Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটে সড়ক সংস্কারের অভাবে ২৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জয়পুরহাট শহরের তাজুরমোড় থেকে কাশিয়াবাড়ী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়কে পিচঢালাই-খোয়া উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। এতে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সড়কের গর্তে গাড়ি পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। । এটি সংস্কারের অভাবে ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের তাজুর মোড় থেকে কাশিয়াবাড়ী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের পিচঢালাই উঠে গিয়ে খোয়া বের হয়ে রয়েছে। সড়কের অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে আছে। কাদাপানির ওপর দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই দুই কিলোমিটার সড়কটির জয়পুরহাট চিনিকলের। এ কারণে সরকারি কোনো সংস্থা সড়কটি সংস্কারে হাত দিতে পারছে না। আবার তহবিলে অর্থ না থাকায় সড়কটি সংস্কারের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আখলাছুর রহমান জানিয়েছেন।

জয়পুরহাট চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, চিনিকলের উত্তর এবং পশ্চিম পাশে প্রায় ২০০ বিঘা জমির নিজস্ব একটি কৃষি খামার আছে। এই খামারে আখসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন করা হয়। এই কৃষি খামারে উৎপাদিত শস্য সহজে পরিবহনের জন্য জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করে।

জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিনিকলের সড়কটি বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে তাজুর মোড় থেকে দক্ষিণে আধা কিলোমিটার সড়ক ভালো থাকলেও বাইপাস হিসেবে ব্যবহৃত অংশ খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

সড়কটির পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সড়কটি জয়পুরহাট চিনিকলের। এ কারণে সড়ক সংস্কারে সওজের কিছুই করার নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিনিকলের এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দর ও নওগাঁর রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জগামী মালবাহী ট্রাক, বাসসহ কয়েক শ যানবাহন চলাচল করে। এই সড়কটি মূলত বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রায় তিন বছর আগে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এরপরও চিনিকল আর সড়কটি সংস্কার করেনি। চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের মৌসুমের আগে চিনিকলের ছাই ও ভাঙা ইটের টুকরা দিয়ে সচল করা হয়েছিল। বর্ষা শুরুর পর সড়কটি আবার বেহাল হয়েছে। এতে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতি দিন ২০–২৫ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, গত ১৭ দিনে সড়কের অর্জুনতলী মোড়ে ১২টি যানবাহন উল্টে গেছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষকে সড়কটি সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। সড়কটি চিনিকলের মালিকানাধীন হওয়ায় জয়পুরহাট পৌরসভা, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, এলজিইডি—কেউ সংস্কার করতে পারছে না। তারা এই সড়কটি এলজিইডি অথবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছেন।

রিকশাচালক আবদুল আলিম বলেন, প্রায় তিন বছর আগে বাইপাস সড়কের পিচ উঠে যেতে শুরু করে। এর পর থেকেই সড়ক বেহাল হওয়া শুরু। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের খানাখন্দে পানি জমে। খানাখন্দেভরা সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে হালকা ও ভারী যানবাহন। প্রায়ই ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। গত শনিবার মালবোঝাই একটি ট্রাক দেবে গিয়ে সড়কের পাশে উল্টে গিয়েছিল।

দাদরাজন্তি গ্রামের ইজিবাইকচালক আরমান হোসেন জানান, এ সড়কের কিছু কিছু গর্তের গভীরতা প্রায় হাঁটুসমান। একটু বৃষ্টি হলেই ওই সব গর্তে পানি জমে। সেসব খানাখন্দে রিকশা, ভ্যান বা অন্যান্য যানবাহন পড়ে গেলে চাকা বা গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। এই সড়ক দিয়ে ইজিবাইক ভালোভাবে চালানো যায় না।

তাজুর মোড়ের চায়ের দোকানের মালিক আসলাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। অনেক স্থানে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর।

এ বিষয়ে সওজের জয়পুরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, সড়কটির পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সড়কটি জয়পুরহাট চিনিকলের। এ কারণে সড়ক সংস্কারে সওজের কিছুই করার নেই।

জয়পুরহাট চিনিকলের এমডি কৃষিবিদ আখলাছুর রহমান বলেন, ‘এই সড়ক দিয়েই বড় বড় যানবাহনও চলাচল করতে শুরু করে। ফলে এটি টেকসই না হয়ে খানাখন্দের সড়কে পরিণত হয়েছে। চিনিকল এমনিতেই আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ কারণে সড়কটি মেরামতের কোনো পরিকল্পনা নেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গুলিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের হেলপার নিহত

