নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার পতনের আন্দোলন চলছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের দুর্বার আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের পতন ঘটবে।
শনিবার (৫ আগস্ট) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি সাজার প্রতিবাদে এবং ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এবার দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে এই দেশে গণতন্ত্র নেই। তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, গত দুটি নির্বাচন চুরি, ডাকাতি হয়েছে, ভোট নিয়ে গেছে। এবার অবশ্যই জনগণের ভোটের নির্বাচন হতে হবে। এবার জনগণকে ভোট দিতে হবে। কিন্তু এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে সেটি হবে না। এখন থেকেই তারা (সরকার) নির্যাতন, গুলি করতে শুরু করেছে। এখন থেকেই রাতে বাড়িতে থাকতে দেয় না। কিন্তু এভাবে আটকানো যাবে না। বন্যার পানি যেমন আসতে থাকে, তেমনি মানুষ আসছে। এই দুর্বার মানুষের আন্দোলন তরঙ্গের পর তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদের (সরকার) চলে যেতে বাধ্য করা হবে।
তিনি বলেন, জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তাই বিচারকদের ন্যায়বিচার করতে। ২০১৪ ও ২০ ১৮ সালের মতো ক্ষমতাসীনরা আবারও একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। জনগণ যে নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে না, সে নির্বাচন হবে না।
বর্তমান সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন আর শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়া একই কথা। অতীতের মতো আর কোনো একতরফা নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বন্যার পানির মতো মানুষ আসবে। জোয়ারের পানির মতো জনগণের উত্তাল তরঙ্গের ঢেউ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।
তিনি বলেন, এবার অবশ্যই মানুষের ভোট দিতে হবে। সেজন্য সরকারের পতন ঘটাতেই হবে। এই যুদ্ধ বিএনপির নয় সকল মানুষের।
তারেক-জোবাইদার সাজার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ঠিক এই সময়ে এই রায়টি কেন? দেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে, তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত তাদের অধিকারের কথা বলতে শুরু করেছে, নদী, পাহাড়, পর্বত ডিঙিয়ে দাবি জানানোর জন্য আসছে, এই ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্রের শত্রু, অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মানুষ জেগে উঠেছে, সেই সময় এই রায় দিয়ে সরকার জনগণের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।
তারা (সরকার) বাংলাদেশর পক্ষে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে, ভোটের অধিকার পক্ষে কথা বলে সেই দলের নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দিতে চায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব পক্ষে যারা থাকবে তাদেরকে তারা (সরকার) নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। তারই ধারাবাহিকতায় এদেশের নেত্রীকে তারা গ্রেপ্তার করেছে, তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা-সাজা দিয়ে এই দেশপ্রেমিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকামী মানুষকে কোনো সাজা দিয়ে, মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে জখম করে, নিহত করে, গুম করে তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করা যাবে না। এটা আমাদের অন্তর্গত শক্তি।
ফখরুল বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি এটি স্বাধীন দেশের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আমরা পরবর্তীতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। আজকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াই করছি। একটিই লক্ষ্য আমাদের, আমরা এই জনগণের জন্য স্বাধীন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই। এখানেই তাদের (সরকার) আপত্তি। কারণ, তারা দেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যদি করতো তাহলে তারা দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করতো।
তিনি বলেন, তারা (সরকার) দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে পর পর দুটি হাস্যকর নির্বাচন করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আবারও এমন নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার পায়তারা শুরু করেছে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়, ডিসি, এসপির পরিবর্তন, পোস্টিং, প্রশাসনের হাজার হাজার মানুষের পদোন্নতি। যার অর্থ, আগের মতো প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে। কিন্তু এবার আর সেটা হবে না। আমরা এখন যে যুদ্ধে নেমেছি, যে সংগ্রামে নেমেছি, এটা বিএনপি, তারেক রহমান বা মির্জা ফখরুলের নয়, এই যুদ্ধ দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষা করার।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সঠিকভাবে দাাঢত্ব পালন করুন। দেশ ও জনগণের পক্ষে থাকুন। অন্যায় আদেশ মানবেন না। নিপীড়িত জনগণের পাশে থাকুন।
গুম, খুন, হয়রানি করে বাংলাদেশের মানুষের যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা স্তব্ধ করা যাবে না এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আমাদের অন্তরের শক্তি। এক সময় মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন গণতন্ত্রের জন্য, বাকস্বাধীনতা জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।
আওয়ামী লীগের হাতে কেউ নিরাপদ নয় এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক বছরে ৫৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সহস্রাধিক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুলি করা হচ্ছে, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। এর নামই কি গণতন্ত্র।
বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই পেশাজীবী সমাবেশে আর উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়রপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।