স্পোর্টস ডেস্ক :
লস অ্যাঞ্জেলস মানেই হলিউড আর তারকার শহর। লিওনেল মেসি অবশ্য সেই লস অ্যাঞ্জেলসের তারকা নন। তিনি এখন শুধুই মায়ামির। তবে তাতে কি। হলিউডের শহরে এসে মেসি নিজেই কেড়ে নিয়েছেন সব আলো। এমএলএসের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লস অ্যাঞ্জেলস ফুটবল ক্লাব (এলএএফসি) রীতিমত বিধ্বস্ত হয়েছে এই আর্জেন্টাইনের কারণে। ম্যাচে গোল না পেলেও জোড়া অ্যাসিস্ট করে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন মেসিই।
আর সেই মেসির জাদুতেই এবার চ্যাম্পিয়নদেরও মাটিতে নামাল মায়ামি। এমএলএসে লস অ্যাঞ্জেলেসকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে মায়ামি। এই তিন গোলের কোনোটির পাশে মেসির নাম লেখা না থাকলেও দুটি গোলে সরাসরি সহায়তা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। শুরুতে ফাকুন্দো ফারিয়াসের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মেসির সহায়তা থেকে পরে আরও দুবার জালে বল জড়ান জর্দি আলবা ও লিওনার্দো কাম্পানা।
যদিও এ ম্যাচে দুর্ভাগ্য ভর করেছিলো লস অ্যাঞ্জেলেস এফসির ওপর। একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ফল হতো ভিন্ন। অন্যদিকে মেসির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া ইন্টার মিয়ামি সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েই জয় তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে।
তবে এই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারের জন্য চাইলে নিজেদেরও দুষতে পারে লস অ্যাঞ্জেলেস। একের পর এক সহজ সুযোগ হাতছাড়া করার খেসারত দিয়েই মূলত হারতে হয়েছে তাদের। আর অন্যদিকে মেসির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া ইন্টার মায়ামি সুযোগ কম পেলেও সেগুলোকে কাজে লাগাতে ভুল করেনি।
লস অ্যাঞ্জেলসে শুরু থেকেই মাঠ ছিল স্বাভাবিক খেলার অনুপযোগী। বৃষ্টিভেজা মাঠে বারবারই পা হড়কাচ্ছিলেন মায়ামির ফুটবলাররা। বেশ কয়েকবারই বল হারাতে হয়েছে ভারী মাঠের কারণে। খেলোয়াড়রাও ছিলেন বিভ্রান্ত। এই সুবাদেই যেন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয় স্বাগতিক এলএএফসি। তবে গোলবারের নিচে ড্রেক ক্যালেন্ডার এই ম্যাচেও ছিলেন অবিচল। তার কল্যাণেই ম্যাচে টিকে ছিল লিগ কাপজয়ী মায়ামি।
শুরু থেকেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। তবে প্রথম কয়েক মিনিটে ইন্টার মায়ামির চেয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসই আক্রমণে বেশি এগিয়ে ছিল। ম্যাচের প্রথম ১৩ মিনিটের মধ্যে একাধিক সহজ সুযোগ হাতছাড়াও করে তারা। এমনকি গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ডেনিস বোয়াঙ্গা।
এ সময় অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ পেলেও লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো ভুল করেনি ইন্টার মায়ামি। ১৪ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ইন্টার মায়ামিকে লিড এনে দেন ফারিয়াস। সতীর্থ টিমো আভিলেসের থ্রো পাসকে দারুণ এক স্লাইডিং শটে জালের ঠিকানা দেখান ফারিয়াস।
একটু পরই অবশ্য সমতা ফেরাতে পারত লস অ্যাঞ্জেলেস। তবে যথারীতি এবারও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। গোলরক্ষককে একা পেয়ে আবারও গোল করতে ব্যর্থ হন বোয়াঙ্গা। এরপর ২৬ মিনিটে সুযোগ পেয়ে আবার গোল করতে ব্যর্থ হয় লস অ্যাঞ্জেলেস। পরের মিনিটে মেসির শট রুখে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক।
৩৪ মিনিটে আরেকবার ইন্টার মায়ামিকে বাঁচিয়ে দেন গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডার। ৩৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোলটা পেয়েই গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। মেসিকে দারুণভাবে রুখে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক।
বিরতির পর লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যাচে ফেরার পথ আরও কঠিন করে দেন মেসি-আলবারা। বক্সের বাইরে থেকে দারুণভাবে মেসি বল বাড়ান আলবার উদ্দেশে। নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এই স্প্যানিশ তারকা। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও অবশ্য হাল ছাড়েনি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। চেষ্টা করে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচে ফেরার। কিন্তু কখনো নিজেদের ভুলে আবার কখনো ইন্টার মায়ামি গোলরক্ষকের অতিমানবীয় সেভে গোল পাওয়া হচ্ছিল না তাদের।
ম্যাচের ৬০ মিনিটে আবার বোয়াঙ্গাকে দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন ক্যালেন্ডার। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে আবার মেসির ঝলক। বল পেয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে নিজে শট নেওয়ার জায়গা না পেয়ে বাড়িয়ে দেন সতীর্থ কাম্পানাকে। দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করে দলের হয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন কাম্পানা। এরপর অন্তিম মুহূর্তে লস অ্যাঞ্জেলেসের হয়ে রায়ান হোলিংশেড এক গোল করে ব্যবধান কমালেও তা শুধু সান্ত্বনাই দিয়েছে।
এই জয়ে এমএলএসের ইস্টার্ন কনফারেন্সে ২৫ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৪তে আছে মায়ামি। টেবিলের তাদের পরের অবস্থান ঠিক তলানিতে থাকা টরোন্টোর সংগ্রহ ২২ পয়েন্ট।
এদিন খেলা দেখতে লস অ্যাঞ্জেলসের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন ওয়েলসের প্রিন্স হ্যারি, হলিউড তারকা ওয়েন উইলসন, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, সেলিনা গোমেস ও উইল ফেরেল।