রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পুলিশ নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে। শতবর্ষের পুরনো পুলিশ বাহিনী অতীতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছে, আগামীতেও এক সঙ্গে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুধী সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষের জানমাল অনিরাপদ করার যেকোনো অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে। এজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশে বর্তমানে প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। লজিস্টিক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি রয়েছে।
তিনি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে জঙ্গিবাদের কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। জঙ্গিবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে লক্ষ্যে গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, র্যাব সম্প্রতি বান্দরবনে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। পুলিশের তৎপরতায় মৌলভীবাজারে জঙ্গিরা সংগঠিত হতে পারেনি। আমরা জঙ্গিদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে রয়েছি। জঙ্গিরা কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার আগেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছি।
আইজিপি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেক্টরকে যেভাবে উজ্জীবিত করেছেন, এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন কার্যক্রমের একটা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই রংপুর এলাকাতে আলু চাষ হয় বা বিভিন্ন সবজি চাষ হয়। এখানকার মানুষ যা চাষ করছে তার জন্য কোল্ডস্টোরেজ দরকার হয়, এটাও হবে। জিনিসপত্রের দাম, পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে অনেক কথাবার্তা আছে, তবে আমি মনে করি এসব হবে। এখন উৎপাদন বাড়ছে। আগে দক্ষিণবঙ্গের লোকেরা কাজের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় যেতো, এখন তাদের এলাকাতে বিভিন্ন বিদেশি ফল চাষাবাদ হচ্ছে। সুন্দরবনে পর্যটন বিকশিত হচ্ছে, রংপুরেও হচ্ছে। সবদিকে একটা উন্নয়নের জোয়ার বইছে।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা। টেকসই নিরাপত্তা থাকলে টেকসই শান্তি আসবে, টেকসই শান্তি থাকলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। আমরা এই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। আরও বহুদূর যেতে হবে। আমরা এগিয়েছি বলেই আমাদের মাথাপিছু আয় ৫০০ ডলার থেকে ৩ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পেরেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা আগামী দিনেও রংপুরসহ দেশবাসীর সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, কোনো এক সময় এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের হোলি খেলা শুরু হয়েছিল। সারা দেশের মাঝে একসঙ্গে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল। সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা চাকরি করতেন তাদেরকে বিভিন্ন বাহিনীকে ট্যাক্স দিতে হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেন। আমাদের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের লোকবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। দেশকে ডিজিটালাইজড করেছেন। আমরা এখন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সক্ষমতা অর্জন করেছি। দেশে আজকে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পুলিশপ্রধান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন এদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলার। আর এখন আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩০০০ ডলার, আমাদের উন্নতি হয়েছে। আমি যখন নীলফামারীতে ছিলাম ওই সময় একজন পুলিশ সুপার হিসেবে যে বেতন পেতাম, তা দিয়ে নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না। আগে একটা বিমান ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে সৈয়দপুরে আসত, তারপর আবার রাজশাহী হয়ে ঢাকায় ফিরত। আর এখন সৈয়দপুর থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ১৮টি ফ্লাইট চলাচল করছে। এর মানে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে।
আইজিপি বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রংপুরের মানুষ সব সময় সহায়তা করেছেন। রংপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমি নীলফামারীতে প্রায় সাড়ে তিন বছর পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এজন্য এই এলাকার মানুষের আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়ে গেছে এবং তাদের সম্পর্কে আমি জানি, আমার সম্পর্কেও তারা জানে। এখানকার মানুষ আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের প্রতি আন্তরিক। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রংপুরের মানুষ সব সময় সহায়তা করে আসছেন। রংপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সময় ভালো থাকে। যারা রংপুরের আবেগকে বুঝতে পারবে, সেরকম অফিসারদেরকে আমরা রংপুরে দিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, এই নগরীর প্রধান সমস্যা হলো মাদক, জুয়া ও যানজট। নিয়মিত কাজ করলে এগুলো সমস্যার উন্নতি হবে। মাদকের জন্য আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কার সঙ্গে মিশছে সেটা নজরে রাখতে হবে। অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো ও প্রত্যেক নাগরিককে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে, স্মার্ট পুলিশিং বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চান আইজিপি।
এর আগে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কম্যান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক, রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, রংপুর জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা: দেলোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু।
এ সময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি কেক কাটা হয়। এছাড়া রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি স্মরণিকা ‘মাদুলা’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুরভী উদ্যান প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।