আমার একথা শোনার পরই মুগ্ধ তার মাকে বলে আমিও ছাত্রদের নৈতিক আন্দোলনে যোগ দিব। এরপরই সে আন্দোলনে অংশ নেয়। জুলাই আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি ও বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে মুগ্ধ শহীদ হন। সে আমাদের দেশের সবাইকে একটি বার্তা দিয়ে গেছে, মানুষ মানুষের জন্য। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মাননার জন্য হাইকোর্টে রিটকারী ও এডিটর ইমেরিটাস এম এ এন শাহীন বলেন, যারা সরকারের দায়িত্বে আছেন তাদের বলবো, যাদের কারনে আমরা মুক্ত ভাবে কথা বলতে পারছি তাদের যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মাননা দেওয়া হয় সেই বিষয়ে কাজ করছি। ৭১ দেখেনি। কিন্তু পরবর্তীতে যারা এদেশের পতাকা আগলে রাখার কথা ছিলো তারাই দেশটাকে ধ্বংস করে গিয়েছে।

জুলাই আন্দোলেনে আহত শিক্ষার্থী কামরুল আহসান বলেন, শুধু জুলাই আন্দোলনের কারনে আজ আমরা স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারছি। বিগত ১৫ বছরের বেশি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কথা বলতে গেলেই গুম করা হতো, হত্যা করা হতো। আমরা কোন রাজনৈতিক দলের না। আমরা দেশের সম্পদ। দেশের স্বার্থে আমরা আন্দোলন করেছি। আবারও কোন সময় দরকার হলে আবারও মাঠে নেমে যাবো। বাংলাদেশ থেকে সকল রকমের দুর্নীতি অপকর্ম জন্য লড়াই করে যাবো।