নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় দেবে যাওয়া একটি কালভার্ট দুই বছরেও সংস্কার করা হয়নি। কালভার্টটির নিচ থেকে মাটি ধসে মাঝ বরাবর দেবে বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই ফাটল বড় হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কালভার্টটি দিয়ে যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকায় যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেবগ্রামের তেনাপচা এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৯০০ মিটার দৈর্ঘ্যের যে রাস্তাটি রয়েছে, তার মাঝামাঝি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১-২০১২ অর্থবছরে খালের ওপর ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের বক্স কালভার্ট নির্মিত হয়। ১৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত কালভার্টের নিচ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ২০২১ সালের অক্টোবরে মাটি ধসে দেবে যায়। তখন কালভার্টের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে মাহিন্দ্র, অটোরিকশা, নসিমন এমনকি ছোট পিকআপ গাড়িরও চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
দেবগ্রামের বাসিন্দারা জানান, চার বছর আগে পাউবোর তত্ত্বাবধানে পর্যাপ্ত জায়গা ও ঢালু না রেখে খাল খনন হয়। সেতুসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গার্ডার, সিসি ব্লক, জিওব্যাগসহ সুরক্ষার ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলেও করা হয়নি। ফলে বর্ষাকালে খাল দিয়ে পানি প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সেতুর নিচে এবং পাশের মাটি ধসে যায়। এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার খালের দুই পাশ ধসে পড়ে। এতে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র সরতে বাধ্য হয়।
শনিবার (২৫ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত সেতুটির মাঝ বরাবর এবং একপাশ ভেঙে দেবে গেছে। সেতুর নিচের একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। দেবড়গ্রাম থেকে রাজবাড়ী শহরের দিকে সেতুতে উঠতে সংযোগ সড়কের বাম পাশের বেশ খানিক জায়গার মাটি সরে গেছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহিন্দ্র, রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যান এবং পথচারী আসা-যাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ৬৪ জেলা খাল খনন প্রকল্পের আওতায় গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাল খনন প্রকল্পের কাজ ২০১৮-২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শেষ হয়। প্রায় ২৫ ফুট প্রশস্ত ও ৪ ফুট গভীর খননকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কাজের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ঢাকার মতিঝিলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিটিএসএল-এসআরকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পাউবোর তত্ত্বাবধানে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকার পদ্মা নদী থেকে ছোটভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাল খনন হয়। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলায় রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘অপরিকল্পিত খননে খালের দুই পাড় ধসে পড়ে। এমনকি খাল পাড়ে আমার নিজের বাড়িও ঝুঁকিতে রয়েছে।’
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত খাল খননে মাটি ধসে সেতুটি দেবে যায়। তিন বছর পার হলেও সেতু দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, দেবগ্রাম তেনাপচায় কালভার্টটির স্থানে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের জন্য ২০২২ সালের ২ জুন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে।