নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার আন্দোলনকে দমন করতেই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে কথা বলে, তারা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আজ তার অস্তিত্ব মুছে দেয়ার পাশাপাশি তার ওপর মিথ্যা অভিযোগ চাপানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়াপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের জন্য পথ দেখিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিল। স্বাধীনতার পরে দুঃশাসন তৈরি করেছিল তারা। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১৪ বছর ধরে আবারও সেই দুঃশাসন চলছে দেশে।
দীর্ঘ এই সময়ে দেশ সংকটে পড়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এর থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। মানুষ এখন সেই পথে হাঁটছে। এতে সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সরকার আন্দোলনকে দমন করতেই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ কথাও ভুলতে পারি না, শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ তার বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতারা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিলেন। যারা আজকে মিথ্যা প্রচার চালান, বলেন- ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন তাদের একটাই উদ্দেশ্য, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ইতিহাস থেকে একেবারে মুছে ফেলা। তবে সেটা সম্ভব নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কত বছর হয়ে গেল জিয়াউর রহমানের নাম কি মুছে ফেলতে পেরেছে? পারে নাই, পারে না। যেসব ক্ষণজন্মা মানুষ ইতিহাস তৈরি করেন, একটা রাষ্ট্রের জন্মের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করেন, জনগণের কল্যাণে একটা রাষ্ট্র নির্মাণের সব ভিত্তি তৈরি করেন, তাদের এভাবে মুছে ফেলা যায় না, ভুলিয়ে দেওয়া যায় না।
বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশকে ইমার্জিং টাইগার বলা হতো, আর এখন আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র বলা হয় বলে মন্তব্য করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেছেন, মেধা, দক্ষতা এবং সবচেয়ে বড় গুন সততা দিয়ে জিয়াউর রহমান মাত্র সাতে ৩ বছরে বাংলাদেশকে ওই হেনরি কিসিঞ্জার, আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, সেটাকে তিনি তুলে নিয়ে একটা সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে তৈরি করেন। তার এই ধারাবাহিকতা আমরা দেখছি পরবর্তীকালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার সময়ে সেটাকে বলা হচ্ছিল ইমার্জিং টাইগার, আর এখন এদের (আওয়ামী লীগ) আমলে এটাকে বলা হচ্ছে একটা ফ্যাসিবাদী, লুটেরা এবং জনগণের সম্পদ হরণকারী একটি সরকার।
তিনি বলেন, বলা হয়- শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর প্রধানও ছিলেন না। তিনি ছিলেন ডেপুটি প্রধান। অথচ যারা তখন সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমানবাহিনী প্রধান ছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রতি স্যালুট করে আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ এ দেশে একধরনের দুঃশাসন তৈরি করেছিল। তারা তাদের মতো করে এই দেশকে একটা লুটপাটের রাজ্য তৈরি করেছিল। একের পর এক তাদের নিজেদের তৈরি করা সংবিধান, ভেঙেচুরে এই যে আজকে আমরা বলি- জরুরি অবস্থা, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সবশেষে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল গঠন করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান, জনগণ সিপাহী-জনতার বিদ্রোহের মধ্যদিয়ে ৭ নভেম্বরের পর যখন তাকে দায়িত্ব হলো, এরপর তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগ করেছিল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, সমস্ত পত্রিকা বন্ধ, মানুষের অধিকার হরণ। আর জিয়াউর রহমান করলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র, সবাই রাজনীতি করবে এবং সংবাদপত্র খুলে দেওয়া হবে। মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে তাদের কথাগুলো বলতে পারবে। মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তিনি তৈরি করতে শুরু করেছিলেন।
দেশ এখন গভীর সংকটে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংকট থেকে আমাদের মুক্তির পথ দেখান জিয়াউর রহমান। তারা (আওয়ামী লীগ) এখন সব অলিক গল্প ঢালে, বলে যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রয়াত নেতা মুজিবুর রহমানের হত্যায় জড়িত। এটা শুধু ইতিহাসকে বিকৃতি করা না, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে জনগণের সেই আন্দোলনকে এবং গণতন্ত্রকে বিপথে পরিচালনা করা। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি, আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন না, তিনি ছিলেন ডেপুটি প্রধান।
অনুষ্ঠানে তিন পর্বে মোট ৬৯ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরে জিহাদ ইবনে ইমরান, মোস্তাকিম হাসান, হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা, মাধ্যমিক স্তরে এফতেখার এনাম নাহিদ, তালাম মাহমুদ নিবাস, আবু হাসান নাহিয়ান এবং উচ্চতর ও উন্মুক্ত স্তরে কানিজ ফাতেমা কনিক, আজম ইকবাল শিপন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ নিজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য আব্দুস সালাম। এছাড়া অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডক্টর এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম।