Dhaka বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম শহরে ৮ বছরে সড়কে নিহত ৬৬২ জন

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পথচারীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট–২০২৫’— এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এটি চট্টগ্রামে পুলিশি তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত তৃতীয় সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ। বিশেষ করে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই হার প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও তা নগরের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।

৮ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৩৬৩ জন, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। একই সময়ে পথচারী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। পথচারীদের পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন দুই ও তিন চাকার যানবাহনের চালক ও আরোহীরা; এ শ্রেণিতে নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন।

প্রতিবেদনটিতে নগরের ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ ও সাগরিকা গোলচত্বর। এসব এলাকায় দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাই-বাছাই করে সড়ক নকশার ত্রুটি চিহ্নিত ও পুনর্র্নিমাণের সুপারিশ করা হয়েছে।

পথচারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্ত করা, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত, স্পিড হাম্প ও পথচারী দ্বীপ স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সড়ক নিরাপত্তা শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, এটি নগর পরিকল্পনা ও সড়ক নকশার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সিএমপি ইতোমধ্যে রোড সেফটি সেল গঠন করেছে এবং দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহে একটি মানসম্মত পদ্ধতি চালু করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোড সেফটি সেলের মাধ্যমে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই সেলই নিয়মিত সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে, যা নীতিনির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য দিকনির্দেশক হবে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল জানান, প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সিএমপির সঙ্গে যৌথভাবে চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উইমেন্স কলেজ এলাকায় কাজ চলছে। এছাড়া পাহাড়তলী গার্লস স্কুল ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের ব্যয় নিরূপণের কাজ করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মগবাজারে ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে যুবক নিহত

চট্টগ্রাম শহরে ৮ বছরে সড়কে নিহত ৬৬২ জন

প্রকাশের সময় : ০৭:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পথচারীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট–২০২৫’— এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এটি চট্টগ্রামে পুলিশি তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত তৃতীয় সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ। বিশেষ করে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই হার প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও তা নগরের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।

৮ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৩৬৩ জন, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। একই সময়ে পথচারী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। পথচারীদের পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন দুই ও তিন চাকার যানবাহনের চালক ও আরোহীরা; এ শ্রেণিতে নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন।

প্রতিবেদনটিতে নগরের ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ ও সাগরিকা গোলচত্বর। এসব এলাকায় দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাই-বাছাই করে সড়ক নকশার ত্রুটি চিহ্নিত ও পুনর্র্নিমাণের সুপারিশ করা হয়েছে।

পথচারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্ত করা, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত, স্পিড হাম্প ও পথচারী দ্বীপ স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সড়ক নিরাপত্তা শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, এটি নগর পরিকল্পনা ও সড়ক নকশার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সিএমপি ইতোমধ্যে রোড সেফটি সেল গঠন করেছে এবং দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহে একটি মানসম্মত পদ্ধতি চালু করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোড সেফটি সেলের মাধ্যমে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই সেলই নিয়মিত সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে, যা নীতিনির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য দিকনির্দেশক হবে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল জানান, প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সিএমপির সঙ্গে যৌথভাবে চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উইমেন্স কলেজ এলাকায় কাজ চলছে। এছাড়া পাহাড়তলী গার্লস স্কুল ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের ব্যয় নিরূপণের কাজ করা হচ্ছে।