Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নির্বাচন এসেছে, কেন ভয় পাব উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই।

সোমবার (১৫ মে) বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা পশ্চিমা গণতন্ত্র ফলো করি। ব্রিটেনে কীভাবে নির্বাচন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবে করব। আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, সংসদে যেসব সংসদ সদস্য আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে নির্বাচনকালীন তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি। এমনকি ২০১৪ সালেও খালেদা জিয়াকেও আমি এ আহ্বান করেছিলাম, তিনি আসেননি।

বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ্বালা-পোড়াওই করে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক, মানুষ ছাড়ুক কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ্বালা-পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না।

তিনি আরও বলেন, একেকটা পরিবার আজকে কি দুরবস্থায় আছে খোঁজ রাখেন? নিজের সন্তানকে কোলে নিতে পারে না। চেহারা নিয়ে কোথাও যেতে পারে না। কি বীভৎস অবস্থা সৃষ্টি করেছে বিএনপি-জামায়াত। ২০০৮ সালে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট পেয়েছে ২৯টি আসন। তারা আবার বড়-বড় কথা বলে। কার টাকায় আন্দোলন করছে, কোথায় থেকে টাকা পাচ্ছে তারা। বাংলাদেশর মানুষ কি অন্ধ হয়ে গেছে? হাজার-হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে।

আওয়ামী লীগের সময়ে দেশ কতটুকু এগিয়েছে- তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করলাম। ২০০৮ সালের বাংলাদেশ এবং ২০২৩ সালের বাংলাদেশ কোথায় গিয়েছে, এই হিসেবটা করলেই তো বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে, সে হিসেবটা তো সাধারণ মানুষ জানতে পারবে। যে অতিদরিদ্র ছিল ২৫ ভাগ, তা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি। তার মানে কি? আমাদের এখন অতিদরিদ্র বলতে তেমন কিছু নেই। আর যেটুকু আছে আমরা তাদেরকে ব্যবস্থা করে দেব, কোনো অসুবিধা হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে, ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। অনেক সুযোগও দিয়েছি, বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে, ফ্ল্যাট কেনার ভাতা, গাড়ি কেনার লোন ইত্যাদি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন কর, এটা কর, সেটা কর, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এ জন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতার দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

বেসরকারি খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত করোনা ভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটে বিপদে ফেলেছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ভর্তুকি দেয় না। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ায় কে বেশি লাভ পায়? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ হয়। গরীব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে লাভবান হচ্ছেন বিত্তশালীরা। সব জায়গায় জ্বালানি তেল, পরিবহন এত বেড়েছে। এটা টানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যে দামে উৎপাদন হবে সেই দামে কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবেন ততটুকু কিনবেন। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনার সময়, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বাজেট যে করতে পারছি এজন্য ধন্যবাদ জানাবেন। বাজেটের প্রস্তুতি ঠিকঠাক করে দিয়েছি। কোনো অনাথ এসে কী বলছে সেই দায়িত্ব তো আমরা নেব না। আইএমএফ লোন তাদেরকেই দেয় যাদের লোন পরিশোধ করার সক্ষমতা থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এতো অনাথ হয়নি। দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে বলেই আমরা নিয়েছি, এটা বাস্তব কথা।

স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি মোবাইল, টেলিফোন যা চালু করে দেওয়া হয়, এই সেক্টরে সেই সময়ে টেলিফোন ছিল এনালগ, সেগুলো ডিজিটাল করে দেই। কম্পিউটার শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে যে যুক্ত করা- সেই ব্যবস্থা নিয়েছি, স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। একটা দেশকে ডিজিটালাইজড করা অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার আর সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, আমরা তো সেটা ব্যাপকভাবে করে আসছি। স্কুলে স্কুলে এখন কম্পিউটার ডিজিটাল ল্যাব করে দিচ্ছি। আমরা বিভিন্ন জেলায় ইনক্রিমেশন সেন্টার করে দিচ্ছি, যেখানে ছেলেরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, আমরা ন্যানো টেকনোলজি ইন্সটিটিউট গড়ার জন্য ইতোমধ্যে আইন করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান চায় দক্ষ জনশক্তি। তারা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি ও শ্রমিক চায়। আরেকটা বিষয় হলো জাপানিজ ভাষা শিখতে হবে। আমাদের যারা জাপানে কাজ করতে চায় তাদের জাপানিজ ভাষা শিখতে হবে। শুধুমাত্র তারাই যেতে পারবে।

