নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চোর-ডাকাত দিয়ে ভিন্ন কোনও উপায়ে ভোট করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেমন হবে তা দেশবাসী জানে। বাঘ তার ডোরা কাটা দাগ ফেলে আসতে পারে না।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার বাণিজ্যের তাণ্ডবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া গ্রাম-গঞ্জে, মফস্বল জনপদে কেউ বাড়িঘরে থাকতে পারছে না। এ কারণে কেউ ব্যবসা বাণিজ্য, কাজকর্ম করতে পারছে না। পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন থাকায় অসংখ্য পরিবারকে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
রিজভী বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কারণে উপচে পড়েছে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ, নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তার স্বজন-আত্মীয়দের আটক করে মারধর করছে পুলিশ। কার্যত দেশে আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছেৃতাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেওয়া হচ্ছে না।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ‘একতরফা’ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার (১৯ নভেম্বর) ভোর থেকে শুরু হতে যাওয়া টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে সবাইকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীর মুক্তিসহ চলমান আন্দোলনের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন কমিশনের একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল, যা মঙ্গলবার ভোট ৬টায় শেষ হবে। এটি হবে শান্তিপূর্ণ হরতাল।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আমি এই হরতালকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য, এই হরতালকে বাস্তবায়ন করার জন্য আপামর জনসাধারণ প্রত্যেককে আহ্বান জানাচ্ছি। দলের নেতা-কর্মী ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোট ও দলের প্রতিও উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই সাহসের ওপর ভর করে বুক চিতিয়ে রাজপথে উপস্থিত হবেন।
রিজভী বলেন, ৪৮ ঘণ্টার এই হরতাল হচ্ছে অধিকার আদায়ের হরতাল, এই হরতাল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, এই হরতাল হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষকে অন্যায়ভাবে জুলুম-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ফরমায়েশি রায়ে যে ভয়ংকর এবং পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হরতাল। এই হরতাল অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তবে এতো সব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না। জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের দুর্বার আন্দোলনে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে। আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন, নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই ফরমায়েশি এক তরফা নির্বাচন জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পরিস্থিতি তুলে ধরে রিজবী বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে সাতটি। আসামি করা হয়েছে ৯৭৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে (এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাত)। মোট আহত ১২ জন।’
এছাড়া ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এর চার-পাঁচ দিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১৩ হাজার ২১০ জনের বেশি নেতাকর্মী। মামলা হয়েছে ২৯৬টির বেশি। ৪ হাজার ১৩৩ জনের বেশি আহত হয়েছেন। একজন সাংবাদিকসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান রিজভী।