স্পোর্টস ডেস্ক :
শেষ ওভারে জয়ের জন্য লখনৌয়ের প্রয়োজন ১৭ রান। পরীক্ষিত সেনানী মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে বল তুলে দেন চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রানের বিনিময়ে এক উইকেট তুলে নিয়ে দারুণ শুরু করা ফিজের স্রেফ ৩ বলেই ম্যাচ শেষ করে দিলেন সেঞ্চুরিয়ান মার্কাস স্টয়নিস।
শেষ ৬ বলে ১৭ রানের টার্গেট। উইকেটে তখন স্টয়নিসের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার। অন্যদিকে, ঘরের মাঠ এম চিদাম্বরম চেন্নাই চেন্নাই স্লোগানে প্রকম্পিত। দলকে জিতিয়ে নায়ক হওয়ার দারুণ সুযোগ মুস্তাফিজের সামনে। টাইগার এই পেসারের প্রথম বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে এক লহমায় সমর্থকদের চুপ করিয়ে দিলেন স্টয়নিস। পরের দুই বলে দুটি চারে ম্যাচ তখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা। তিন নম্বর ডেলিভারিটিতে আবার হলো নো বল। ফ্রি হিটে ফের ৪ মেরে লখনৌকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন স্টয়নিস।
রান তাড়ায় খেলতে নেমে তৃতীয় বলেই বিদায় নেন লখনৌ ওপেনার কুইন্টন ডি কক। দুইয়ে নামা লোকেশ রাহুলকে ১৬ রানে বিদায় করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তবে তিনে নেমে তাণ্ডব চালান মার্কাস স্টয়নিস। অপরপ্রান্তে ১৩ রান করে দেবদুত পাডিক্কাল বিদায় নিলে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডারকে সঙ্গ দেন নিকোলাস পুরান। ৩৪ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন তারা।
১৫ বলে ৩৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে পুরান বিদায় নিলে ভাঙে জুটি। তবে লড়ে যান স্টয়নিস। ৫৬ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৭ রান। মোস্তাফিজের করা ওভারের তৃতীয় বলেই জয় নিশ্চিত করে স্টয়নিস মাঠ ছাড়েন। ৬৩ বলে ১৩ চার ও ৬ ছক্কায় ১২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ৬ বলে ১৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন দিপক হোডা।
চেন্নাইয়ের হয়ে বল হাতে ভালো করতে পারেননি মোস্তাফিজ। ৩ ওভার ৩ বলে ৫১ রান খরচ করেন তিনি। নেন এক উইকেট। দুটি উইকেট পান মাথিশা পাথিরানা।
আর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া চেন্নাইয়ের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে দলীয় ৪ রানে। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে আজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়েছেন ম্যাট হেনরি। ৩ বলে করেন ১ রান। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা ড্যারিল মিচেল কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করেছেন। অন্যপ্রান্তে গায়কোয়াড় ছিলেন আক্রমণাত্মক। দ্বিতীয় উইকেটে মিচেলকে নিয়ে ২৬ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন গায়কোয়াড়। দলীয় ৪৯ রানে চেন্নাই হারায় দ্বিতীয় উইকেট। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেলকে ফেরান যশ ঠাকুর। ১০ বলে ১ চারে ১১ রান করেন মিচেল। ২ উইকেটে ৪৯ রানেই পাওয়ার প্লে (প্রথম ৬ ওভার) শেষ করে চেন্নাই।
শুরুতেই আক্রমণাত্মকত্মক বনে যাওয়া রুতুরাজ ঝোড়ো ব্যাটিং করেছেন ম্যাচজুড়ে। আইপিএল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করতে রুতুরাজের লেগেছে ৫৬ বল। ১৮ তম ওভারের চতুর্থ বলে যশ ঠাকুরকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে তিন অঙ্ক ছুয়েছেন রুতুরাজ। সেঞ্চুরি করে হেলমেটটা খুললেন। এক হাতে ব্যাট, অন্য হাতে হেলমেট উচিয়ে সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন। রুতুরাজের ঝোড়ো সেঞ্চুরির রাতে লক্ষ্ণৌ বোলারদের ওপর চেন্নাই ঝড় তুলেছে শেষের দিকে। শেষ ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান যোগ করেছে চেন্নাই। ১৬ থেকে ২০—এই পাচ ওভারে চেন্নাই মেরেছে ৮ ছক্কা ও ৪ চার। ৬০ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৮ রান করে অপরাজিত থাকেন রুতুরাজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন শিবম দুবে। ২৭ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৭ ছক্কা ও ৩ চার।
লখনৌর হয়ে ম্যাচে একটি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাট হেনরি, মহসিন খান ও যশ ঠাকুর। কিউই পেসার হেনরি এক উইকেটের বিনিময়ে ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়েছেন, এতে তিনি দলের সবচেয়ে ইকোনমি বোলারও ছিলেন।
এই জয়ে ৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে উঠে এসেছে লক্ষ্ণৌ। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে চেন্নাই।