২০১৮ সালে জাপানরে সাথে চুক্তি হলে তখন মাত্র ১ হাজার ২০০ জন জনশক্তি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল। সে তুলনায় পাশের দেশ নেপাল বেশি সংখ্যক জনশক্তি পাঠিয়েছে। বিএমইটি যে স্কিলটেস্ট দেয় তাতে সেই অনুপাতে লোকজন পাচ্ছে না ফলে কম সংখ্যক লোকজন জাপানে যাচ্ছে। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানিজ ভাষা শেখার পাশাপাশি যিনি সেখানে যাবেন তাদের সেই কাজে দক্ষ হতে হবে। প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবেই কেউ জাপানে যেতে পারবে। ভাষা, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ জানা থাকলে যেতে কোন সমস্যা নাই।

তিনি আরও বলেন, যারা তাদের মতো (জাপানিদের মতো) করে নিজেদের প্রস্তুত করে না তাদের জন্যই আমাদের সমস্যা হয়ে যায়। এছাড়াও আর অন্য কোন সমস্যা নাই।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কোনো দেশের কাছ থেকে কিছু কেনা হবে না বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কিছু কিনব না, এত ভয়ের কী আছে। নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। কারও ওপর নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছি।

দেশের রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ডলার সংকট কেটে যাবে। দেশে বর্তমানে ৩১ দশমিক ২২ বিলিয়ন রিজার্ভ রয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল এক বিলিয়নেরও কম। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

সরকারপ্রধান জানান, কোনো দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সে হিসেবে আমাদের আরও বেশি রয়েছে। এজন্য রিজার্ভ কমে যাওয়াকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখছে না সরকার।

নদী দখল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের মধ্যে কে কে নদীখেকো আছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, নদীখেকো যদি বলতে হয়, তাহলে তো মিলিটারি ডিকটেটরদের কথা বলতে হবে। আইয়ুব খান থেকে শুরু করে বেগম জিয়া নদী-খালে হাউজিং করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এসে জলাধার রক্ষা করা হয়েছে। অনেক পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, সাঈদ খোকন যখন যখন মেয়র ছিল, তখন তাকে দিয়ে আমি অনেকগুলো পুকুর উদ্ধার করেছি। আমি ইতোমধ্যে অনেকগুলো নদী উদ্ধার করেছি, নদী ড্রেজিং করেছি। আমরা যখন এ কথা বলতাম, তখন একমাত্র মতিয়া চৌধুরী ছাড়া কারও সমর্থন পেতাম না। আমরা অনেক নদী উদ্ধার করেছি এবং করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কে কে নদীখেকো, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। নাম আছে? মতিঝিলে বিশাল ঝিল ছিল। জায়গাটা মতিঝিল, ঝিলের কোনো অস্তিত্বই নেই। হাতিরঝিলও ঝিল ছিল। সেটাকে রক্ষা করেছি।

অনেক বড়লোক নদী দখল করে আছেন। সেগুলো উদ্ধার করা কঠিন বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় তো হাত দেওয়াই মুশকিল।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দুর্বলতা ছিল। ঝড় আসছে খালেদা জিয়া জানেন না। তিনি ঘুমাচ্ছেন। এদিকে সব ভেসে শেষ। কিন্তু আমরা সবার আগে রিলিফ পৌঁছে দিয়েছি। বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যায়নি। তারপর পার্লামেন্টে যখন কথা তুললাম তখন খালেদা জিয়া বলেছিল যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই। দুর্বলতা সেখানে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো দুর্বলতা নেই। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুর্নবাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন। কাজেই আপনারা জানেন, আপনাদের প্রতি সব সময় আমার আলাদা এক সহানুভূতি আছে। আন্দোলন সংগ্রামে আপনারা আপনারা পাশে ছিলেন, আমরাও ছিলাম। তবে মালিকদের সঙ্গে কী করণীয় সেটা আপনারা করেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।

