নিজস্ব প্রতিবেদক :
জনবহুল এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, আমি এখানে দেখতে এসেছি এ ধরনের কেমিক্যাল যেখানে রাখা হয়, এগুলো হচ্ছে বেআইনি জায়গা। আমি মনে করি প্রথম যে জিনিসটি করতে হবে, সরকারকে ইমিডিয়েট ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। যারা এটা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের স্ট্রং পলিসি থাকতে হবে, যেন জনবহুল এলাকায় এ ধরনের ক্ষেত্রগুলো না থাকে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর রূপনগর শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এর আগেও পুরান ঢাকায় এ রকম অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সে কারণে ওই জায়গা থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরানো হয়েছে। জরুরিভাবে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো উৎখাত করা দরকার। এজন্য পলিসি পরিবর্তন করা দরকার হলে সেটাই করতে হবে।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, যে মানুষগুলো মারা গেছেন তাদের বিষয়ে সরকার কাজ করছে। হাসপাতালের হেল্প ডেস্ক ও সমাজকর্মীরা এ বিষয়ে ফলোআপ করবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য নিয়ে বসবে। তাদের বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, নিখোঁজদের বিষয় ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। ইনভেস্টিগেশন করতে হলে এক্সপার্টদের সাহায্য লাগবে। এক্সপার্টদের বুদ্ধি নিয়ে কাজটি করতে হবে। এখানে পুলিশসহ অনেককে লাগবে। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে সবকিছু নিয়ে ফলোআপের দায়িত্ব আমার মন্ত্রণালয়ের। এবং আমি সেটি করব। আমার যেটা করণীয় আমি সেটা অতি দ্রুত করতে চাই।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) কাজী নজমুজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি, রাসায়নিকের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট নেই। আন্তর্জাতিক মানে যে ধরনের ইনস্ট্রুমেন্ট থাকার কথা ফায়ার সার্ভিসের সেটা নেই।
পরিচালক বলেন, কেমিক্যালের বিষয়টা কিন্তু খুবই বিপজ্জনক। খুবই ডিফিকাল্ট। স্টোরেজ যে নীতিমালা আছে সেই নীতিমালা অনুযায়ী যদি আপনারা সেখানে গুদামজাত না করেন, তাহলে বিভিন্ন কেমিক্যাল একসাথে হয়ে বড় ধরনের একটা বিস্ফোরণ হতে পারে। বড় ধরনের বিক্রিয়া হতে পারে। যার কারণে কেমিক্যাল অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে আপনার সময় লাগবেই। এটা স্বাভাবিক বিষয়।
তিনি বলেন, সকাল বেলা ফায়ার সার্ভিসের টিম সেফটি সুট পরে মেইন গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে। তারা ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। আমাদের অগ্নিনির্বাপণের কাজ চলমান। বাকি যারা প্রশাসন আছে, তারা কাজ করছে। এই মুহূর্তে কার্যক্রম আমাদের চলমান এবং সময় লাগবে। সেখানে যে কেমিক্যালটা আছে, অপারেশন করতে সময় লাগবে। আমাদের গ্রুপ থেকে এবং পরিচালক অপারেশন মেইন্টেন্যান্সের নেতৃত্বে একটা টিম আসবে। তিনটার পরে তারা দেখে একটা সিদ্ধান্ত নেবে কী করা যায়।
আগুন নেভাতে কত সময় লাগবে এবং কেমিক্যাল সরানো হচ্ছে না কেন, এই বিষয়ে জানতে চাইলে নজমুজ্জামান বলেন, সেখানে বিভিন্ন প্রকার মাল্টিপারপাস যে কেমিক্যাল আছে, সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সি গ্যাস তৈরি হচ্ছে। যেটা বাতাসের সাথে মিশে গেছে এবং গ্যাস তৈরি হচ্ছে। সেটাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে সমস্যা হতে পারে। ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে, হার্টের সমস্যা হতে পারে। যেটা নিজেরাই আপনারা উপলব্ধি করছেন। এজন্য অবশ্যই গণমানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বারবার মাইকিং করছি, জনগণকে বলছি এবং আপনাদের বলছি- নিজের জীবনকে আগে বাঁচান।
এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ, আপনারা কি কোনো তালিকা করেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, আমাদের অগ্নিনির্বাপণের কার্যক্রম চলমান। আমরা সেটা নিয়েই কাজ করছি। বাকি যারা প্রশাসন আছে, সে বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুরের রূপনগর শিয়ারবাড়ির শাহআলম কেমিক্যাল নামে একটি রাসায়নিকের গোডাউনে আগুন লাগার পর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি গার্মেন্টস কারখানায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌনে ১২টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত মোট ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। সর্বশেষ ১৬ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়।