নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেছেন, জামদানিকে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত করা হবে। সেজন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জামদানি মেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জামদানি শাড়ি দেশের একটি ঐতিহ্য। বাংলাদেশে আসা বিদেশি অতিথিরা এ শাড়ির প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। হাতে তৈরি জামদানি শাড়ি দেখে অবাক হন তারা। এটি তৈরি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য। বাহারি নকশার কারণে এটি অনন্য। এ শিল্প এবং এর কারিগরদের রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শিল্প সচিব বলেন, শুধু শাড়িই নয়, জামদানি একটি ঐতিহ্য। এর কোন তুলনা নেই। নিজের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এটি অতুলনীয়। বিদেশ থেকে যখন অতিথিরা বাংলাদেশে আসেন, তখন তারা জামদানির প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। তারা বিশ্বাসই করতে পারেন না যে, সম্পূর্ণভাবে হাতে এ রকম একটি শাড়ি তৈরি করা সম্ভব।
সিনিয়র সচিব বলেন, উন্নত বুনন কৌশল, বাহারি নকশা ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে জামদানি অতুলনীয়। তাছাড়া এটি অত্যন্ত আরামদায়ক। একসময় বাংলার মসলিন বিশ্ববিখ্যাত ছিল। এখন সময় এসেছে মসলিনের বিকল্প হিসেবে জামদানিকে সারাবিশ্বে সমাদৃত করার।
জামদানি শাড়ির বয়ন কেবল শ্রমসাধ্য নয়, এটিকে একটি সুক্ষ্ম কর্ম উল্লেখ করে শিল্প সচিব বলেন, ‘এটা একদিনে হয়নি। শত শত বছর ধরে দেশের সোনারগাঁও, ডেমরা, তারাবো, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ জামদানি শাড়ির জন্য বিখ্যাত। উন্নত বয়ন কৌশল, বাহারি নকশার কারণে জামদানি শাড়ি অনন্য। আমরা জামদানির ইন্টারন্যাশনাল জিআই পণ্য লাভ করেছি। এখন এর প্যাটেন্ট করতে হবে। তাহলে আমরা এর রয়্যালিটি পেতে থাকব।’
শিল্প সচিব বলেন, ‘এ ধরনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে জামদানি শিল্পকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একে পরিচিত করে তোলা যাবে। এ বছর হস্তশিল্পকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই এ বছর আমাদের হস্তশিল্প হিসেবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রতি আমাদের নজরদারি অনেক বাড়াতে হবে। এটা শুধু ’প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ হিসেবেই নয়, বরং রফতানি পণ্য হিসেবেও আমাদের এ খাতে নজর বাড়াতে হবে।’
আগামী ২৯ মে এসএমই মেলা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসএমই মেলাতেও জামদানিকে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে জামদানিকে তুলে ধরা হবে।
এ শিল্প ও এর শিল্পীদের ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য কী করা যায় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়ে শিল্প সচিব বলেন, এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাওয়া গেলে তা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হবে।
জামদানি শিল্পকে রক্ষা ও এর প্রসারে বাংলাদেশ বিসিকের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শিল্প সচিব বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য জামদানির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিসিক বহু আগে থেকেই কাজ করে আসছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে ১৯৯৩ সালে বিসিকের তত্ত্বাবধানে ২০ একর জমির ওপর জামদানি শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) জামদানির স্বীকৃতি সনদ ২০১৬ সালে প্রাপ্ত হয় বিসিক।
জাকিয়া সুলতানা আরও বলেন, নতুন যারা কারিগর তৈরি হচ্ছেন, তারা নকশা সম্পর্কে তেমন অবগত নন। তবে এ জন্য বিসিকের জামদানি নগরীতেই একটি জামদানি জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। যেখানে বিদেশিদের জন্য অবকাশ কেন্দ্র থাকবে। জামদানি শিল্পের মান ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশি প্রণোদনা দেয়া হবে।
জাকিয়া সুলতানা বলেন, বর্তমানে জামদানির বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। বিদেশিদের কাছেও এটি অত্যন্ত পছন্দনীয়। নবীন কারিগররা জামদানির নকশা বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞ নয়। সেজন্য গত ১১ মার্চ থেকে এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।
জাকিয়া সুলতানা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে জামদানিকে আরো গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত করতে হলে এ শিল্পে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। যেকোনো শিল্পে উৎপাদন খরচ না উঠলে সে শিল্প বিকশিত হতে পারে না। তিনি এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।