নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের ২০ জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
রোববার (২ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সার্বিক বিষয় নিয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানে। এর প্রভাবে উপকূলীয় বেশকিছু এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। যার ফলে এসব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। এ ছাড়া ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। বেশকিছু রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, আমরা গত কয়েকদিন থেকেই দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার পরদিন আমি ব্যক্তিগতভাবে উপকূলীয় জেলার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে স্থানীয়দের খোঁজখবর নিয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ত্রাণকার্যে নগদ পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন, গো- খাদ্যের জন্য দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কেনার জন্য দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভাগ, দপ্তর-সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ আওয়ামী লীগের এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই আমি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খুলনার কয়রা, ভোলার চরফ্যাশন এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ ও জরুরি সেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় রেমাল এলাকা পরিদর্শনের জন্য পটুয়াখালীর কলাপাড়া পরিদর্শন করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্যে সিলেট জেলায় ২০ লাখ টাকা নগদ অর্থ, ৫০০ মে. টন চাল, ১০ লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং ১০ লাখ টাকার শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলায় ১৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ, ৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। একইভাবে দিনাজপুর জেলায় ১৫ লাখ টাকার নগদ অর্থ এবং ৩ লাখ টাকার শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। এ জন্য আমরা আগামী ৯ তারিখে (৯ জুন) আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা করে সব মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চূড়ান্ত করবো। এরপর এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। সবাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এই সপ্তাহের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির সমস্ত হিসাব পূর্ণাঙ্গ করে, আগামী ৯ তারিখে আর একটি সভা করে সব মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি হিসাব প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কারণ আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এরই অংশ হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সব মন্ত্রণালয়ের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবো। মন্ত্রণালয়ের সভা ৯ জুন হবে, এর আগেই আমরা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করবো।
উপকূল এলাকায় সরকারি স্থাপনার ব্যাপক কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দরে যে ড্রেজিং করা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পলি মাটি আসার কারণে এটার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য আমরা কাজ করছি। উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেবো। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কাজগুলো হবে।
উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে মহিববুর রহমান বলেন, ‘মালিকরা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আজকে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এদেরকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা আজকে কথা বলেছি। আমরা আশা করি আগামী ৯ তারিখে মিটিংয়ে আমরা সম্পূর্ণভাবে কমপ্লিট করবো। তখন সামগ্রিক পরিকল্পনা জানতে পারবেন, যেটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করবো।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি, সেটা নিয়ে একটা সাজেশন আমরা প্রধানমন্ত্রী কাছে দেবো।’