নিজস্ব প্রতিবেদক :
অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মানুষ খুন করতে পছন্দ করতেন, মানুষ হত্যায় আনন্দ পেতেন।
শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) শিল্পকলা একাডেমিতে মায়ের কান্না আয়োজিত খুনি জিয়ার শাসন আমলে গুম খুনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে জিয়ার সাহস বেড়ে গিয়েছিল। এরপর জেল হত্যা, ১৯৭৭ সালের সামরিক আদালতে হত্যা করা হয়। তিনি একের পর এক হত্যা করতেন। জিয়ার রক্তমাখা হাত থেকে কাছের মানুষও রেহাই পায়নি। এমনকি তার বন্ধু কর্নেল তাহেরকেও হত্যা করেন তিনি। অথচ সেই তাহের জিয়াকে বাঁচিয়ে ছিলেন একদিন। তার ঠিক সাতদিনের মাথায় তাহেরকে হত্যা করেন।
নিরপরাধ মানুষকে মারার পর তাদের সন্তান-পরিবারদেরও কষ্ট দেওয়া হয় উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, অনেকেই বাবার, স্বামীর লাশ পান নাই। আপনাদের মতো আমি ৭১ সালে অসহায় ছিলাম। যুদ্ধ থেকে আমার বাবা ফিরে আসবেন কি না জানতাম না। পাক বাহিনীর ভয়ে দিন কাটাতে হতো। পাক বাহিনী এলেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে হতো।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেজর জিয়া এটা করতেন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। কারণ তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিলেন। তার পরিকল্পনা ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়া। যাতে তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়। আমি অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ জিয়ার কাছের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জিয়া ছিলেন ভয়ঙ্কর। একজন আসামি যিনি কর্নেল দিদার ছিলেন। তার মামলা আমার বাবা নিয়েছিলেন। দিদার সাহেব আমাদের বলেছিলেন যে, ‘জিয়া আমাকে দিয়ে অমুককে হত্যা করিয়েছেন। এখন তিনিই আর একজনকে দিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছেন।’ এভাবেই জিয়া ঘৃণ্য অপকর্ম করতেন। জিয়া বলতেন অমুককে মারো। অন্যদের আবার বলতেন তুমিও তাকে মেরে দাও। এভাবেই নাটক করা হতো।
মরণোত্তর বিচার হয় না জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ রকম বিচারে দোষীকে সাজা দেওয়া যায় না এবং তার আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোনো সুযোগ থাকে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, খুনিরা একটা জিনিস জানে না যে আল্লাহ সব অন্যায়ের বিচার করেন। সুতরাং এ (জিয়ার আমল) নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার আপনারা পাবেন।
তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠেছে মরণোত্তর বিচার হয় কি না? উত্তর হচ্ছে না। এ রকম বিচারে দোষীকে সাজা দেওয়া যায় না এবং তার আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু তাই বলে কি তাদের বিচার হবে না? হবে, এ যে মায়ের কান্না যে আন্দোলন শুরু করেছে, এর মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম খুনিদের ধিক্কার জানাবে, সেটাই হবে বড় বিচার। রিটে বলা হয়েছে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা, সেটাও দেওয়া হবে।
আনিসুল হক বলেন, জিয়ার শাসনামলে খুন হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের রিট দ্রুত সমাধান হবে। তার কারণ— আপনারা যার অভিভাবকত্বে আছেন, তিনিও একজন ভুক্তভোগী। তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে এ চেইন অব কিলিং শুরু করে জিয়াউর রহমান ও খুনি মোশতাক।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার কন্যা নাহিদ ইজাহার খান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেইন প্রমুখ।