নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য ছুটি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
রোববার (২৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্গত মানুষের পাশে থাকতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সরকারি অফিসের পাশাপাশি, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলে উদ্ধার তৎপরতার জন্য সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকার ৮ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে আপাতত স্কুলগুলো খোলা থাকবে। তবে ক্লাস বন্ধ থাকবে।
তিনি আরো বলেন, গতকাল আমরা বলেছিলাম, আজ ভোর থেকে এটা (ঘূর্ণিঝড় রিমাল) আঘাত হানতে পারে। কিন্তু বাতাসের গতি কম থাকায় আজ ভোরে এটি আঘাত হানেনি। গতকাল বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার। ভোরে বাতাসের গতি কমে ১০-এর নিচে চলে আসে। পরবর্তীতে ৬ কিলোমিটারে নেমে আসে।
মহিববুর রহমান বলন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা মহাবিপদ সংকেতে পরিণত হয়েছে এবং আজকে সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম ভাগ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু হবে। মধ্যরাতে মূল যে ঝড় সেটা বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।
তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হতে পারে। জোয়ার থাকলে এটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রিমালের প্রভাবে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে আজকে সভা করেছি। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মেডিকেল টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়কে আরও শক্তভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করি, নির্দেশনাগুলো যেভাবে দিচ্ছি সবাই যদি সে অনুসারে পালন করে, এই দুর্যোগকে পূর্বের মতো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
এদিকে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাপবিদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি এখন বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। রবিবার সন্ধ্যা বা মধ্যরাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ বেশ কিছু জেলার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ঝড়ের ব্যাস বড় হওয়ায় এটি সন্ধ্যায় অতিক্রম শুরু করে পুরোপুরি উপকূল অতিক্রম করে যেতে রাত হতে পারে। ঝড়ের গতিবেগ ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এই গতিবেগের বেশি হলে আমরা তাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলি। রিমাল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে কি না, এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।