নিজস্ব প্রতিবেদক :
এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিরা হয়ত ততটা সংগঠিত নয়। তবে তারা বসে নেই। জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়াবহ রকম সক্রিয় রয়েছে। তারা নিয়মিত অনলাইনে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করছে।
সোমবার (১৯ জুন) সকালে রাজধানীর মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের মাল্টিপারপাস হলে ‘উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদ ও সহিংসতা চরমপন্থা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।
তিনি বলেন, অনলাইন মনিটরিং করে বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা আরও ভয়াবহ। জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে তৃপ্তি পাওয়ার কিছু নেই। তারা অনলাইনে ভয়াবহভাবে সক্রিয় আছে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গিরা নতুন কর্মী সংগ্রহ, সমর্থক সংগ্রহে ভয়াবহভাবে সক্রিয় রয়েছে। এটিউইয়ের অনলাইন পেট্রোলিংয়ে আমরা অহরহ এসব দেখছি।
এখন পর্যন্ত এটিইউ দেড়শতাধিক অভিযান পরিচালনা করে ২৫০-এর বেশি জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিদের কাছ থেকে যে তথ্য আসছে, যা ভয়ঙ্কর।
তিনি বলেন, অনলাইনে জঙ্গিদের কার্যক্রম, কীভাবে একজন তরুণ জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে তার বিপদ, ভয়াবহতা না বুঝেই জনসাধারণকে সচেতন করার সুযোগ গণমাধ্যমকর্মীদের আছে।
এটিইউ প্রধান বলেন, একজন তরুণ বিপদ না বুঝে যেভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, এর বিপদ ভয়াবহ। এসব নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার সুযোগ আছে গণমাধ্যমের। বাংলাদেশে প্রথম পর্যায়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া সদস্যরা আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে যুদ্ধ করে দেশে ফিরে সেই মতাদর্শ ছড়িয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে দুটি ঘটনা ঘটে একটা আমরা দেই, আরেকটা আপনারা সরেজমিনে করেন। এরকম একটি কাজ ছিল হোলি আর্টিজানে হামলার সময়। গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের কারণে জঙ্গিরা ভেতর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান জেনে গিয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
এটিইউ প্রধান বলেন, সাংবাদিক সম্পর্কে নানা সময় জটিল ধারণ করে পুলিশ। তবে বর্তমানে তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ৭ ধারায় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার স্বার্থে তথ্য দিয়ে থাকি। দেশপ্রেমের জায়গা থেকে আমরা যদি সবাই কাজ করি তাহলে সমাজের জন্য ক্ষতিকর কিছু ঘটবে না। গণমাধ্যম যদি এসব মাথায় রাখে সংবাদ পরিবেশনের সময় তবে সমস্যা হওয়ার কথা না। সংবাদের অবাধ প্রবাহের সময় কোনও সংগঠনের সুযোগ নেই গণমাধ্যমকে সহায়তা ছাড়া ইমেজ রক্ষা করা।
তিনি বলেন, পুলিশ-সাংবাদিক সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ কি চায়? গণমাধ্যম ছাড়া পুলিশের কাজের সুযোগ নেই। পুলিশ চায় পজিটিভ কাজগুলো গণমাধ্যমে উঠে আসুক। পুলিশের নতুন ধারণা নিয়ে আমরা কর্মশালা করি। যাতে করে পুলিশের ইমেজ জনগণের সামনে সহায়ক হয়। আমরা জনসাধারণের নিরাপত্তা, সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করি। এই জায়গায় গণমাধ্যম ও পুলিশের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নাই। অপরাধ কমুক, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক সেটা সবার কাম্য।
এটিইউ’র ডিআইজি (অপারেশন্স) মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অনেক বেশি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে। যেটা আড়ালে থাকার সেটা আড়ালেই রেখেছেন। আসলে রাষ্ট্রযন্ত্রের একার পক্ষে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয়। এখানে দরকার কোর্ডিনেশন, জনগণের অংশগ্রহণ, গণমাধ্যমের নিরবচ্ছিন্ন সহায়ক ভূমিকা। আমাদের ডেটা সিস্টেমটা অনেক বেশি আপডেট থাকা দরকার। কারণ উগ্রবাদে যারা জড়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা কঠিন।
এটিইউয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ওয়াহিদা পারভীনের সঞ্চলণায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শবনাম আজিম।
এতে এটিইউয়ের ডিআইজি (প্রশাসন) মফিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ, এফ, এম মাসুম রব্বানী।