রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, জামায়াত-শিবিরের যদি গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশ ও জনগণকে রক্ষা করবে অথচ তারা জনগণের দিকে বন্দুক তাক করে আছে, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।
বুধবার (৩১ জুলাই) বিকেলে তিন দিনের সফরে রংপুরে এসে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ নিয়ে তিনি বলেন বলেন, জোর করে কিছু করলে তাদের যদি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক কাঠামো থাকে, তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড হবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ বপণ হতে পারে। সরকার এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কেন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করল, তাদের কি উদ্দেশ্য রয়েছে এসব প্রশ্ন আমাদের মনে। সেই সঙ্গে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে সরকার বড় ধরনের নির্যাতনে যাবে কি না এটি নিয়েও আমাদের সংশয় রয়েছে।
জি এম কাদের বলেন, গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে সরকার বর্তমানে জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে। এ সরকার স্বৈরাচারী সরকার, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকে দমন করতে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যেভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এতে পথচারী, সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন হারিয়েছে। বর্হিবিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে দেশের অর্থনীতিকে নিম্নমানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। আন্দোলনকারীর নামে মামলায় ঝুলিয়ে দিয়ে যুব ছাত্র সমাজের গলায় পাথর বেঁধে পঙ্গু করে দিচ্ছে সরকার। অবস্থার উত্তরণে সরকারকেই পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশ ও জনগণকে রক্ষা করবে অথচ তারা জনগণের দিকে বন্দুক তাক করে আছে—এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। হেলিকপ্টার থেকে, বহুতল ভবন থেকে তাদের নির্বিচারে গুলি বর্ষণে দেশের নিরীহ জনগণ, শিশু, গৃহিণী, পথচারী মারা গেছে।
জিএম কাদের বলেন, সরকার যাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ পায়নি। আমার প্রশ্ন হলো তাহলে কেন নির্বিচারে এমন গণহত্যা করা হলো। হেলিকপ্টার থেকে, বাড়ির ছাদ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিভাবে বুঝল কে সন্ত্রাসী, কে ভাল, কে শিশু।
তিনি বলেন, সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে আজ দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আবারও জনগণ মাঠে নামবে, মানুষ মারা যাবে। একসময় বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমি মনে করি, এ থেকে উত্তোরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে দমন করে ক্ষমতায় থাকা সভ্য সমাজের নীতি হতে পারে না। সবার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার বুকে সাহস নিয়ে রাজনীতি করা উচিত। জনগণকে বাধ্য করে তাদের ক্রীতদাস করা যাবে না।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী সরকার এ কথার সঙ্গে আমি একমত। বিশ্ব গণমাধ্যমও তাই লিখছে। দেশের এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে নাই, সংগ্রাম করে নাই। আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশে এক নায়কতন্ত্র ও চরমভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
নাশকতার দায় বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে চাপানো নিয়ে জিএম কাদের বলেন, সংঘর্ষের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত বলে বলে যতবার সরকার যেভাবে প্রচার করুক না কেন, আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণ সরকারের এ কথা গ্রহণ করেনি। এটি জনগণের সংগ্রাম। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির কেউ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে গিয়েছিল। আন্দোলন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এজেন্ডা দিয়েছিল সরকার এটিকেও প্রমাণ করতে পারেনি। মানুষও গ্রহণযোগভাবে এটিকে গ্রহণ করেনি।
চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় না। বরং সমস্যাকে উস্কে দেয়। যাদের কথায় মানুষের আস্থা রয়েছে, যাদের মানুষ বিশ্বাস করে সেই সব রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবীদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারকে খোলামেলাভাবে কথা বলতে হবে। সেইসঙ্গে ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোটা আন্দোলন নিয়ে জিএম কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনে নির্বিচারে যাদের গুলি করে হত্যাকারীদের নিরপেক্ষ তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া মানুষকে হয়রানি, মামলা মোকদ্দমায় ফেলা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হলো- একজনকে পঙ্গু করে দেওয়া। মামলা হলে আদালতে যাওয়া, জামিন নেওয়া, মামলা মোকাবেলা করাসহ নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে ছাত্ররা নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের নামে মামলা দেওয়ার ঘটনাটি ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আওয়ামী লীগও এক সময় বিএনপি দ্বারা এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, সরকারের ইন্ধনে কোটা ব্যবস্থাকে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারের জন্য এটি আদালতের মাধ্যমে পূর্নবহাল করা হয়েছিল। সাধারণ ছাত্রসহ জনগণ এর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আমি আমরা জীবদ্দশায় এত স্বতঃষ্ফূর্ত আন্দোলন দেখিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসিরসহ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।