আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
অবরুদ্ধ গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত আল আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত বেড়ে অন্তত ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক হওয়ায় চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ঘাটতিতে নিহত বাড়তে পারে। যদিও এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই অস্বীকার করে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদী গোষ্ঠীর ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণকে দায়ী করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে গাজায় হামলা হওয়ার সময় হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি ছিলেন। ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ ভেবে হাসপাতালে আশ্রয়ও নিয়েছিলেন অনেক নারী ও শিশু। কিন্তু প্রাণে বাঁচতে পারেননি তারা। বিবিসি জানিয়েছে, জায়গায় জায়গায় মানুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উদ্ধার করার মতো লোকের সংকট দেখা দেয়।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা প্রধান আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নিহত কমপক্ষে ৫০০ হবে।
এমন হত্যাযজ্ঞে নিন্দার ঝড় বইছে আরব বিশ্বের পাশাপাশি অন্যান্য জায়গায়ও। ইসরায়েল বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে জর্ডান ও তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশে। একে বর্বর হামলা উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যায় আমরা ক্ষুব্ধ। অনেকে আহত হয়েছেন। এ ধরনের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।
একইভাবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইরান।
বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান আল আহলি আরব হাসপাতালে পৌঁছিয়েছেন। তিনি জানান, চার দিকে রক্তাক্ত, নিস্তব্ধ মানুষগুলো পড়ে আছেন। বিদ্যুৎ নেই, তাই অন্ধকারের মধ্যেই তাদের স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।
হাসপাতালের বাইরে লাশ পড়ে আছে, বিধ্বস্ত গাড়ি দেখতে পাচ্ছেন বিবিসি সংবাদদাতা।
কিছু ভিডিও বিবিসির কাছে এসেছে, যেগুলো যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটা বিরাট বিস্ফোরণ হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেছেন, হাসপাতালের একটা বড় হলে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েক শ’ মানুষ।
অসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েক শ’ মানুষ ধ্বংস্তূপে আটকিয়ে পড়েছেন।
আল-আহলি হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে তিনি। বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা মানবতার জন্য লজ্জাজনক।
গাজায় হাসপাতালে শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেসামরিক লোক নিহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় মরিয়া হয়ে হামলা করছে ইসরায়েল। তাতে সংঘাত ভয়ানক রূপ ধারণ করছে। সেটা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ের এরদোয়ান বলেন, ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল। গাজায় হাসপাতালে তাদের সবশেষ হামলা সেটারই উদাহরণ। সেখানে ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে আহ্বান জানান তিনি।
আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ইসরায়েলের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে ইসরায়েল। জঘন্য এ অপরাধের মাধ্যমে ইহুদী রাষ্ট্রটি আরেকবার বিশ্ব দরবারে তাদের অমানবিক ও পাশবিকতাকে তুলে ধরেছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এ হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’ উল্লেখ করেছে। গাজার হাসপাতালের হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে আরব লীগ। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেন, বিশ্বনেতাদের অবিলম্বে এ ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে।
এ হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠকে বসার অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আল–মিজান।
গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
এ ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য।
ইসরায়েলের এমন নির্বিচার বোমা বর্ষণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে হামাস। গাজার শাসকগোষ্ঠীর প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেন, এজন্য যুক্তরাষ্ট্রও দায়ী। ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, গাজার ওই হাসপাতালে তারা হামলা চালায়নি। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের নিক্ষেপ করা রকেট সেখানে আঘাত করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও একই দাবি করেছেন।