নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মাসের (মার্চ) মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায়, সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব শীর্ষক আলোচনা সভা এবং নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের কথা বলেন। যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে দেশে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন। আপনাকে অতিশিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। একমাসের মধ্যে না দিলে রাজনৈতিক শক্তিগুলো বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের পর সুস্থ ধারার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আর কখনও ফিরতে পারবে না। দলটি যদি আবারও রাজনীতির সুযোগ পায়, তবে সেটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা।
গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান থাকার পরও গণপরিষদ প্রয়োজন কেন? যারা এসব প্রশ্ন সামনে আনছেন, হয় তারা বোঝে না অথবা তারা গভীর ষড়যন্ত্রে যুক্ত আছে।
তিনি আরো বলেন, যদি আওয়ামী লীগ আবার এদেশে রাজনীতির সুযোগ পায়, সেটা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। শুধু পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করলে হবে না, এদের সমন্বিতভাবে বিতাড়িত করতে হবে। ৫ আগস্ট নির্ধারণ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ এই দেশে রাজনীতি করতে পারবে না। এই রায় জনগণ ৫ আগস্ট দিয়েছেন।
নতুন রাজনৈতিক দলকে স্বাগত জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাঠে শত ফুল ফুটবে তাদের স্বাগত জানাব। তাদের ঘোষণাপত্রে বলেছে-সেকেন্ড রিপাবলিক করবে, আমাদের প্রশ্ন বর্তমান রিপাবলিক কী অসুস্থ হয়ে গেছে? বর্তমান রিপাবলিক কী নেই। আপনারা তো সংস্কার কমিশনে সংশোধনী দিয়েছেন। গণপরিষদ নাম কেন হবে? আমরা কী নতুন করে স্বাধীন হওয়া দেশ? আমরা তো স্বাধীন রাষ্ট্র। বরং ফ্যাসিবাদ জমানা থেকে ফেরাতে সংশোধন জরুরি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খালেদা জিয়া। কেয়ানটেকার সরকার প্রবর্তন করা ছিল তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। সেটি চালু থাকলে হয়তো ২৪ এর রক্তপাত ঘটতো না। আওয়ামী লীগ আবার রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে পারলে সেটা হবে আমাদের রাজনৈতিক কৌশলের ব্যর্থতা। তাই আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে হবে ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টই আওয়ামী লীগের রাজনীতির কবর রচিত হয়েছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, (আপনি) বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। তবে দেশের গণমাধ্যমে সরাসরি বলার সৎ সাহস দেখানো উচিত। ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নতুন দলকে অভিনন্দন জানাই। আমরা চাই, গণতন্ত্রের শত ফুল ফুটুক। তবে তাদের গণপরিষদ গঠনের দাবির বিষয়টি প্রশ্নবোধক বলে মনে করি। গণপরিষদ ও সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের কথা যারা বলেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা দীর্ঘয়িত করাই তাদের উদ্দেশ্য।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বচনের কথা বলছেন, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ তারা জাতীয় নির্বচনে নিজেদের অবস্থান নিয় ভয় পান। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ২৪ এর আন্দোলন তো স্থানীয় নির্বাচননের দাবিতে হয়নি। তা বিষয়টি বিবেচনা করে সবাইকে কথা বলা উচিত। দেশের সার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোরুল্লাহ চৌধরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম, ছাত্র সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন রুনু, ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসিম, সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজেড সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।