নিজস্ব প্রতিবেদক :
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের জনগণ পুরোনা সেই রাজনীতি আর চায় না। এই রাজনীতির পরিবর্তন চাই, সংস্কার চায়, নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। নতুন বাংলাদেশ পুরাতন ফর্মুলায় আর চলবে না। নতুন বাংলাদেশ চলবে নতুন ফর্মুলায়। সেই ফর্মুলায় হলো, আগামীতে জনগণ আর কোনও দলের পক্ষপাতদুষ্ট সরকার দেখতে চায় না।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা ১৭ আসন আয়োজিত এক যুব-ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের ছাত্র-যুবসমাজ বলেছিল, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই, তারা বলেছিল, আমরা একটা দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ চাই। আমাদের ছাত্র-যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমরা একটা উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা চাই, শিক্ষা শেষে আমরা আমাদের হাতে কাজ চাই। এই কাজের মাধ্যমে দেশ গড়তে চাই। কিন্তু আমরা কী দেখতে পাচ্ছি– কেউ এ পরিবর্তনে খুশি নন। সম্ভবত কারণ– এই পরিবর্তনটা আমার বা তাদের নের্তৃত্বে হলো না কেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত হলে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। জাতিকে যারা বিভক্ত করে, তারা জাতির দুশমন। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, জনগণের সম্পদ চুরি ও দুর্নীতির মতো অভিজ্ঞতা তার দলের নেই।
জামায়াত আমির বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার পূর্বে যে নির্বাচন ইনশাল্লাহ অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের কর্মসূচি সমর্থন করে, যাদের বক্তব্যে আস্থা রাখে, তাদের বাছাই করে নেবে। আমরা তাদের অভিনন্দন জানানোর জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমাদের দলকে জনগণ বেছে নেয়, আমরা সকল রাজনৈতিক দল এবং শক্তিকে আহ্বান জানাবো। আপনারাও আমাদেরকে সমর্থন দেবেন, অভিনন্দন জানাবেন এবং আপনাদের সাথে নিয়েই আমরা দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, কেউ কেউ ইতোমধ্যে বলেছেন, তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল দলকে সাথে নিয়ে… যদি তারা নির্বাচিত হন… তাহলে সরকার গড়বেন ‘ইল্লাল্লা জামাতে ইসলামী’ (জামায়াতে ইসলামী ছাড়া)। আমরা তাদের বিনয়ের সাথে বলবো, জনগণ যদি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের নির্বাচিত করে ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদেরও বাদ দেবো না। সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। জাতিকে যারা বিভক্ত করে, তারা জাতির দুশমন।
জাতিকে বিভক্তকারী গোষ্ঠীকে ‘জাতির দুশমন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। আমরা ওই দুশমনের রাষ্ট্রের চাষ আর বাংলাদেশে হতে দেবো না।’ তিনি পুরোনো রাজনীতির সমালোচনা করে নতুন ফর্মুলায় দেশ গড়ার ঘোষণা দেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি আমাদের অভিজ্ঞতা নাই, জনগণের সম্পদ চুরি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। দলীয় কর্মীদেরকে দিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণ কায়েম করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। সর্বপর্যায়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দুর্নীতি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই।
তিনি বর্তমান ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নেয়নি; বরং এটি এখন বাংলাদেশে ‘ফেসি’ হিসেবে রয়ে গেছে। তিনি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারী এবং মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানির মতো ফ্যাসিবাদীদের পাঁচটি লক্ষণ চিহ্নিত করে বলেন এই সকল লক্ষণ আজকে বিদ্যমান।
জামায়াত আমির বলেন, পুরাতন ফর্মুলায় আর চলবে না ইনশাআল্লাহ। নতুন বাংলাদেশ চলবে নতুন ফর্মুলায়। জনগণের সরকার কেমন হবে তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, প্রত্যেক নিয়োজিত ব্যক্তি নিজের জন্য চিন্তা করার আগে জনগণের স্বার্থ নিয়ে ভাববে… যে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না…যে সরকার দুর্নীতিতে জড়াবে না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিপুল পরিমাণ রক্ত ও জীবন দিয়ে পরিবর্তন এলেও জনগণ স্বাধীনতার সত্যিকারের সুফল ভোগ করতে পারেনি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমাদের মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ, সমুদ্রের নিচে অকল্পনীয় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বের বুক মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারলাম না কেন?
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশ ছেড়ে পালায় নাই। দেশের ভিতরে আমরা মহাজির ছিলাম। দেশের মাটিকে কামড়ে ধরেছিলাম। বুকে জড়িয়ে এখানেই ছিলাম। জেল বরণ করেছি। জীবন দিয়েছি। কিন্তু দেশ ছেড়ে আমরা পালাইনি। কারণ আমরা এই দেশকে এই মাটিকে এই মানুষকে আমরা ভালোবাসি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে পালায়নি। ‘আমরা নির্যাতিত হয়েছি, জেলবরণ করেছি, জীবন দিয়েছি; কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাইনি,’ মন্তব্য তার।
সরকারি রাজনীতির পুরনো ফরমুলা দিয়ে নতুন বাংলাদেশ চলবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ বস্তাপচা ও দুর্গন্ধময় রাজনীতি আর চায় না। ‘কোনো দলের পক্ষপাতদুষ্ট সরকারও জনগণ চায় না, জনগণ জনগণের সরকার দেখতে চায়,’—বলেন তিনি।
জামায়াতের আমির দাবি করেন, ফ্যাসিবাদের একটি অংশ বিদায় নিলেও এর নানা লক্ষণ এখনো টিকে আছে। তার ভাষায়, ‘সব শ্রেণি–পেশার মানুষ খোলা বুকে গুলি আর আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ছাত্র–যুবকের আকাঙ্ক্ষা ছিল উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু কেউ কেউ এই পরিবর্তনে সন্তুষ্ট নয়।’
দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে, ক্ষমতায় গেলে দেশ চালাতে পারব না। হ্যাঁ, আমাদের অভিজ্ঞতা নেই—জনগণের সম্পদ চুরি করার অভিজ্ঞতা নেই, চাঁদাবাজির নেই, গণরুম ও টর্চার সেল বানানোর অভিজ্ঞতা নেই, দুর্নীতির অভিজ্ঞতা নেই।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে জামায়াতকে ধ্বংস করতে সরকার কিছুই বাদ রাখেনি, কিন্তু ‘জামায়াতের কেউ তাদের কাছে মাথা নত করেনি’।
ছাত্রশিবিরের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় শিবির নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে।
সরকারের ম্যান্ডেট হারানোর আশঙ্কায় ‘পুরনো সন্ত্রাসীরা নতুন রূপে ফিরে এসেছে’ দাবি করে ডা. শফিকুর বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনে নিষ্কলুষ প্রার্থী মনোনীত করেছি। জনসেবা যাদের পেশা এবং নেশা—জামায়াতের পতাকা আমরা তাদের হাতেই তুলে দিয়েছি।’
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















