নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে, আর আওয়ামী লীগ হবে বিরোধী দল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বনানীর জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই যে এবার আমার সরাসরি তাঁদের (আওয়ামী লীগের) সঙ্গে ভোট যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। নো জোট, নো মহাজোট। নো আসন বণ্টন, ডাইরেক্ট ফাইট। আমরা প্রথম থেকেই জোট বা মহাজোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নেই।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, নির্বাচনে গেলে আমরা ভালো করবো। তাই আমরা নির্বাচনে এসেছি। কেউ যদি আমাদের বিশ্বাস করে না, সেটা তাঁদের বিষয়। কেন বিশ্বাস করে না, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু আমরা সবাইকে বিশ্বাস করি।
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আমরা নির্বাচন করতে এসেছি। নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য, নাটক করার জন্য আসি নাই। নির্বাচন করব এবং নির্বাচন করে আগামীতে ক্ষমতায় যাব সেই স্বপ্নেও আমরা বিভোর। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যাবে সে রকম চিন্তাই আমাদের মধ্যে আছে। কাজেই নির্বাচন থেকে চলে যাব কেন?
জাপা মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচনে এসেছি নির্বাচন করার জন্য, না করার জন্য না। নির্বাচন করার শর্ত হিসেবে আমাদের একটাই দাবি, নির্বাচনের পরিবেশ এমন হতে হবে যেন ভোটারদের আস্থা আসে। আর কোনো দাবি আমাদের নাই।
তিনি বলেন, নির্বাচনের কৌশল হিসেবে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সিটসহ যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। না-ও হতে পারে। সিদ্ধান্ত হতে পারে, না-ও হতে পারে। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত রাতের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতাদের সাঙ্গে আমরা অনেকক্ষণ আলাপ করেছি, খোশ-গল্প করেছি। নির্বাচন কীভাবে, যাতে ভালোভাবে হয়। ভোটাররা কীভাবে আসবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হবে, প্রশাসনের কী ভূমিকা থাকবে, শৃঙ্খলা বাহিনীর কী ভূমিকা থাকবে, নির্বাচন কমিশনের কী ভূমিকা থাকবে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের কী ভূমিকা থাকবে এসব অনেক আলোচনা করেছি। কাজেই আমার মনে হয় না যে, উনারা যে বলছেন বিশ্বাস করেন না; বিশ্বাস না করলে কারও বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এত আলাপ করে খাওয়াইতেন না নিশ্চয়ই।
তিনি আরও বলেন, জোট-মহাজোটের বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে কোনো দরখাস্ত করি নাই। আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী যদি জোট-মহাজোট করতে হয়, তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত দিয়ে জানিয়ে দিতে হয়। আমরা জানাইনি কারণ আমরা প্রথম থেকেই জোট-মহাজোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নাই।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, গত রাতের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আমরা অনেকক্ষণ আলাপ করেছি, খোশ-গল্প করেছি। নির্বাচন কীভাবে, যাতে ভালোভাবে হয়। ভোটাররা কীভাবে আসবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হবে, প্রশাসনের কী ভূমিকা থাকবে, শৃঙ্খলা বাহিনীর কী ভূমিকা থাকবে, নির্বাচন কমিশনের কী ভূমিকা থাকবে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের কী ভূমিকা থাকবে—এসব অনেক আলোচনা করেছি।
জাপাকে বিশ্বাস না করলেও ভালো করে রাতে ভোজ দিয়েছেন উল্লেখ করে চুন্নু বলেন, নৈশভোজ আমাদের খেতে দিয়েছেন, আমরা খেয়েছি। পেট ভরে খেয়েছি। কাজেই আমার মনে হয় না যে, উনারা যে বলছেন বিশ্বাস করেন না; বিশ্বাস না করলে কারও বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এত আলাপ করে খাওয়াতেন না নিশ্চয়ই।
অবিশ্বাসের কথা লোক দেখানো না কি রাজনৈতিক বক্তব্য জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, অবিশ্বাসের কথা আমি বলিনি। যিনি বলছেন, তিনি তার উত্তর দিতে পারবেন। জাতীয় পার্টি সবাইকে বিশ্বাস করে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি কী প্রশ্ন করেছে এ প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, না, আমি কথাটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ তাদের সঙ্গে যখন কথা হয়েছে, তাদের ব্যবহারে আমি আপ্লুত। তাদের কথা-বার্তায় আমি খুশি যে, এ কথা আর জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করিনি।
জিএম কাদেরকে অনেক দিন ধরে সামনে দেখা যাচ্ছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, উনি তো এখনো আছেন পার্টি অফিসে। জিএম কাদের সাহেব মনে করেন আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে আমার খুব একটা ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে বলেছেন, তুমি উনাদের সঙ্গে কথা বলো। মান-অভিমান থাকবে কেন? আমরা তো নির্বাচনে যাচ্ছি, মান-অভিমান থাকলে কি নির্বাচনে যেতাম!
তিনি গণমাধ্যমের সামনে আসছেন না কেন, জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, আসবেন না কেন? আসার মতো কোনো প্রয়োজন তো উনি দেখছেন না। আমিই তো চালিয়ে যাচ্ছি উনার পক্ষে। উনি নিজে বলছেন, কথার সময় এখনো আসেনি। অবশ্যই কথা বলার সময় এলে উনি নিজে বলবেন।
রওশন এরশাদ দলের কেউ না বলে জানিয়েছেন তিনি বলেন, রওশন এরশাদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অলংকারিক পদ। তিনি দলীয় কোনো পদ ধারণ করেন না।
রওশন এরশাদের বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, উনি আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, দলীয় কোনো পদ হোল্ড করেন না। উনি দলের কেউ না। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আলংকারিক পদ। নির্বাহী কোনো ক্ষমতা তার নেই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদের সাক্ষাতে জাপার সঙ্গে জোট না করার আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনাকে (রওশন এরশাদ), উনার ছেলেকে এবং আরেকজনকে আপনাদের মাধ্যমে বারবার বলেছি। উনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। উনি নিজেই বলেছেন নির্বাচন করবেন এবং ফরম নেবেন। আমি বলেছি, আপনি নির্দেশ দিলে ফরম আমি আপনার বাসায় দিয়ে আসব। উনি বলেছেন লোক পাঠাবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। তারপর তিনি সংবাদ সম্মেলনে বললেন যে, নির্বাচনে যাবেন না। এখন দোষ কার আপনারা চিন্তা করবেন।
দলের ভেতরে কোনো বিভক্তি আছে কি না জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, আমি আবারও বলছি, দলে কোনো বিভক্তি নেই।
রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে এর কোনো অর্থ দাঁড়ায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এগুলো আমার দল কিছু মিন করে না। তিনি বিরোধীদলের নেতা, সেই হিসেবে সংসদ নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এরসঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।
দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো কি না, জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, সাংগঠনিকভাবে আমি কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। বিরোধীদলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমি বা জিএম কাদের যেটা বলি সেটা হলো জাতীয় পার্টির কথা। আমি জানি না, এক দলের কাছে আরেক দলের নালিশ চলে কি না। এটা রাজনৈতিক কোনো সংস্কৃতিতে পড়ে কি না, আমার নতুন করে স্টাডি করতে হবে।
রওশন এরশাদ বলেছেন, আপনারা যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তাতে তার কোনো সমর্থন নেই— এ ব্যাপারে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি বুঝি দলের কেউ যদি নেতৃত্বের বাইরে যায় তাহলে অনৈক্য। দলের কোনো নেতৃত্ব তো বাইরে যায়নি।