Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যার দায়ে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

এলাকায় ২০ বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় একই পরিবারের তিন ভাইবোনকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. কামাল হোসেন শিকদার দুজনের মৃত্যুদণ্ডের এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ ফয়েজ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন- আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম এবং ইউসুফ ওরফে বাইট্টা ইউসুফ। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলার অপর দুই আসামি শিবির ‘ক্যাডার’ মো. নাছির ওরফে গিট্টু নাছির এবং মো. ফয়েজ মুন্না ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় ২০১৭ সালে তাদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলাম ও আসামি গিট্টু নাছির দুজনই ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। আসামি কাশেম ও ইউসুফের সাথে সাইফুলের জমি নিয়েও বিরোধ ছিল।

সাইফুলের সঙ্গে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করতে একজোট হন নাছির, কাশেম ও ইউসুফ। ওই হত্যাকাণ্ড সে সময় চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

রায় ঘোষণার পর আদালতের অতিরিক্ত পিপি এম এ ফয়েজ বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আসামিদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। মামলার দুই আসামি জামিনে ছিলেন। গতকাল বুধবার যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। তখন আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। আজ রায় ঘোষণার আগে তাদের কারাগার থেকে আদালত আনা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় ৩৬ শতক জমির মালিকানা নিয়ে সাইফুল ইসলাম, তার ভাই মো. আলমগীর ও বোন মনোয়ারার বেগম মনির সঙ্গে আসামি ইউসুফ ও কাশেমের বিরোধ ছিল। এ নিয়ে মামলাও চলছিল।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী বাদী হয়ে থানায় মামালা করেন। এজাহারে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২৯ জুন নগরের বালুচরা এলাকায় সাইফুলের বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে আসামিরা। আসামিদের দেখে মনোয়ারা বেগম মিনু চিৎকার দিলে তাকে প্রথমে গুলি করেন ফয়েজ মুন্না। তাতে মনোয়ারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

বোনের চিৎকার শুনে আলমগীর ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় আসামি ইউসুফ আরেক আসামি ফয়েজ মুন্নাকে গুলি করতে নির্দেশ দেয়। এর পরপরই আলমগীরকে গুলি করেন মুন্না। আলমগীর পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিযে পড়েন। পরে ২০০৪ সালের ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আলমগীর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাইফুল ইসলাম ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় আসামি আবুল কাশেমের নির্দেশে গিট্টু নাছির তার কপালে, বুকে, পেটে ও হাতে গুলি করে। সাইফুল তখনই মারা যান।

২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সেখানে ইউসুফ, কাশেম, গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে আসামি করা হয়। পরে দুই আসামি মারা গেলে তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

দীর্ঘ বিচারে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত বৃহস্পতিবার দুই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

চট্টগ্রামে একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যার দায়ে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশের সময় : ০৯:১৯:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

এলাকায় ২০ বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় একই পরিবারের তিন ভাইবোনকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. কামাল হোসেন শিকদার দুজনের মৃত্যুদণ্ডের এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ ফয়েজ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন- আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম এবং ইউসুফ ওরফে বাইট্টা ইউসুফ। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলার অপর দুই আসামি শিবির ‘ক্যাডার’ মো. নাছির ওরফে গিট্টু নাছির এবং মো. ফয়েজ মুন্না ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় ২০১৭ সালে তাদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলাম ও আসামি গিট্টু নাছির দুজনই ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। আসামি কাশেম ও ইউসুফের সাথে সাইফুলের জমি নিয়েও বিরোধ ছিল।

সাইফুলের সঙ্গে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করতে একজোট হন নাছির, কাশেম ও ইউসুফ। ওই হত্যাকাণ্ড সে সময় চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

রায় ঘোষণার পর আদালতের অতিরিক্ত পিপি এম এ ফয়েজ বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আসামিদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। মামলার দুই আসামি জামিনে ছিলেন। গতকাল বুধবার যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। তখন আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। আজ রায় ঘোষণার আগে তাদের কারাগার থেকে আদালত আনা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় ৩৬ শতক জমির মালিকানা নিয়ে সাইফুল ইসলাম, তার ভাই মো. আলমগীর ও বোন মনোয়ারার বেগম মনির সঙ্গে আসামি ইউসুফ ও কাশেমের বিরোধ ছিল। এ নিয়ে মামলাও চলছিল।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী বাদী হয়ে থানায় মামালা করেন। এজাহারে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২৯ জুন নগরের বালুচরা এলাকায় সাইফুলের বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে আসামিরা। আসামিদের দেখে মনোয়ারা বেগম মিনু চিৎকার দিলে তাকে প্রথমে গুলি করেন ফয়েজ মুন্না। তাতে মনোয়ারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

বোনের চিৎকার শুনে আলমগীর ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় আসামি ইউসুফ আরেক আসামি ফয়েজ মুন্নাকে গুলি করতে নির্দেশ দেয়। এর পরপরই আলমগীরকে গুলি করেন মুন্না। আলমগীর পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিযে পড়েন। পরে ২০০৪ সালের ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আলমগীর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাইফুল ইসলাম ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় আসামি আবুল কাশেমের নির্দেশে গিট্টু নাছির তার কপালে, বুকে, পেটে ও হাতে গুলি করে। সাইফুল তখনই মারা যান।

২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সেখানে ইউসুফ, কাশেম, গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে আসামি করা হয়। পরে দুই আসামি মারা গেলে তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

দীর্ঘ বিচারে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত বৃহস্পতিবার দুই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।