Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ১৭৫ কিমি বেগে উপকূলে আঘাত হানতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, মোখা উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।

শুক্রবার (১২ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখার সবশেষ অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোখার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস শুরু হতে পারে। তখন থেকে ওইসব এলাকায় এর প্রভাব শুরু হবে। বৃষ্টিপাতের সাথে বইবে দমকা বাতাস। পরদিন রোববার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

তিনি আরো বলেন, মোখার গতি কমেছে। এটি আগে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল। কিন্তু এখন তা কমে গড়ে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে। বর্তমানে এর গতি ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। এ গতিবেগ থাকলে রোববার দুপুর নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে এবং মিয়ানমারের উত্তর উপকূল দিয়ে মোখার অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা পুরোটাই এ মোখার আওতায় থাকবে। এখন পর্যন্ত ঝুঁকিতে আছে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ। এ ছাড়াও রয়েছে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, এখন পর্যন্ত মোখার সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সিডরের মতো আই ফরমেশন বা চোখাকৃতির তৈরির দিকে এগুচ্ছে।মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২১ কিলোমিটার এর বেশি থাকতে পারে। আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বরাত দিয়ে শুক্রবার (১২ মে) কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে আঘাত করলেও পুরো বাংলাদেশের সব উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হবে ঘূর্ণিঝড়টি যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান ও আকৃতির কারণে।

তিনি আরও জানান, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট।

সকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এগোলেও একপর্যায়ে এটি উত্তর দিকে বাঁক নেয় এবং বিকেল নাগাদ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আগানোর আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৩.৯ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.২ক্কপূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার (১২ মে) দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ০২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মোখা গতিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে এটি কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যেতে পারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কারওয়ান বাজার এলাকায় সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার ৩০

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ১৭৫ কিমি বেগে উপকূলে আঘাত হানতে পারে

প্রকাশের সময় : ০৪:১৬:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, মোখা উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।

শুক্রবার (১২ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখার সবশেষ অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোখার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস শুরু হতে পারে। তখন থেকে ওইসব এলাকায় এর প্রভাব শুরু হবে। বৃষ্টিপাতের সাথে বইবে দমকা বাতাস। পরদিন রোববার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

তিনি আরো বলেন, মোখার গতি কমেছে। এটি আগে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল। কিন্তু এখন তা কমে গড়ে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে। বর্তমানে এর গতি ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। এ গতিবেগ থাকলে রোববার দুপুর নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে এবং মিয়ানমারের উত্তর উপকূল দিয়ে মোখার অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা পুরোটাই এ মোখার আওতায় থাকবে। এখন পর্যন্ত ঝুঁকিতে আছে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ। এ ছাড়াও রয়েছে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, এখন পর্যন্ত মোখার সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সিডরের মতো আই ফরমেশন বা চোখাকৃতির তৈরির দিকে এগুচ্ছে।মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২১ কিলোমিটার এর বেশি থাকতে পারে। আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বরাত দিয়ে শুক্রবার (১২ মে) কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে আঘাত করলেও পুরো বাংলাদেশের সব উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হবে ঘূর্ণিঝড়টি যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান ও আকৃতির কারণে।

তিনি আরও জানান, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট।

সকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এগোলেও একপর্যায়ে এটি উত্তর দিকে বাঁক নেয় এবং বিকেল নাগাদ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আগানোর আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৩.৯ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.২ক্কপূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার (১২ মে) দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ০২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মোখা গতিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে এটি কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যেতে পারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।