বিনোদন ডেস্ক :
অস্বীকারের সুযোগ নেই, ঢালিউডে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় একক আধিপত্য ধরে রাখার কৃতিত্ব শাকিব খানের ঝুলিতে। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আজ ২৪ বছর পার করেছেন এই নায়ক। ১৯৯৯ সালে ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে পথচলা শুরু হয় তার। সেই পথচলা ধরে রেখেছেন এখনো। এই এসময়ে তাকে টেক্কা দেওয়ার মতো নায়ক আসেনি। তাই এখন পর্যন্ত তিনি এক ও অদ্বিতীয়।
প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি ইন্ডাস্ট্রি শাসন করছেন। এই সময়ে পুরনো-নতুন অনেক নায়কই কাজ করেছেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা কিংবা সাফল্যে তার ধারেকাছে যেতে পারেননি কেউই।
রোববার (২৮ মে) ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূরণ করেন শাকিব খান। এ দিন রাতে অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছেন কিং খান।
শাকিব বলেছেন, ঠিক দুই যুগ আগে আজকের দিনে শুরু হয়েছিল আমার রূপালি পর্দার যাত্রা। শ্রদ্ধেয় সোহানুর রহমান সোহান ভাইয়ের পরিচালনায়, এস পি প্রোডাকশনের প্রযোজনায় এসেছিল আমার চলচ্চিত্র ‘অনন্ত ভালোবাসা’। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেই ২৪ বছর আগে। তখনও জানতাম না পরের মূহূর্তে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে! জায়গাটা মোটেই সহজ ছিল না, পথটাও ছিল না মসৃণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রতিনিয়ত ভেঙে নতুন করে গড়তে হয়েছে। প্রতিকূল চারপাশকে সাজাতে হয়েছে আমার মতো করে। প্রতিদিনের নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা এবং কাজের প্রতি মমতা দিয়ে আমার দিন শুরু হয়েছে, শেষ হয়েছে নতুন আশা নিয়ে।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যাদের সাহায্য পেয়েছেন তাদের স্মরণ করতেও ভুললেন না শাকিব। বললেন, ‘লম্বা এই সময়ে চারপাশের অনেককিছু বদলেছে। হারিয়েছি অনেক গুণীজন, যাদের স্নেহ আর সাহস আমার যাত্রাপথে সাহস যুগিয়েছে। এখনেও অনেক অগ্রজরা আছেন যারা আমাকে বলেন, বড় গাছের ওপর ঝড়টা একটু বেশিই অনুভব হয়। তুমি হাল ছেড়ো না, শক্ত করে ধরে থাকো মাটি। পথে চলতে চলতে অনেক নতুনের সঙ্গেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছি। তাদের মধ্যে অনেকে আছে, অনেকে আবার নেইও এই রূপালি জগতে।”
এ ছাড়া ক্যামেরার পেছনের মানুষ, সহশিল্পী, প্রযোজক, কুশলী, গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শাকিব খান।
শাকিব স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, মূলত ভক্তদের ভালোবাসার জোরেই তিনি এতদিন টিকে আছেন। বারবার মনে হয়েছে, হাল ছেড়ে দেবেন। কিন্তু সেই ভক্তদের কথা ভেবেই ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার ভাষ্য, আসলে এই ২৪ বছরে যা সবচেয়ে অপরিবর্তিত থেকেছে, তা হলো আপনাদের (ভক্ত) ভালোবাসা। আমার দর্শক, ভক্ত, প্রিয় শাকিবিয়ানদের আমার প্রতি বিশ্বাস এবং অগাধ ভালোবাসা। দুই যুগে এই ভালোবাসাই ছিল আমার সকল কাজের উৎস। সব চড়াই উৎরাই পার করেছি, সকল কালো দিনগুলো আমার আলোয় ভরেছে শুধু আপনাদের ভালোবাসার কারণে। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে আর না, সব ছেড়ে দেই; ততবারই ভেবেছি আমার মানুষগুলো আমার একটি ভালো কাজের অপেক্ষায়। এবং আমি এই অপেক্ষার উপহার, এই ভালোবাসার প্রতিদান আজীবন দিয়ে যেতে চাই আমার কাজ দিয়ে। ২৪ বছর বা দুই যুগ নয়, যুগে যুগে আমি আপনাদের শাকিব খান হয়ে থাকতে চাই, আস্থায়, ভালোবাসায়।
