Dhaka বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমলেও আগামী অর্থবছরে সামান্য কিছু বাড়তে পারেও বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিশ্বব্যাংক জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত। এরপরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ হবে বাংলাদেশ। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এরপর ভুটান ৪.৯ শতাংশ, মালদ্বীপ ৪.৭ শতাংশ, নেপাল ৩.৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২.২ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলেও জানায় সংস্থাটি।

দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ এই প্রতিবেদনে জানান, ‘দক্ষিণ এশিয়া তার জনশক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যেটি একটি হাতছাড়া সুযোগের মতো। যদি এই অঞ্চলটি অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিযুক্ত করে, তবে এর আউটপুট ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।

ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র ইকোনমিস্ট রনজিত ঘোষ এবং বানার্ড হ্যাভেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন বিশ্বব্যাংকের বর্হিসম্পর্ক বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে, তার ওপর।

বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। যা নিম্ন আয়ের বড় সংখ্যাক মানুষদের সংকটে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় মেটানোও অর্থনীতির জন্য অন্যতম চাপ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের উচ্চ সুদহার ভাবনার তৈরি করেছে।

মুদ্রাবাজারে সঠিক ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, তা-না হলে রিজার্ভ সংরক্ষণ কঠিন হবে। আরও বলা হয়, যুব সমাজকে কাজে লাহাতে হবে, এক্ষেত্রে সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে।

কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এছাড়া পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে বিনিময় হারকে ধরাবাঁধার বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেটে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারি থেকে একটি শক্তিশালী পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থ প্রদানের ঘাটতির ক্রমাগত ভারসাম্য, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে।

সংস্থাটি গত দুই বছরের গবেষণায় তুলে ধরেছে, বাংলাদেশের জরুরি আর্থিক সংস্কার, একক বিনিময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নত করতে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে রেট ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় হলে বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে অবকাঠামোগত সংস্কার, মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ, রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এবং সরকার বাড়তি পদক্ষেপসহ মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে হবে।

একই সঙ্গে বিনিয়োগে কঠোর তারল্য অবস্থা, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানিতে বিধিনিষেধ এবং ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুতের মূল্য এবং ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। এজন্য আর্থিক খাত এবং রাজস্ব নীতি সংস্কার বাংলাদেশকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে : তারেক রহমান

চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমলেও আগামী অর্থবছরে সামান্য কিছু বাড়তে পারেও বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিশ্বব্যাংক জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত। এরপরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ হবে বাংলাদেশ। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এরপর ভুটান ৪.৯ শতাংশ, মালদ্বীপ ৪.৭ শতাংশ, নেপাল ৩.৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২.২ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলেও জানায় সংস্থাটি।

দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ এই প্রতিবেদনে জানান, ‘দক্ষিণ এশিয়া তার জনশক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যেটি একটি হাতছাড়া সুযোগের মতো। যদি এই অঞ্চলটি অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিযুক্ত করে, তবে এর আউটপুট ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।

ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র ইকোনমিস্ট রনজিত ঘোষ এবং বানার্ড হ্যাভেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন বিশ্বব্যাংকের বর্হিসম্পর্ক বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে, তার ওপর।

বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। যা নিম্ন আয়ের বড় সংখ্যাক মানুষদের সংকটে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় মেটানোও অর্থনীতির জন্য অন্যতম চাপ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের উচ্চ সুদহার ভাবনার তৈরি করেছে।

মুদ্রাবাজারে সঠিক ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, তা-না হলে রিজার্ভ সংরক্ষণ কঠিন হবে। আরও বলা হয়, যুব সমাজকে কাজে লাহাতে হবে, এক্ষেত্রে সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে।

কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এছাড়া পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে বিনিময় হারকে ধরাবাঁধার বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেটে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারি থেকে একটি শক্তিশালী পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থ প্রদানের ঘাটতির ক্রমাগত ভারসাম্য, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে।

সংস্থাটি গত দুই বছরের গবেষণায় তুলে ধরেছে, বাংলাদেশের জরুরি আর্থিক সংস্কার, একক বিনিময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নত করতে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে রেট ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় হলে বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে অবকাঠামোগত সংস্কার, মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ, রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এবং সরকার বাড়তি পদক্ষেপসহ মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে হবে।

একই সঙ্গে বিনিয়োগে কঠোর তারল্য অবস্থা, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানিতে বিধিনিষেধ এবং ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুতের মূল্য এবং ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। এজন্য আর্থিক খাত এবং রাজস্ব নীতি সংস্কার বাংলাদেশকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।