Dhaka রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুম-খুন শুরু করেছিল বিএনপি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির সময় গুম-খুন শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এখন আর গুম-খুন দেখা যায় না। আমরা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি যেভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি শুরু করেছিল। অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, একই পুনরাবৃত্তি তারা ঘটাল। এগুলো যারা করে, তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। তারা আবার নানা ধরনের কথা বলে। তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না এসব কথা বলে। এগুলো শুনলে মনে হয়, আমরা কোন যুগে বসবাস করছি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গুম, খুন শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমরা এগুলো ব্যাপক হারে দেখেছি। তখন প্রতিবছর প্রতিনিয়ত এ ধরনের গুম, খুন হতো। তারা যদি এখন এসে বলে, এতো খুন হয়েছে, এতো গুম হয়েছে, বলতেই পারে। আমাদের কথা হচ্ছে এই গুম ও খুন এখন আমরা সচরাচর দেখছি না। বাংলাদেশ এখন পিসফুল একটা দেশ। ২০০৪ সালে এক বছরে ৪৭০ জন গুম হয়েছিল। যারা এসব কথা বলছেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু জানেন, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এখানে সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থি, বনদস্যু, জলদস্যু সবাই পর্যায়ক্রমে স্যারেন্ডার করেছে। এগুলা এখন বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী উত্থান দেখেছি। ২১ আগস্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা দেখেছেন। খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। জায়গায় জায়গায় বোমা হামলা হতো। ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা হয়েছে। সবগুলো কিন্তু সেই আমলে হয়েছে। এগুলা ইতিহাস হয়ে আছে। এখন যারা স্বপ্নে দেখছেন বিভ্রান্তি ছড়াবে, তারা একটা দুঃস্বপ্ন দেখছেন।

অবৈধভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে সরকার- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, কাউকে অন্যায়ভাবে কিংবা বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশে উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ক্যামেরা উড়ানো হয়েছিল। সমাবেশে কখন কতজন লোক উপস্থিত ছিল, ড্রোনের সাহায্যে আমরা মাথাগুনে সেটা বের করেছি। সেখানে কারা কাকে পিটিয়েছে, তারা কোথা থেকে এসেছে, সবকিছু আমাদের ক্যামেরায় রয়ে গেছে। ক্যামেরা থেকে খুঁজে কারা কারা জড়িত ছিল তা বের করা হয়েছে। যে যেখানেই থাকুক… সে যদি সাতক্ষীরা থেকে এসে থাকে আমরা সাতক্ষীরায় তাদের চেহারা (ছবি) পাঠিয়ে দিয়েছি। তাকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপির ওই সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিল, মাথা গুনে আমরা দেখেছি। আরও ছোট ছোট দল সেদিন সমাবেশ করেছিল। ড্রোনের মাধ্যমে ক্যাপচার করা সবার চেহারা আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা সহিংসতা করে তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলেন। তারা আবার নানা ধরনের কথা বলেন। তাদেরকে রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না- এ সমস্ত কথা বলেন। এগুলো শুনলে আমাদের মনে হয়, আমরা কোন যুগে বসবাস করছি।

আজ বিএনপির মানববন্ধনে বক্তারা জানিয়েছেন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে খুন ও গুমের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু খোঁজখবর রাখেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থি, বনদস্যু, জলদস্যু ক্রমান্বয়ে সারেন্ডার করেছে। এগুলো বিদায় নিয়েছে। খুন-গুমের কথা যদি বলতে হয়, ২০০৪-এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি ছিল, সেখানে ৪৭০ জনের কাছাকাছি গুম হয়েছিল এক বছরে। এখন এসে যদি বলে এতগুলো খুন, এতগুলো গুম হয়েছে। সেগুলো তো বলতেই পারে। আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, খুন-গুমের শুরুই করেছিলেন তারা (বিএনপি)। আমরা এগুলো বন্ধ করে আজকে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।

বিএনপির মানববন্ধনে বাধা দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, পুলিশ অন্য জায়গায় গিয়ে মানববন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। যানজট সৃষ্টি হতে পারে, সেজন্যই তারা অন্য জায়গায় করতে বলেছিল। সেই জায়গায় তারা যায়নি। করতে দেয়নি ঘটনা সত্যি নয়।

তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে বিএনপির-জামায়াত কিংবা অন্য দল, যত ধরনের প্রোগ্রাম করতে চেয়েছে, আমরা কোনোটাতেই বাধা দেইনি। তারা মানববন্ধন, মিছিল, লংমার্চ, অবরোধ, ধর্মঘট করেছে। আমরা কোনোটিতেই বাধা দেইনি। গত ২৮ অক্টোবরও আমরা বাধা দেইনি। সেদিন দেখলাম সারা দেশ থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মীকে তারা ঢাকায় নিয়ে এসেছে। তারা বিরাট একটা সমাবেশ শুরু করলেন। বলেছিলেন, নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্যদিকে ফকিরাপুল চৌরাস্তা ক্রস করবেন না। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। তারা এর বাইরে যাবেন না। আমরা দেখলাম নাইটিঙ্গেল মোড় পার হয়ে গেছে। কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ও জাজেস কমপ্লেক্স পর্যন্ত। হাজার দুয়েক লোক সেখানে জটলা করছিল। ওইদিন আওয়ামী লীগ একটি শান্তি সমাবেশ করছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে। আমার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) এলাকার মহিলারা সেই শান্তি সমাবেশে যাচ্ছিলেন প্রধান বিচারপতির বাসার পেছন দিয়ে। সেখানে তাদের ধরে এমন পেটান পেটালো, তাদের কান্না যদি দেখতেন, তাদের আহাজারি যদি দেখতেন, তাহলে আপনারাও হয়তো অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। এরপরই দেখলাম তারা আরও মারমুখী হলেন। তারা প্রধান বিচারপতির বাসায় ঢুকে হামলা চালালেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটের নামফলক ভাঙচুর করলেন। ছোট গেটটা গুড়িয়ে দিলেন। ভেতরে ঢুকে ঢিল মারলেন। পাঁচ-ছয়শ লোক ঢুকে বিচারপতির বাসায় হামলা চালালেন। পুলিশ বাধ্য হয়ে তখন তাদের সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। আমরা দেখলাম, তারা জাজেস কমপাউন্ডের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ভাঙচুর করলেন। সাংবাদিকরা তাদের ঢিলে ও মারধরে আহত হলেন। কোথা থেকে তারা ব্যাগ ভর্তি করে ঢিল নিয়ে এলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির কর্মীরা পুলিশ হাসপাতালেও হামলা চালালেন। যেখানে সাংবাদিকরাও চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। একজন লোক হার্ট অ্যাটাক করলেন। তিনিও চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেও বিএনপির শত শত কর্মী যারা সবসময় এ ধরনের অশান্তি করেন, মারধর করেন, বোমাবাজি করেন, তারা ঢুকে গেলেন। বোমা মারতে মারতে হাসপাতালের স্পেশাল অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করলেন, সেবিকাদের মারপিট করলেন। সেখানেই শেষ নয়, তারপর দেখলাম কালভার্ট রোডের এক মাথায় ছাত্রদলের কয়েকজন চিহ্নিত নেতা পুলিশকে পেটানো শুরু করলো। পিটিয়ে হত্যা যখন নিশ্চিত হলো, তখন তারা আবার এসে তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করলো। এগুলো সবই ক্যামেরাবন্দি রয়েছে। তারা পুলিশের লাশের ওপর যেগুলো করলো সেগুলো আপনারা দেখেছেন। শুধু পুলিশ নয়, আনসারের ওপরও এমন বর্বর আক্রমণ হয়েছিল। সেদিন কয়েকশ পুলিশ আহত হলো। কয়েকশ সাংবাদিক আহত হলো। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা ধরেই নিয়েছিলাম বিএনপির নেতারা বলবেন, আমাদের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা এ কর্মটি করেছে। সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তা না করে তারা হরতাল ঘোষণা করলো দেশব্যাপী। ২৯ তারিখ সকাল বেলায় দেখলাম, নিরীহ হেলপারসহ একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিলো। আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো। একসঙ্গে কয়েকশ বাসের মধ্যে আগুন দিলো। যেখানে সেখানে পেট্রোল বোমা ছোড়া শুরু করলো। ২০১৪ সালে যেভাবে তারা আগুন দিয়ে আতঙ্ক শুরু করেছিল, অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তারই একটা পুনরাবৃত্তি ঘটালো। এগুলো যারা করে, তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। তারা নানা ধরনের কথা বলে। তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না। এসব শুনলে মনে হয় আমরা কোন যুগে বসবাস করছি। পুলিশ ও আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করেছেন।

হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি আপত্তি থাকে, যে দলই হোক, তবে তারা করতে পারবে না। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যদি মনে করে এখানে হলে পরিবেশ নষ্ট হবে, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীরও দেখার বিষয় রয়েছে।

যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। সেগুলো দেখে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে তাদের বদলি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পুলিশের প্রতি আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাচ্ছে, আমাদের পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিবে নির্বাচন কমিশন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে চিঠি আগে আসুক। নির্বাচন কমিশন এগুলো স্টাডি করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই একটা সিদ্ধান্ত আমাদের দিচ্ছে। সে সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে না এলে তো আমরা অ্যাডভান্স কিছু বলতে পারি না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আগৈলঝাড়ায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঝুঁকিপূর্ণ