তিনি বলেন, যারা পত্রিকার মালিক তারা সবাই অর্থশালী ও বিত্তশালী। তাই সাংবাদিকদের ভাল-মন্দ দেখা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সংবাদপত্রের সব মালিকরা বড়লোক। তাদের ব্যবসা আছে। কিন্তু করোনার সময় প্রণোদনার সুযোগটা কিন্তু তারা নিয়েছেন। আপনাদের দাবিটা আপনাদের আদায় করতে হবে। এটা হলো কথা।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সংবাদকর্মী ও কলা-কুশলীদের সুযোগ সুবিধার জন্য বেসরকারি খাতে এতগুলা টেলিভিশন দিয়েছি। আগে মাত্র একটি টেলিভিশন ছিল। পত্রিকা যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে। পত্রিকা মালিক হচ্ছে সব বেসরকারি ব্যবসায়ী। সেখানে যারা কাজ করেন তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব কিন্তু তাদেরই। সরকারের বেশি কিছু করার সুযোগ আছে কি-না আমি জানি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুই বলি না, তারপরও শুনতে হয় কথা বলার স্বাধীনতা নাকি নেই। সারাদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিয়ে বলে, কথা নাকি বলতে পারে না। আমরা নাকি ভীষণভাবে টর্চার করি। আমরা আপনাদের সংবাদপত্রে কি করব, করলে পরে আবার এই কথা শুনতে হবে। সেখানে আপনাদের কিছু করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সরকার নাকি আবার কথা বলতে দেয় না। সংবাদপত্রের নাকি স্বাধীনতা নেই। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখেন, টকশো করতে করতে টক কথাও বলেন। তারপরও বলে, তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না, এটাই হলো বাস্তবতা।

সরকারপ্রধান বলেন, পত্রিকার মালিক যারা তারা সবাই অর্থশালী, বিত্তশালী। সাংবাদিকদের যারা কাজ দেয় ও ব্যবহার করে তাদের ভালো-মন্দ দেখা পত্রিকার মালিকদের কর্তব্য। আমাদের যতটুক করার আমরা করে যাচ্ছি। করোনার সময় সবাইকে আমরা সহযোগিতা দিয়েছি। নিশ্চয়ই সেটা আপনার স্বীকার করবেন। যে সমস্ত পত্রিকার মালিক আছে এটা তাদের দায়িত্ব। আমরা কি করতে পারি বলেন, আমরা করব।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত রয়েছেন।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১০:১৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নির্বাচন এসেছে, কেন ভয় পাব উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই।

সোমবার (১৫ মে) বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা পশ্চিমা গণতন্ত্র ফলো করি। ব্রিটেনে কীভাবে নির্বাচন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবে করব। আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, সংসদে যেসব সংসদ সদস্য আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে নির্বাচনকালীন তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি। এমনকি ২০১৪ সালেও খালেদা জিয়াকেও আমি এ আহ্বান করেছিলাম, তিনি আসেননি।

বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ্বালা-পোড়াওই করে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক, মানুষ ছাড়ুক কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ্বালা-পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না।

তিনি আরও বলেন, একেকটা পরিবার আজকে কি দুরবস্থায় আছে খোঁজ রাখেন? নিজের সন্তানকে কোলে নিতে পারে না। চেহারা নিয়ে কোথাও যেতে পারে না। কি বীভৎস অবস্থা সৃষ্টি করেছে বিএনপি-জামায়াত। ২০০৮ সালে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট পেয়েছে ২৯টি আসন। তারা আবার বড়-বড় কথা বলে। কার টাকায় আন্দোলন করছে, কোথায় থেকে টাকা পাচ্ছে তারা। বাংলাদেশর মানুষ কি অন্ধ হয়ে গেছে? হাজার-হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে।

আওয়ামী লীগের সময়ে দেশ কতটুকু এগিয়েছে- তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করলাম। ২০০৮ সালের বাংলাদেশ এবং ২০২৩ সালের বাংলাদেশ কোথায় গিয়েছে, এই হিসেবটা করলেই তো বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে, সে হিসেবটা তো সাধারণ মানুষ জানতে পারবে। যে অতিদরিদ্র ছিল ২৫ ভাগ, তা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি। তার মানে কি? আমাদের এখন অতিদরিদ্র বলতে তেমন কিছু নেই। আর যেটুকু আছে আমরা তাদেরকে ব্যবস্থা করে দেব, কোনো অসুবিধা হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে, ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। অনেক সুযোগও দিয়েছি, বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে, ফ্ল্যাট কেনার ভাতা, গাড়ি কেনার লোন ইত্যাদি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন কর, এটা কর, সেটা কর, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এ জন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতার দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

