Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চনপাড়ার আলোচিত সেই বজলু মারা গেছেন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : 

মাদক ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার আলোচিত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বজলুর রহমান। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তিনি মারা যান বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বজলুর ডায়বেটিক, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২৩ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢামেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

স্বজনরা জানান, বজলুর রহমানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ায়। স্ত্রী সেলিনা আক্তার ও তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। মৃত বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে বজলুকে আটক করে র‌্যাব-১। সে সময় তার বিরুদ্ধে র‌্যাবের ওপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা চলছিল।

তখন র‌্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ জানিয়েছিল, গ্রেফতার বজলু চনপাড়া এলাকায় হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করে আসছিলেন।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইল ফোন, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, বাংলাদেশি ৭৫ হাজার জাল টাকা এবং মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার বজলু একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী, দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম মূলহোতা ও নিয়ন্ত্রক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বেশ কয়েকজন সহযোগী কাজ করেন।

বজলুর রহমান ওরফে বজলু রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান-১) ছিলেন। তিনি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে বজলু ভাই নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করেন। কেউ চাঁদা না দিলে তার কপালে নেমে আসতো নির্যাতনের ভয়াবহতা। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয়জন।

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেফতারে র‌্যাব চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমানের নির্দেশে অপরাধীরা র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। এসময় তারা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বজলুর রহমান এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেন।

জানা যায়, র‌্যাবের করা চারটি পৃথক মামলায় বজলরুর এতদিন জেলহাজতে থাকলেও জামিন পাওয়ার কৌশল হিসেবে অসুস্থতার ভান করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সেলিনা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সাবেক মন্ত্রী দস্তগীরের ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

চনপাড়ার আলোচিত সেই বজলু মারা গেছেন

প্রকাশের সময় : ১২:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : 

মাদক ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার আলোচিত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বজলুর রহমান। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তিনি মারা যান বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বজলুর ডায়বেটিক, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২৩ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢামেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

স্বজনরা জানান, বজলুর রহমানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ায়। স্ত্রী সেলিনা আক্তার ও তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। মৃত বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে বজলুকে আটক করে র‌্যাব-১। সে সময় তার বিরুদ্ধে র‌্যাবের ওপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা চলছিল।

তখন র‌্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ জানিয়েছিল, গ্রেফতার বজলু চনপাড়া এলাকায় হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করে আসছিলেন।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইল ফোন, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, বাংলাদেশি ৭৫ হাজার জাল টাকা এবং মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার বজলু একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী, দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম মূলহোতা ও নিয়ন্ত্রক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বেশ কয়েকজন সহযোগী কাজ করেন।

বজলুর রহমান ওরফে বজলু রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান-১) ছিলেন। তিনি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে বজলু ভাই নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করেন। কেউ চাঁদা না দিলে তার কপালে নেমে আসতো নির্যাতনের ভয়াবহতা। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয়জন।

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেফতারে র‌্যাব চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমানের নির্দেশে অপরাধীরা র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। এসময় তারা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বজলুর রহমান এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেন।

জানা যায়, র‌্যাবের করা চারটি পৃথক মামলায় বজলরুর এতদিন জেলহাজতে থাকলেও জামিন পাওয়ার কৌশল হিসেবে অসুস্থতার ভান করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সেলিনা।