নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন। জনগণের ঐক্য আরও সংহত করেই এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আমরা সারাজীবন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছি। জনগণের ঐক্যের বিরুদ্ধে তারা সবসময় ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। ভালো কাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাস সবসময়ই থাকে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এসব মোকাবিলা করতে হবে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল-২০২৪ পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণের ঐক্যকে সংহত করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণকে নিয়েই আমাদের সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি পরিষদ সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে কামাল হোসেন বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের জাতীয় চেতনা, যা ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭২ এর সংবিধান এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা।
ড.কামাল হোসেন বলেন, একটা বছরে আমরা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অনেক কিছু অর্জন করলাম। সে আন্দোলনকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। যেনো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের ঐক্যকে আমরা সুসংহত করতে পারি। জনগণের ঐক্যকে সুসংহত করেই কিন্তু আমরা সব কিছু অর্জন করতে পারবো। এই জন্য ঐক্যেকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। বিভাজন যেখানে হয় সেখানে আমাদের শক্তি কমে যায়। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের যে নীল লক্ষ্যগুলোকে আমরা অর্জন করেছি সেইভাবে আমরা রাজপথের আন্দোলনকে আরও জোরদার করি।
তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংবিধান সংশোধন-কিংবা যুগোপযোগী করা রাষ্ট্রের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে তা আমাদের অগ্রসরমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্ত করবে। এ- ব্যাপারে আমাদের সকলের দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের বিরাজমান রুগ্ন রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিবিদ, আইনজীবি, পেশাজীবি, বুদ্ধিজীবি ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গণফোরামের জন্ম হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচনার কথা যারা বলছেন তারা কি বুঝে বলছে নাকি না বুঝে বলছে? বাহাত্তরের সংবিধান ৩০ লক্ষ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধান। সংবিধান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই ধরণের বক্তব্য দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র সংবিধান নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে তাদের এমন বিষয় থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান বিফলে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান। তিনি জানান, মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সভাপতি এবং ডা. মো. মিজানুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ২০ সদস্য বিশিষ্ট সভাপতি পরিষদ ও ১০ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র এডভোকেট এ কে এম জুগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম, কোষাধ্যক্ষ শাহ নূরুজ্জামান প্রমুখ।