বেসরকারি খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত করোনা ভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটে বিপদে ফেলেছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ভর্তুকি দেয় না। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ায় কে বেশি লাভ পায়? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ হয়। গরীব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে লাভবান হচ্ছেন বিত্তশালীরা। সব জায়গায় জ্বালানি তেল, পরিবহন এত বেড়েছে। এটা টানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যে দামে উৎপাদন হবে সেই দামে কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবেন ততটুকু কিনবেন। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনার সময়, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বাজেট যে করতে পারছি এজন্য ধন্যবাদ জানাবেন। বাজেটের প্রস্তুতি ঠিকঠাক করে দিয়েছি। কোনো অনাথ এসে কী বলছে সেই দায়িত্ব তো আমরা নেব না। আইএমএফ লোন তাদেরকেই দেয় যাদের লোন পরিশোধ করার সক্ষমতা থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এতো অনাথ হয়নি। দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে বলেই আমরা নিয়েছি, এটা বাস্তব কথা।

স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি মোবাইল, টেলিফোন যা চালু করে দেওয়া হয়, এই সেক্টরে সেই সময়ে টেলিফোন ছিল এনালগ, সেগুলো ডিজিটাল করে দেই। কম্পিউটার শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে যে যুক্ত করা- সেই ব্যবস্থা নিয়েছি, স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। একটা দেশকে ডিজিটালাইজড করা অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার আর সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, আমরা তো সেটা ব্যাপকভাবে করে আসছি। স্কুলে স্কুলে এখন কম্পিউটার ডিজিটাল ল্যাব করে দিচ্ছি। আমরা বিভিন্ন জেলায় ইনক্রিমেশন সেন্টার করে দিচ্ছি, যেখানে ছেলেরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, আমরা ন্যানো টেকনোলজি ইন্সটিটিউট গড়ার জন্য ইতোমধ্যে আইন করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান চায় দক্ষ জনশক্তি। তারা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি ও শ্রমিক চায়। আরেকটা বিষয় হলো জাপানিজ ভাষা শিখতে হবে। আমাদের যারা জাপানে কাজ করতে চায় তাদের জাপানিজ ভাষা শিখতে হবে। শুধুমাত্র তারাই যেতে পারবে।

২০১৮ সালে জাপানরে সাথে চুক্তি হলে তখন মাত্র ১ হাজার ২০০ জন জনশক্তি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল। সে তুলনায় পাশের দেশ নেপাল বেশি সংখ্যক জনশক্তি পাঠিয়েছে। বিএমইটি যে স্কিলটেস্ট দেয় তাতে সেই অনুপাতে লোকজন পাচ্ছে না ফলে কম সংখ্যক লোকজন জাপানে যাচ্ছে। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানিজ ভাষা শেখার পাশাপাশি যিনি সেখানে যাবেন তাদের সেই কাজে দক্ষ হতে হবে। প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবেই কেউ জাপানে যেতে পারবে। ভাষা, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ জানা থাকলে যেতে কোন সমস্যা নাই।

তিনি আরও বলেন, যারা তাদের মতো (জাপানিদের মতো) করে নিজেদের প্রস্তুত করে না তাদের জন্যই আমাদের সমস্যা হয়ে যায়। এছাড়াও আর অন্য কোন সমস্যা নাই।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কোনো দেশের কাছ থেকে কিছু কেনা হবে না বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কিছু কিনব না, এত ভয়ের কী আছে। নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। কারও ওপর নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছি।

দেশের রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ডলার সংকট কেটে যাবে। দেশে বর্তমানে ৩১ দশমিক ২২ বিলিয়ন রিজার্ভ রয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল এক বিলিয়নেরও কম। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

সরকারপ্রধান জানান, কোনো দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সে হিসেবে আমাদের আরও বেশি রয়েছে। এজন্য রিজার্ভ কমে যাওয়াকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখছে না সরকার।

