ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি :
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে সরকার পতনের কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিয়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে টেকনিক্যাল ভুল থাকতে পারে। তবে জ্ঞানত কোনো অন্যায় করিনি। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আন্দোলনটা কোটায় নাই। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সেটা কোন দিকে গেছে সবাই দেখেছে।
তিনি বলেন, এক ভদ্রলোক ভারতে বসে বলেছেন, আপনারা হস্তক্ষেপ করেন এবং নির্বাচন দেন। তখন সেখানে ভারতীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, আপনার এ কথাটা ভারতে বসে বলা ঠিক হয়নি। নিজের দেশের সমস্যা বাইরের দুনিয়াতে কথা বলি না আমরা।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে কর্মসূচি ইংরেজি ভাষায় দিচ্ছে। টোটাল শাটডাউন, কমপ্লিট শাটডাউন নামে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তাদের এই কর্মসূচির নামের অর্থ ৮০ শতাংশ মানুষ বোঝে না। এতে বোঝা যায় বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এমনটা করা হচ্ছে এবং এখানে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে।
তিনি বিদেশিদের শক্তি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ইসরাইল আমাদের বলেছিল, যে আমরা যদি শুধু অনুরোধ করি তাহলে শেখ মুজিবের হত্যাকারীরা কে কোথায় আছে তাদেরকে একদিনে সাবাড় করে দেবো। তখন আমরা বলেছি, আমরা আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোথাও যাবো না।
বিএনপি প্রসঙ্গে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘তারা তো সরকারকে প্রতিদিনই উৎখাত করেন। গত ২০১৪ সালের পর থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তার বন্ধুরা প্রতিদিন একবার করে সরকার উৎখাত করেন। মাঝে মাঝে তিনবেলাও সরকার উৎখাত করতেন তারা। একবার ফখরুল ইসলাম আলমগীর, একবার আমির খসরু আরেকবার রিজভী সাহেব। তারা প্রতিদিনই সরকার পতন করছেন। এটা চলতেই থাকবে।’
মন্ত্রী বলেন, এবার বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে নিয়ে হেলিকপ্টার চলে গেছে। এখন আপনারাই দেখেন শেখ হাসিনা কোথায় আছেন। এত দরদি মানুষ বাংলাদেশে আছে, তারা তো কেউ হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের দেখেনি। শেখ হাসিনা হাসপাতালে যাচ্ছেন, রোগীদের দেখছেন। এখানে পুলিশের গুলিতে কেউ আহত হলে তো মির্জা ফখরুল ইসলাম হাসপাতালে গিয়ে দেখা তার দায়িত্ব ছিল। যারা বিবৃতি দিয়েছিল, তাদেরও দায়িত্ব ছিল। সরকারের কিছুই হবে না, সরকার থাকবে। আমরা যথেষ্ট মজবুতভাবেই আছি। আমরা আমাদের স্বাভাবিক কাজ করে যাচ্ছি, শেখ হাসিনাও স্বাভাবিক কাজ করে যাচ্ছেন।
ছাত্র আন্দোলনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে নষ্ট করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের পরে কোটা আন্দোলনের আর কোন যৌক্তিকতা ছিলো না। সরকারও কোটা বাতিলের বিষয়ে আন্তরিক ছিলো। কিন্তু ছাত্ররা ভুল বুঝে বিভ্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া চলমান অস্থিরতায় প্রতিটি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথাও জানান তিনি। মন্ত্রী দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনদের বিষয়ে ইসরাইল বিরোধী আন্দোলনের সাথে এত আন্দোলন হলেও তা পশ্চিমা দুনিয়ায় সাড়া ফেলতে পারেনি। কারণ ইসরাইলের হাত অনেক লম্বা।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে অপপ্রয়াশ চলছিল, একমাত্র জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এটি প্রতিফলিত করতে পারেনি। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা কোটা আন্দোলন নিয়ে কোনো অপপ্রচার চালাননি।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে পৌর মেয়র নায়ার কবির, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন, সাবেক পৌর মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসিম উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।