Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে থাকার কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হারে ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে কেন এর কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে কেন পিছিয়ে আছে, সেটি খুঁজে বের করতে হবে।

রোববার (১২ মে) সকালে গণভবনে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২০ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী। ছাত্র নয় লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন, আর ছাত্রী ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৬ জন। কেন ছাত্ররা কম সে কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, কী কারণে ছাত্রদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে? পাসের হারেও দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাই অগ্রগামী।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, এটা আমরা জানি। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কখনও উন্নতি করা যায় না। সেজন্য আমাদের সরকার সবসময় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষা খাতে আমরা যে ব্যয় করি, এটাকে আমরা ব্যয় বলি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, এটা বিনিয়োগ। শিক্ষাতে আমরা বিনিয়োগ করি।

শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের তিনি বলেন, যার যার বোর্ডে আপনারা খবর নেন, কী কারণে ছেলেরা পিছিয়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাং দেখছি। এগুলো তো আমরা দেখতে চাই না। সেখান থেকে তাদের বিরত করা, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিবিএসকেও বলবো দেখতে।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেল করেছে বলে গালমন্দ করবেন না। ফেল করেছে এতেই তো তাদের মনোকষ্ট। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরও মনোযোগী করতে হবে। গালমন্দ করলে তারা সেটা নিতে পারবে না।

এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, গালমন্দ করলে ছেলে-মেয়েরা সেটা সহ্য করতে পারে না। কিছু ঘটনা তারা ঘটিয়ে ফেলে, তা তো নিশ্চয়ই অভিভাবকরা চাইবেন না। তারা চাইবেন না তাদের সন্তান হারাতে। সেজন্য তাদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন, কেন সে পারল না? সেটা খুঁজে বের করে তার সেই সমস্যা দূর করতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরও মনোযোগী করে তুলতে হবে।

‘আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, ছেলে-মেয়েদের বেশি বেশি বললে তাদের পড়ার আগ্রহটা হারিয়ে যায়। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে তাদের পড়ার আগ্রহটা এমনিতেই তৈরি হয়। আর আজকের ডিজিটাল যুগের ছেলে-মেয়ে, তাদের এমনিতেই মেধা বেশি। কাজেই সেই মেধা বিকাশের সুযোগটা দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখন সাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম মাত্র ৪৫ শতাংশ। আমরা উদ্যোগ নেই এবং নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এ প্রকল্প নিয়ে প্রতিটি জেলাভিত্তিক সাক্ষরতার হার বাড়ানো, এমনকি বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করেছিলাম। ফলে আমরা সাক্ষরতার হার ৬৫.৫-তে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো তারা সেটা বন্ধ করে দিল। ২০০৯ সালে যখন আবার ক্ষমতা আসি তখন দেখি সাক্ষরতার হার কমে ৪৪ ভাগে নেমে এসেছে। আবার আমরা উদ্যোগ নিই, আজ আমাদের ৭৬ ভাগের মতো সাক্ষরতার হার। এটা আমাদের ১৫ বছরের বিরাট অর্জন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে।

‘আমরা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ ভাগ করার পরিকল্পনা আছে।’

তিনি বলেন, ফলাফলে দেখলাম, তিন বোর্ডে ছাত্রের সংখ্যা বেশি। কিছু জায়গায় সমান। অধিকাংশ জায়গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। এটা আমাদের জন্য সুখবর। এসএসসি পর্যন্ত নারীদের শিক্ষা আমরা অবৈতনিক করেছি। পরীক্ষায়ও ছাত্রী সংখ্যা বেশি। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে, কেনো ছাত্রের সংখ্যা কম। কী কারণে আমাদের ছাত্ররা কমে যাচ্ছে। পাসের ক্ষেত্রেও মেয়েরা অগ্রগামী। এটা ভালো কথা। কিন্তু ছেলেরা কেনো পিছিয়ে? বের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দিনে দিনে শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও কেউ কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তারা শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, এটা আমাদের দায়িত্ব। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা একটা শিক্ষানীতি করেছি, এখন সেটা বাস্তবায়ন করছি। বিনামূল্যে আমরা বই বিতরণ করছি। আজকে ৭৬ শতাংশ বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার, এটা আমাদের অর্জন।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ, ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ ভাগ করার পরিকল্পনা আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যাতে খেলতে খেলতে শিখতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে আমাদের ছেলেমেয়েদের শিখাতে হবে। জাতির পিতা বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হবে। সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ অপরিহার্য।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে থাকার কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের সময় : ০২:০১:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হারে ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে কেন এর কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে কেন পিছিয়ে আছে, সেটি খুঁজে বের করতে হবে।

রোববার (১২ মে) সকালে গণভবনে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২০ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী। ছাত্র নয় লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন, আর ছাত্রী ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৬ জন। কেন ছাত্ররা কম সে কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, কী কারণে ছাত্রদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে? পাসের হারেও দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাই অগ্রগামী।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, এটা আমরা জানি। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কখনও উন্নতি করা যায় না। সেজন্য আমাদের সরকার সবসময় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষা খাতে আমরা যে ব্যয় করি, এটাকে আমরা ব্যয় বলি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, এটা বিনিয়োগ। শিক্ষাতে আমরা বিনিয়োগ করি।

শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের তিনি বলেন, যার যার বোর্ডে আপনারা খবর নেন, কী কারণে ছেলেরা পিছিয়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাং দেখছি। এগুলো তো আমরা দেখতে চাই না। সেখান থেকে তাদের বিরত করা, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিবিএসকেও বলবো দেখতে।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেল করেছে বলে গালমন্দ করবেন না। ফেল করেছে এতেই তো তাদের মনোকষ্ট। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরও মনোযোগী করতে হবে। গালমন্দ করলে তারা সেটা নিতে পারবে না।

এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, গালমন্দ করলে ছেলে-মেয়েরা সেটা সহ্য করতে পারে না। কিছু ঘটনা তারা ঘটিয়ে ফেলে, তা তো নিশ্চয়ই অভিভাবকরা চাইবেন না। তারা চাইবেন না তাদের সন্তান হারাতে। সেজন্য তাদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন, কেন সে পারল না? সেটা খুঁজে বের করে তার সেই সমস্যা দূর করতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরও মনোযোগী করে তুলতে হবে।

‘আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, ছেলে-মেয়েদের বেশি বেশি বললে তাদের পড়ার আগ্রহটা হারিয়ে যায়। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে তাদের পড়ার আগ্রহটা এমনিতেই তৈরি হয়। আর আজকের ডিজিটাল যুগের ছেলে-মেয়ে, তাদের এমনিতেই মেধা বেশি। কাজেই সেই মেধা বিকাশের সুযোগটা দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখন সাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম মাত্র ৪৫ শতাংশ। আমরা উদ্যোগ নেই এবং নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এ প্রকল্প নিয়ে প্রতিটি জেলাভিত্তিক সাক্ষরতার হার বাড়ানো, এমনকি বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করেছিলাম। ফলে আমরা সাক্ষরতার হার ৬৫.৫-তে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো তারা সেটা বন্ধ করে দিল। ২০০৯ সালে যখন আবার ক্ষমতা আসি তখন দেখি সাক্ষরতার হার কমে ৪৪ ভাগে নেমে এসেছে। আবার আমরা উদ্যোগ নিই, আজ আমাদের ৭৬ ভাগের মতো সাক্ষরতার হার। এটা আমাদের ১৫ বছরের বিরাট অর্জন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে।

‘আমরা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ ভাগ করার পরিকল্পনা আছে।’

তিনি বলেন, ফলাফলে দেখলাম, তিন বোর্ডে ছাত্রের সংখ্যা বেশি। কিছু জায়গায় সমান। অধিকাংশ জায়গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। এটা আমাদের জন্য সুখবর। এসএসসি পর্যন্ত নারীদের শিক্ষা আমরা অবৈতনিক করেছি। পরীক্ষায়ও ছাত্রী সংখ্যা বেশি। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে, কেনো ছাত্রের সংখ্যা কম। কী কারণে আমাদের ছাত্ররা কমে যাচ্ছে। পাসের ক্ষেত্রেও মেয়েরা অগ্রগামী। এটা ভালো কথা। কিন্তু ছেলেরা কেনো পিছিয়ে? বের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দিনে দিনে শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও কেউ কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তারা শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, এটা আমাদের দায়িত্ব। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা একটা শিক্ষানীতি করেছি, এখন সেটা বাস্তবায়ন করছি। বিনামূল্যে আমরা বই বিতরণ করছি। আজকে ৭৬ শতাংশ বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার, এটা আমাদের অর্জন।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ, ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ ভাগ করার পরিকল্পনা আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যাতে খেলতে খেলতে শিখতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে আমাদের ছেলেমেয়েদের শিখাতে হবে। জাতির পিতা বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হবে। সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ অপরিহার্য।