তবে ক্যারিয়ারের শীর্ষে অবস্থান করা এই নায়ক বিগত ১০ বছরে বেশ সমালোচিতও হচ্ছেন। অপু-বুবলীর সঙ্গে প্রেম, বিয়ে ও ডিভোর্স, বারবার বয়কটের শিকার, মানহানি মামলা, সন্তান নিয়ে থানা-পুলিশ ইত্যাদি নিয়ে বেশ সমালোচিতও এ নায়ক। যদিও সেগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই শুধরে নিয়েছেন তিনি। তবে এতে ক্যারিয়ারের একটু হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি-না? এমন প্রশ্নে শাকিব বলেন, ‘এগিয়ে যাওয়া পিছিয়ে পড়া খেলারই অংশ। দুই যুগের ক্যারিয়ারে এত কিছু দেখেছি যে, এখন কোনোকিছুতে অবাক হই না। যতক্ষণ দর্শকের অন্তরে আছি আমাকে ঠেকায় সাধ্য কার? আমার শিকড় ইন্ডাস্ট্রি এবং দর্শকের অন্তরে গাঁথা আছে। ওটা কী রোখা যাবে?
দুই যুগ পেরিয়ে এখনও কাজে ডুবে রয়েছেন শাকিব। কক্সবাজারে চলছে তার নতুন ছবি ‘প্রিয়তমা’র শুটিং। সেখানেই ছবির টিম কেক কেটে উদযাপন করেছে তার দুই যুগ পূর্তির বিশেষ দিনটি। ছবিটি নির্মাণ করছেন হিমেল আশরাফ। মুক্তি পাবে আসন্ন ঈদুল আজহায়।
শুধু কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকলেন না শাকিব। এদিন ভক্তদের নতুন ছবির একটি পোস্টারও উপহার দিয়েছেন। যেখানে নায়কোচিত রূপে দেখা দিয়েছেন তিনি। এই ছবিতে শাকিবের নায়িকা কলকাতার ইধিকা পাল। ভার্সেটাইল মিডিয়ার ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করছেন আরশাদ আদনান।
শাকিব বর্তমানে ‘প্রিয়তমা’ ছবির শুটিং করছেন। ছবির পরিচালক হিমেল আশরাফ। কলকাতার নায়িকা ইধিকা পাল তার নায়িকা। আসছে কোরবানির ঈদে মুক্তি পাবে এই ছবি।
এ পর্যন্ত প্রায় ২৪৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান। সবশেষ গত রোজার ঈদে মুক্তি পায় ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’। শাকিব অভিনীত অন্যান্য সিনেমার মতো এ সিনেমাটিও পেয়েছে হিটের তকমা। প্রথম সিনেমা ‘অনন্ত ভালোবাসা’র মশাল থেকে সবশেষ মুক্তি পাওয়া ছবির নাফিস পর্যন্ত প্রতিটি চরিত্রেই নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করেছেন ঢাকাই সিনেমার এই তারকা। গড়েছেন একের পর এক সাফল্যের রেকর্ড।
এপার বাংলার পাশাপাশি ওপার বাংলায়ও নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন শাকিব। যৌথ প্রযোজনায় তার অভিনীত ‘শিকারি’, ‘নবাব’ দুই বাংলাতেই তুমুল সাড়া ফেলে।
শাকিবের ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট বলা যায় ২০০৭-০৮ সালকে। এই দুই বছরে তার অভিনীত ২৯টি সিনেমা মুক্তি পায়। এরমধ্যে ছিল ১৫ কোটি টাকা ব্যবসা করা ক্যারিয়ারে অন্যতম সুপারহিট সিনেমা ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। এরপর ২০০৯ সালে দুই ঈদে ৮টি সিনেমা মুক্তি পায় তার। যে রেকর্ড আজও ঢাকাই সিনেমায় বিরল!
অভিনয় ক্যারিয়ারে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এই নায়ক। এছাড়াও তার ঝুড়িতে রয়েছে অসংখ্য সাফল্য।