Dhaka বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্রেপ্তার নয়, স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন সেনা কর্মকর্তারা : আসামিপক্ষের আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। এমনটি দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের বলে জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই এসব সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। তারা আশা করেন, এই আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তিনি একথা বলেন।

ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, গত ৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে তিনটি আদেশ হয়। এসব মামলায় সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর তাদের সেনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হেফাজতে (অ্যাটাচ) নেওয়া হয়, অর্থাৎ সেনা সদরের হেফাজতে রাখা হয়। আজ ছিল ওই মামলাগুলোর নির্ধারিত তারিখ।

তিনি বলেন, এই তারিখে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত আমাদের ওকালতনামা স্বাক্ষরের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা তিনটি আবেদন করেছি, যার মধ্যে একটি জামিনের আবেদন। বাকি দুটি হলো প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন এবং তাদের যেন সাবজেলে রাখা হয়।

সাবজেল সংক্রান্ত বিষয়ে সারোয়ার বলেন, এটা জেল কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয়। যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২০ নভেম্বর। এখন তাদের সেনানিবাসে যে সাবজেল (উপ-কারাগার) ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, টেকনিক্যালি প্রসিকিউশন বলছে এটি গ্রেপ্তার, কিন্তু আমরা বলি আত্মসমর্পণ। কারণ তারা আজ সকালে স্বেচ্ছায় আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। প্রশাসনিক সুবিধা ও নিরাপত্তার কারণে একটি গাড়িতে করে আনা হয়েছে। এই ফ্যাসিলিটিটা ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র, মূলত তারা আত্মসমর্পণই করেছেন।

মূল অপরাধীরা পালিয়ে গেছে এমনটি জানিয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, যারা সত্যিকারের অপরাধী, যেমন জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, তারেক সিদ্দিকী – তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু আমার মক্কেলরা সুনাগরিক হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, একজন রাজসাক্ষী (সাবেক আইজিপি) বলেছেন যে- এই ঘটনাগুলো প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে, এবং কর্মকর্তাদের এতে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

তিনি বলেন, জানা গেছে, এই কর্মকর্তাদের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ‘সাবজেল’ হিসেবে ঘোষিত একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আজ সকালে ৭টার পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

যাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন-মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিরসরাইয়ে ২০৯ কোটি টাকায় হবে অ্যাক্সেস সড়ক

গ্রেপ্তার নয়, স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন সেনা কর্মকর্তারা : আসামিপক্ষের আইনজীবী

প্রকাশের সময় : ০২:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। এমনটি দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের বলে জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই এসব সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। তারা আশা করেন, এই আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তিনি একথা বলেন।

ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, গত ৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে তিনটি আদেশ হয়। এসব মামলায় সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর তাদের সেনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হেফাজতে (অ্যাটাচ) নেওয়া হয়, অর্থাৎ সেনা সদরের হেফাজতে রাখা হয়। আজ ছিল ওই মামলাগুলোর নির্ধারিত তারিখ।

তিনি বলেন, এই তারিখে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত আমাদের ওকালতনামা স্বাক্ষরের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা তিনটি আবেদন করেছি, যার মধ্যে একটি জামিনের আবেদন। বাকি দুটি হলো প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন এবং তাদের যেন সাবজেলে রাখা হয়।

সাবজেল সংক্রান্ত বিষয়ে সারোয়ার বলেন, এটা জেল কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয়। যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২০ নভেম্বর। এখন তাদের সেনানিবাসে যে সাবজেল (উপ-কারাগার) ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, টেকনিক্যালি প্রসিকিউশন বলছে এটি গ্রেপ্তার, কিন্তু আমরা বলি আত্মসমর্পণ। কারণ তারা আজ সকালে স্বেচ্ছায় আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। প্রশাসনিক সুবিধা ও নিরাপত্তার কারণে একটি গাড়িতে করে আনা হয়েছে। এই ফ্যাসিলিটিটা ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র, মূলত তারা আত্মসমর্পণই করেছেন।

মূল অপরাধীরা পালিয়ে গেছে এমনটি জানিয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, যারা সত্যিকারের অপরাধী, যেমন জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, তারেক সিদ্দিকী – তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু আমার মক্কেলরা সুনাগরিক হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, একজন রাজসাক্ষী (সাবেক আইজিপি) বলেছেন যে- এই ঘটনাগুলো প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে, এবং কর্মকর্তাদের এতে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

তিনি বলেন, জানা গেছে, এই কর্মকর্তাদের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ‘সাবজেল’ হিসেবে ঘোষিত একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আজ সকালে ৭টার পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

যাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন-মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।