জয়পুরহাটে সড়ক সংস্কারের অভাবে ২৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ০৫:১৫:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জয়পুরহাট শহরের তাজুরমোড় থেকে কাশিয়াবাড়ী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়কে পিচঢালাই-খোয়া উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। এতে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সড়কের গর্তে গাড়ি পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। । এটি সংস্কারের অভাবে ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের তাজুর মোড় থেকে কাশিয়াবাড়ী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের পিচঢালাই উঠে গিয়ে খোয়া বের হয়ে রয়েছে। সড়কের অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে আছে। কাদাপানির ওপর দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই দুই কিলোমিটার সড়কটির জয়পুরহাট চিনিকলের। এ কারণে সরকারি কোনো সংস্থা সড়কটি সংস্কারে হাত দিতে পারছে না। আবার তহবিলে অর্থ না থাকায় সড়কটি সংস্কারের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আখলাছুর রহমান জানিয়েছেন।

জয়পুরহাট চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, চিনিকলের উত্তর এবং পশ্চিম পাশে প্রায় ২০০ বিঘা জমির নিজস্ব একটি কৃষি খামার আছে। এই খামারে আখসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন করা হয়। এই কৃষি খামারে উৎপাদিত শস্য সহজে পরিবহনের জন্য জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করে।

জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিনিকলের সড়কটি বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে তাজুর মোড় থেকে দক্ষিণে আধা কিলোমিটার সড়ক ভালো থাকলেও বাইপাস হিসেবে ব্যবহৃত অংশ খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

সড়কটির পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সড়কটি জয়পুরহাট চিনিকলের। এ কারণে সড়ক সংস্কারে সওজের কিছুই করার নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিনিকলের এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দর ও নওগাঁর রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জগামী মালবাহী ট্রাক, বাসসহ কয়েক শ যানবাহন চলাচল করে। এই সড়কটি মূলত বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রায় তিন বছর আগে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এরপরও চিনিকল আর সড়কটি সংস্কার করেনি। চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের মৌসুমের আগে চিনিকলের ছাই ও ভাঙা ইটের টুকরা দিয়ে সচল করা হয়েছিল। বর্ষা শুরুর পর সড়কটি আবার বেহাল হয়েছে। এতে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতি দিন ২০–২৫ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, গত ১৭ দিনে সড়কের অর্জুনতলী মোড়ে ১২টি যানবাহন উল্টে গেছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষকে সড়কটি সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। সড়কটি চিনিকলের মালিকানাধীন হওয়ায় জয়পুরহাট পৌরসভা, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, এলজিইডি—কেউ সংস্কার করতে পারছে না। তারা এই সড়কটি এলজিইডি অথবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছেন।

রিকশাচালক আবদুল আলিম বলেন, প্রায় তিন বছর আগে বাইপাস সড়কের পিচ উঠে যেতে শুরু করে। এর পর থেকেই সড়ক বেহাল হওয়া শুরু। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের খানাখন্দে পানি জমে। খানাখন্দেভরা সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে হালকা ও ভারী যানবাহন। প্রায়ই ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। গত শনিবার মালবোঝাই একটি ট্রাক দেবে গিয়ে সড়কের পাশে উল্টে গিয়েছিল।

দাদরাজন্তি গ্রামের ইজিবাইকচালক আরমান হোসেন জানান, এ সড়কের কিছু কিছু গর্তের গভীরতা প্রায় হাঁটুসমান। একটু বৃষ্টি হলেই ওই সব গর্তে পানি জমে। সেসব খানাখন্দে রিকশা, ভ্যান বা অন্যান্য যানবাহন পড়ে গেলে চাকা বা গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। এই সড়ক দিয়ে ইজিবাইক ভালোভাবে চালানো যায় না।

তাজুর মোড়ের চায়ের দোকানের মালিক আসলাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। অনেক স্থানে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর।

এ বিষয়ে সওজের জয়পুরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, সড়কটির পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সড়কটি জয়পুরহাট চিনিকলের। এ কারণে সড়ক সংস্কারে সওজের কিছুই করার নেই।

জয়পুরহাট চিনিকলের এমডি কৃষিবিদ আখলাছুর রহমান বলেন, ‘এই সড়ক দিয়েই বড় বড় যানবাহনও চলাচল করতে শুরু করে। ফলে এটি টেকসই না হয়ে খানাখন্দের সড়কে পরিণত হয়েছে। চিনিকল এমনিতেই আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ কারণে সড়কটি মেরামতের কোনো পরিকল্পনা নেই।