গুম-খুন শুরু করেছিল বিএনপি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:১১:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির সময় গুম-খুন শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এখন আর গুম-খুন দেখা যায় না। আমরা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি যেভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি শুরু করেছিল। অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, একই পুনরাবৃত্তি তারা ঘটাল। এগুলো যারা করে, তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। তারা আবার নানা ধরনের কথা বলে। তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না এসব কথা বলে। এগুলো শুনলে মনে হয়, আমরা কোন যুগে বসবাস করছি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গুম, খুন শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমরা এগুলো ব্যাপক হারে দেখেছি। তখন প্রতিবছর প্রতিনিয়ত এ ধরনের গুম, খুন হতো। তারা যদি এখন এসে বলে, এতো খুন হয়েছে, এতো গুম হয়েছে, বলতেই পারে। আমাদের কথা হচ্ছে এই গুম ও খুন এখন আমরা সচরাচর দেখছি না। বাংলাদেশ এখন পিসফুল একটা দেশ। ২০০৪ সালে এক বছরে ৪৭০ জন গুম হয়েছিল। যারা এসব কথা বলছেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু জানেন, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এখানে সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থি, বনদস্যু, জলদস্যু সবাই পর্যায়ক্রমে স্যারেন্ডার করেছে। এগুলা এখন বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী উত্থান দেখেছি। ২১ আগস্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা দেখেছেন। খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। জায়গায় জায়গায় বোমা হামলা হতো। ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা হয়েছে। সবগুলো কিন্তু সেই আমলে হয়েছে। এগুলা ইতিহাস হয়ে আছে। এখন যারা স্বপ্নে দেখছেন বিভ্রান্তি ছড়াবে, তারা একটা দুঃস্বপ্ন দেখছেন।

অবৈধভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে সরকার- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, কাউকে অন্যায়ভাবে কিংবা বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশে উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ক্যামেরা উড়ানো হয়েছিল। সমাবেশে কখন কতজন লোক উপস্থিত ছিল, ড্রোনের সাহায্যে আমরা মাথাগুনে সেটা বের করেছি। সেখানে কারা কাকে পিটিয়েছে, তারা কোথা থেকে এসেছে, সবকিছু আমাদের ক্যামেরায় রয়ে গেছে। ক্যামেরা থেকে খুঁজে কারা কারা জড়িত ছিল তা বের করা হয়েছে। যে যেখানেই থাকুক… সে যদি সাতক্ষীরা থেকে এসে থাকে আমরা সাতক্ষীরায় তাদের চেহারা (ছবি) পাঠিয়ে দিয়েছি। তাকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপির ওই সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিল, মাথা গুনে আমরা দেখেছি। আরও ছোট ছোট দল সেদিন সমাবেশ করেছিল। ড্রোনের মাধ্যমে ক্যাপচার করা সবার চেহারা আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা সহিংসতা করে তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলেন। তারা আবার নানা ধরনের কথা বলেন। তাদেরকে রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না- এ সমস্ত কথা বলেন। এগুলো শুনলে আমাদের মনে হয়, আমরা কোন যুগে বসবাস করছি।

আজ বিএনপির মানববন্ধনে বক্তারা জানিয়েছেন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে খুন ও গুমের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু খোঁজখবর রাখেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থি, বনদস্যু, জলদস্যু ক্রমান্বয়ে সারেন্ডার করেছে। এগুলো বিদায় নিয়েছে। খুন-গুমের কথা যদি বলতে হয়, ২০০৪-এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি ছিল, সেখানে ৪৭০ জনের কাছাকাছি গুম হয়েছিল এক বছরে। এখন এসে যদি বলে এতগুলো খুন, এতগুলো গুম হয়েছে। সেগুলো তো বলতেই পারে। আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, খুন-গুমের শুরুই করেছিলেন তারা (বিএনপি)। আমরা এগুলো বন্ধ করে আজকে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।

বিএনপির মানববন্ধনে বাধা দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, পুলিশ অন্য জায়গায় গিয়ে মানববন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। যানজট সৃষ্টি হতে পারে, সেজন্যই তারা অন্য জায়গায় করতে বলেছিল। সেই জায়গায় তারা যায়নি। করতে দেয়নি ঘটনা সত্যি নয়।

তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে বিএনপির-জামায়াত কিংবা অন্য দল, যত ধরনের প্রোগ্রাম করতে চেয়েছে, আমরা কোনোটাতেই বাধা দেইনি। তারা মানববন্ধন, মিছিল, লংমার্চ, অবরোধ, ধর্মঘট করেছে। আমরা কোনোটিতেই বাধা দেইনি। গত ২৮ অক্টোবরও আমরা বাধা দেইনি। সেদিন দেখলাম সারা দেশ থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মীকে তারা ঢাকায় নিয়ে এসেছে। তারা বিরাট একটা সমাবেশ শুরু করলেন। বলেছিলেন, নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্যদিকে ফকিরাপুল চৌরাস্তা ক্রস করবেন না। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। তারা এর বাইরে যাবেন না। আমরা দেখলাম নাইটিঙ্গেল মোড় পার হয়ে গেছে। কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ও জাজেস কমপ্লেক্স পর্যন্ত। হাজার দুয়েক লোক সেখানে জটলা করছিল। ওইদিন আওয়ামী লীগ একটি শান্তি সমাবেশ করছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে। আমার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) এলাকার মহিলারা সেই শান্তি সমাবেশে যাচ্ছিলেন প্রধান বিচারপতির বাসার পেছন দিয়ে। সেখানে তাদের ধরে এমন পেটান পেটালো, তাদের কান্না যদি দেখতেন, তাদের আহাজারি যদি দেখতেন, তাহলে আপনারাও হয়তো অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। এরপরই দেখলাম তারা আরও মারমুখী হলেন। তারা প্রধান বিচারপতির বাসায় ঢুকে হামলা চালালেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটের নামফলক ভাঙচুর করলেন। ছোট গেটটা গুড়িয়ে দিলেন। ভেতরে ঢুকে ঢিল মারলেন। পাঁচ-ছয়শ লোক ঢুকে বিচারপতির বাসায় হামলা চালালেন। পুলিশ বাধ্য হয়ে তখন তাদের সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। আমরা দেখলাম, তারা জাজেস কমপাউন্ডের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ভাঙচুর করলেন। সাংবাদিকরা তাদের ঢিলে ও মারধরে আহত হলেন। কোথা থেকে তারা ব্যাগ ভর্তি করে ঢিল নিয়ে এলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির কর্মীরা পুলিশ হাসপাতালেও হামলা চালালেন। যেখানে সাংবাদিকরাও চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। একজন লোক হার্ট অ্যাটাক করলেন। তিনিও চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেও বিএনপির শত শত কর্মী যারা সবসময় এ ধরনের অশান্তি করেন, মারধর করেন, বোমাবাজি করেন, তারা ঢুকে গেলেন। বোমা মারতে মারতে হাসপাতালের স্পেশাল অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করলেন, সেবিকাদের মারপিট করলেন। সেখানেই শেষ নয়, তারপর দেখলাম কালভার্ট রোডের এক মাথায় ছাত্রদলের কয়েকজন চিহ্নিত নেতা পুলিশকে পেটানো শুরু করলো। পিটিয়ে হত্যা যখন নিশ্চিত হলো, তখন তারা আবার এসে তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করলো। এগুলো সবই ক্যামেরাবন্দি রয়েছে। তারা পুলিশের লাশের ওপর যেগুলো করলো সেগুলো আপনারা দেখেছেন। শুধু পুলিশ নয়, আনসারের ওপরও এমন বর্বর আক্রমণ হয়েছিল। সেদিন কয়েকশ পুলিশ আহত হলো। কয়েকশ সাংবাদিক আহত হলো। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা ধরেই নিয়েছিলাম বিএনপির নেতারা বলবেন, আমাদের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা এ কর্মটি করেছে। সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তা না করে তারা হরতাল ঘোষণা করলো দেশব্যাপী। ২৯ তারিখ সকাল বেলায় দেখলাম, নিরীহ হেলপারসহ একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিলো। আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো। একসঙ্গে কয়েকশ বাসের মধ্যে আগুন দিলো। যেখানে সেখানে পেট্রোল বোমা ছোড়া শুরু করলো। ২০১৪ সালে যেভাবে তারা আগুন দিয়ে আতঙ্ক শুরু করেছিল, অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তারই একটা পুনরাবৃত্তি ঘটালো। এগুলো যারা করে, তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। তারা নানা ধরনের কথা বলে। তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না। এসব শুনলে মনে হয় আমরা কোন যুগে বসবাস করছি। পুলিশ ও আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করেছেন।

হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি আপত্তি থাকে, যে দলই হোক, তবে তারা করতে পারবে না। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যদি মনে করে এখানে হলে পরিবেশ নষ্ট হবে, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীরও দেখার বিষয় রয়েছে।

যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। সেগুলো দেখে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে তাদের বদলি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পুলিশের প্রতি আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাচ্ছে, আমাদের পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিবে নির্বাচন কমিশন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে চিঠি আগে আসুক। নির্বাচন কমিশন এগুলো স্টাডি করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই একটা সিদ্ধান্ত আমাদের দিচ্ছে। সে সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে না এলে তো আমরা অ্যাডভান্স কিছু বলতে পারি না।