Dhaka মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে একটি রোগাক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সাতজন গাইবান্ধা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, আর বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আক্রান্তরা গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নেন।

গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান।

তারা উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক।

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজার রহমান বলেন, এই ১১ জন গত সোমবার একটি রোগাক্রান্ত গরুর মাংস কাটাকাটি করেন। পরে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়েছে এবং মাংসে পচন ধরেছে; বিশেষ করে হাত, নাক, মুখ, চোখে এসব উপসর্গ দেখা গেছে। তাদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান গুরুতর অসুস্থ। তারা বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আক্রান্ত মাহবুর রহমান বলেন, ১০-১২ দিন আগে আমার একটি গরু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয়ভাবে গরুটির চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে সোমবার গরুটি জবাই করা হয়। পরে আমরা যারা গরুটির মাংস কাটাকাটি করি, সবার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়েছে এবং মাংসে পচন ধরেছে।

এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স বলেন, অ্যানথাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় সম্প্রতি গরু-ছাগলের মাঝে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। এছাড়া জুলাই ও অগাস্টে পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারাও গেছেন। এখন সংক্রামক এই রোগের প্রাদুর্ভাব সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে কিশামত সদর গ্রামের সব গবাদি পশুকে অ্যানথ্রাক্স রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গা, তারাপুর ও সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায়ও অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া হয়েছে। বাকী এলাকাগুলোতে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, অ্যানথাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত পশু পরিচর্যা করলে বা সেই পশু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করলে মানুষের মাঝেও অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে মানুষ থেকে মানুষের মাঝে এ রোগ ছড়ায় না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজকুমার বিশ্বাস জানান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের উদ্যোগ সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও সামাজিক প্রতিনিধিগণকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। এতে অ্যনথ্রাক্স আক্রান্ত বা রোগাক্রান্ত পশুগুলোকে একত্রিত করে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ ‍যদি নিয়ম অনুসরণ না করে পশু জবাই, মাংস বেচা-কেনা ও সংরক্ষণ করে আর তা যদি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গাইবান্ধায় ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

প্রকাশের সময় : ১১:৫৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে একটি রোগাক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সাতজন গাইবান্ধা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, আর বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আক্রান্তরা গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নেন।

গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান।

তারা উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক।

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজার রহমান বলেন, এই ১১ জন গত সোমবার একটি রোগাক্রান্ত গরুর মাংস কাটাকাটি করেন। পরে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়েছে এবং মাংসে পচন ধরেছে; বিশেষ করে হাত, নাক, মুখ, চোখে এসব উপসর্গ দেখা গেছে। তাদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান গুরুতর অসুস্থ। তারা বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আক্রান্ত মাহবুর রহমান বলেন, ১০-১২ দিন আগে আমার একটি গরু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয়ভাবে গরুটির চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে সোমবার গরুটি জবাই করা হয়। পরে আমরা যারা গরুটির মাংস কাটাকাটি করি, সবার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়েছে এবং মাংসে পচন ধরেছে।

এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স বলেন, অ্যানথাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় সম্প্রতি গরু-ছাগলের মাঝে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। এছাড়া জুলাই ও অগাস্টে পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারাও গেছেন। এখন সংক্রামক এই রোগের প্রাদুর্ভাব সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে কিশামত সদর গ্রামের সব গবাদি পশুকে অ্যানথ্রাক্স রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গা, তারাপুর ও সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায়ও অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া হয়েছে। বাকী এলাকাগুলোতে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, অ্যানথাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত পশু পরিচর্যা করলে বা সেই পশু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করলে মানুষের মাঝেও অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে মানুষ থেকে মানুষের মাঝে এ রোগ ছড়ায় না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজকুমার বিশ্বাস জানান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের উদ্যোগ সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও সামাজিক প্রতিনিধিগণকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। এতে অ্যনথ্রাক্স আক্রান্ত বা রোগাক্রান্ত পশুগুলোকে একত্রিত করে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ ‍যদি নিয়ম অনুসরণ না করে পশু জবাই, মাংস বেচা-কেনা ও সংরক্ষণ করে আর তা যদি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।