নিজস্ব প্রতিবেদক :
জনগণ দেশের উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৬ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্য তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। দেশের নাগরিকরাই ভোটের মালিক। যদি উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা চাইলে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগই কাজ করেছে।
নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। দেশে গত সাড়ে ১৪ বছরে যা যা উন্নতি হয়েছে, সেসব সম্পর্কে দেশবাসীকে জানাতে হবে। আমাদের কোনো প্রভু নেই। জনগণই আমাদের প্রভু। জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ থেকেই কাজ করে যাবো। তাই দেশের নাগরিকরাই ভোটের মালিক।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন কীভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে; এটা আগে সম্ভব হয়নি কেন? সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশ পরিচালনা করায় মানুষের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। উচ্চ সুদের ঋণ বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারেনি। যতটুকু হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের সময়েই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দেখতে চাইলে নৌকার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে একটা চক্রান্ত শুরু হয়। সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিলেন। ৩-৪ শতাংশও ভোট পড়েনি। কিন্তু তিনি ভোট চুরি করে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশের মানুষ এই ভোটচুরি মেনে নেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ ভোট চুরি করলে মেনে নেয় না। কাজেই ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর ১২ জুন যেই নির্বাচন হয়, সেটিতে আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা বলেন, পচাত্তর পরবর্তী সময়ে আমাকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন ১২টি আর জরুরি সরকার দিয়েছিল ৬টি মামলা। আমি বলেছিলাম, প্রতিটি মামলার তদন্ত করে আমাকে জানাতে হবে। আমি দুর্নীতি করতে এখানে আসিনি। আমি মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য না। আমি ত্যাগ করতে এসেছি, ভোগ করতে না।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। মাথাপিছু আয় যেখানে খালেদা জিয়ার আমলে ৩৪৩ ডলারের মতো ছিল, আমরা সেটি দুই হাজার ৭৩৯ ডলারে উন্নীত করেছি। এই যেই ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন- এগুলো আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। আর কারও দ্বারা এগুলো হয়নি, কোনো সরকার এগুলো করেন।
এ সময় দেশের বিভিন্ন শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া এবং এরশাদ – সবাই খুনি। লুটেরা ও খুনিরা দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল করতে পারে না। বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে এদেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। যা বাংলাদেশে ‘ওয়ান ইলেভেন’ নামে পরিচিত। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ওয়ান-ইলেভেন প্রসঙ্গটি এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
সভায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগ হেরেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় এবং দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তের কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে এদেশের মানুষ – এ কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ করে আরও বলেন, আপনাদের পদচারণায় গণভবন প্রাঙ্গণ আজ ধন্য। অনেকদিন পর আপনাদের সঙ্গে কথা বলার একটা সুযোগ হলো। তবে দেশের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে তুলে ধরুন।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অফিসগুলোর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে ‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা শুরু হয়। এতে দলটির তৃণমূলের প্রায় তিন হাজার নেতা যোগ দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত আছেন।