ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি :
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, বছরের শুরুতেই আমরা শিশুদের হাতে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই পৌঁছে দিয়েছি। পরিমার্জন এবং বাইরের একটি টেন্ডার বাতিল করার কারণে কয়েকটি ক্লাসে বই দিতে বিলম্ব হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকের ৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানো হচ্ছে, তা আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংও করছি। জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিতে (নেপ) ময়মনসিংহে দশম গ্রেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশে শুধুমাত্র বইয়ের উপর নির্ভর করলে অনেক সময় ফলাফল খারাপ হয়। সামগ্রিক বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়া দরকার। এ জন্য শিক্ষক অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা দরকার।
তিনি বলেন, শিশুদের পড়াশোনার মানবৃদ্ধির পাশাপাশি সেক্ষেত্রে খরচ কমাতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরুও হয়েছে, তখন আমরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তত্ত্বাবধান করতে পারব। তারাও সকল কিছু নিয়মের মধ্যে করতে বাধ্য থাকবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি বিধি-বিধান মেনেই চাকরি করেন। তারা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতি করতে পারবে না। কেউ যদি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এমন প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জনমত নিয়েই প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের পলিসি গঠন হবে। চরাঞ্চলের বাচ্চাদের জন্য স্কুল কীভাবে সুবিধা হয়, দুর্গম অঞ্চলের স্কুলের সুবিধা কী হবে, এটা স্থানীয়দের মতামত অনেকটাই জরুরি। শুধু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করলেই হবে না, শিক্ষাটা সমাজের কতটুকু উপকারে আসছে সেটা ভাবার বিষয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রাইমারি পর্যায়ে লাইব্রেরির অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য বাড়তি বই পড়া খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজনে বাইরে থেকে আমরা মালামাল ও সেবা, ক্রয় বা সরবরাহ করতে পারি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে, তার অনেক কারণ রয়েছে। এরমধ্যে কোভিড, পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়া, বছর শেষে যে পরীক্ষা হতো সেটি চলছিল না, এতে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এতে অনেক বাচ্চা প্রাইমারি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ করা যায় সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমরা পরীক্ষা পদ্ধতি আবার পরিবর্তন করেছি, তবে ঠিক আগের মতো যাচ্ছি না। দুই ধরনের বিষয় রাখা হচ্ছে – প্রথমত ক্লাসে মূল্যায়ন তারপর চার মাস পরপর মূল্যায়ন হবে। এতে আশা করি অভিভাবকদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – বাচ্চারা যেন পড়াশোনায় ভালো করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সকল কিছুতে পরিবর্তন আনা জরুরি।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) ময়মনসিংহের পরিচালক ফরিদ আহমেদ, উপপরিচালক সাদিয়া উম্মুল বানিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দশম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।