নদী দখল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের মধ্যে কে কে নদীখেকো আছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, নদীখেকো যদি বলতে হয়, তাহলে তো মিলিটারি ডিকটেটরদের কথা বলতে হবে। আইয়ুব খান থেকে শুরু করে বেগম জিয়া নদী-খালে হাউজিং করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এসে জলাধার রক্ষা করা হয়েছে। অনেক পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, সাঈদ খোকন যখন যখন মেয়র ছিল, তখন তাকে দিয়ে আমি অনেকগুলো পুকুর উদ্ধার করেছি। আমি ইতোমধ্যে অনেকগুলো নদী উদ্ধার করেছি, নদী ড্রেজিং করেছি। আমরা যখন এ কথা বলতাম, তখন একমাত্র মতিয়া চৌধুরী ছাড়া কারও সমর্থন পেতাম না। আমরা অনেক নদী উদ্ধার করেছি এবং করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কে কে নদীখেকো, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। নাম আছে? মতিঝিলে বিশাল ঝিল ছিল। জায়গাটা মতিঝিল, ঝিলের কোনো অস্তিত্বই নেই। হাতিরঝিলও ঝিল ছিল। সেটাকে রক্ষা করেছি।

অনেক বড়লোক নদী দখল করে আছেন। সেগুলো উদ্ধার করা কঠিন বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় তো হাত দেওয়াই মুশকিল।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দুর্বলতা ছিল। ঝড় আসছে খালেদা জিয়া জানেন না। তিনি ঘুমাচ্ছেন। এদিকে সব ভেসে শেষ। কিন্তু আমরা সবার আগে রিলিফ পৌঁছে দিয়েছি। বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যায়নি। তারপর পার্লামেন্টে যখন কথা তুললাম তখন খালেদা জিয়া বলেছিল যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই। দুর্বলতা সেখানে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো দুর্বলতা নেই। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুর্নবাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন। কাজেই আপনারা জানেন, আপনাদের প্রতি সব সময় আমার আলাদা এক সহানুভূতি আছে। আন্দোলন সংগ্রামে আপনারা আপনারা পাশে ছিলেন, আমরাও ছিলাম। তবে মালিকদের সঙ্গে কী করণীয় সেটা আপনারা করেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।

তিনি বলেন, যারা পত্রিকার মালিক তারা সবাই অর্থশালী ও বিত্তশালী। তাই সাংবাদিকদের ভাল-মন্দ দেখা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সংবাদপত্রের সব মালিকরা বড়লোক। তাদের ব্যবসা আছে। কিন্তু করোনার সময় প্রণোদনার সুযোগটা কিন্তু তারা নিয়েছেন। আপনাদের দাবিটা আপনাদের আদায় করতে হবে। এটা হলো কথা।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সংবাদকর্মী ও কলা-কুশলীদের সুযোগ সুবিধার জন্য বেসরকারি খাতে এতগুলা টেলিভিশন দিয়েছি। আগে মাত্র একটি টেলিভিশন ছিল। পত্রিকা যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে। পত্রিকা মালিক হচ্ছে সব বেসরকারি ব্যবসায়ী। সেখানে যারা কাজ করেন তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব কিন্তু তাদেরই। সরকারের বেশি কিছু করার সুযোগ আছে কি-না আমি জানি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুই বলি না, তারপরও শুনতে হয় কথা বলার স্বাধীনতা নাকি নেই। সারাদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিয়ে বলে, কথা নাকি বলতে পারে না। আমরা নাকি ভীষণভাবে টর্চার করি। আমরা আপনাদের সংবাদপত্রে কি করব, করলে পরে আবার এই কথা শুনতে হবে। সেখানে আপনাদের কিছু করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সরকার নাকি আবার কথা বলতে দেয় না। সংবাদপত্রের নাকি স্বাধীনতা নেই। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখেন, টকশো করতে করতে টক কথাও বলেন। তারপরও বলে, তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না, এটাই হলো বাস্তবতা।

সরকারপ্রধান বলেন, পত্রিকার মালিক যারা তারা সবাই অর্থশালী, বিত্তশালী। সাংবাদিকদের যারা কাজ দেয় ও ব্যবহার করে তাদের ভালো-মন্দ দেখা পত্রিকার মালিকদের কর্তব্য। আমাদের যতটুক করার আমরা করে যাচ্ছি। করোনার সময় সবাইকে আমরা সহযোগিতা দিয়েছি। নিশ্চয়ই সেটা আপনার স্বীকার করবেন। যে সমস্ত পত্রিকার মালিক আছে এটা তাদের দায়িত্ব। আমরা কি করতে পারি বলেন, আমরা করব।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত রয়েছেন।