নিজস্ব প্রতিবেদক :
যারা হাঁচি-কাশি হলেই বিদেশে ছুটে যান, তাদের জন্য নিজের দেশে চিকিৎসা নেওয়াই একটি প্রতিবাদ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনি সোনার বাংলা গড়তে চাইবেন, কিন্তু জনগণকে রেখে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন, সেটি সমর্থন করি না।
শুক্রবার (০৫ আগস্ট ) রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনের কাফরুল থানা দক্ষিণ আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রাজনীতিবিদরা দেশের নাগরিকদের জন্য কথা বলে। সেই নাগরিকদের দেশে ফেলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমার বাংলাদেশে চিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, যারা হাঁচি-কাশি দিলেই বিদেশে যায় সেটির প্রতিবাদ। আপনি সোনার বাংলা গড়তে চাইবেন কিন্তু জনগণকে রেখে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন, সেটি সমর্থন করি না।
জামায়াত শুধু দেশের নাগরিক এবং জনগণের জন্য রাজনীতি করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানবিক, দুর্নীতিমুক্ত ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে জামায়াতে ইসলামী। ক্ষমতায় গেলে দেশের বঞ্চিত মানুষের উন্নতি করাই হবে প্রধান লক্ষ্য।’
ক্ষমতায় গেলে জামায়াতের কোনো সংসদ সদস্য অতিরিক্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে না বলেও দাবি করেন জামায়াতের আমির। একইসঙ্গে ভয় ও শঙ্কামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে জনগণকে পাশে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, দীর্ঘ একমাসের বেশি সময় পর মিডিয়ার সামনে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এজন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করছি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তৌফিক না দিলে আমি আজ এখানে এসে কথা বলতে পারতাম না। এই সময়টা আমার মনে হয়েছে জাতিকে কিছু বলার দায়িত্ব আমার। আমার দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করার আর সুযোগ নেই। তাই আমি আল্লাহর দরবারে তৌফিক কামনা করেছিলাম—যেন অন্তত সেই কথাগুলো বলতে পারি, যা মানুষের কল্যাণের জন্য জরুরি। আল্লাহ সেই সুযোগ দিয়েছেন।
নিজের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাবেশের দিন আমি যখন পড়ে যাই, তখন দেশের মানুষ টিভি স্ক্রিন কিংবা হাতে মোবাইলের মাধ্যমে তা দেখছিলেন। তাদের মধ্যে ইউনাইটেড হসপিটালের খ্যাতিমান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মমিনুজ্জামানও ছিলেন। তিনি তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমার সমস্যাটা মস্তিষ্কজনিত নয়, বরং হৃদযন্ত্রে হতে পারে। পরবর্তীতে তার আহ্বানে আমি চিকিৎসা নিই।
ডা. শফিকুর রহমান জানান, তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ২২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়। তারা হৃদযন্ত্রে ব্লক শনাক্ত করেন এবং ঝুঁকি বিবেচনায় তাকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শফিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসকরা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক কিংবা আমেরিকার মতো দেশের নাম বলেছিলেন। আমি তাদের আন্তরিক পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে আমি জিজ্ঞেস করলাম- আল্লাহ কি কেবল সেই দেশগুলোতেই আছেন?
চিকিৎসকরা বললেন, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আমি তখন বললাম, আল্লাহ যদি সেখানে সুস্থ করতে পারেন, তাহলে তিনি চাইলে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশেও আমাকে সুস্থ করতে পারেন।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, সুস্থতা-অসুস্থতা কার হাতে- এক বাক্যে সবাই স্বীকার করেছেন, আল্লাহর হাতে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহই আমাকে আবার জনসম্মুখে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছেন।
দীর্ঘ ৪৬ দিন পর আবার জনসম্মুখে ফিরে আসায় তার সুস্থতা নিয়ে দলের ভেতরে স্বস্তি ফিরেছে। জামায়াত নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জনসম্মুখে দেখতে পাওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন ডা. শফিকুর রহমান। ২৯ জুলাই রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করালে চিকিৎসকরা তার হার্টের তিনটি প্রধান রক্তনালিতে ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান। এরপর ২ আগস্ট দেশের একটি হাসপাতালে জামায়াত আমিরের বাইপাস সার্জারি হয়। এক মাসেরও বেশি সময় পর রাজনীতির মাঠে ফিরলেন জামায়াতে আমির।