স্পোর্টস ডেস্ক :
লেজেন্ডস ক্রিকেট লিগে (এলএলসি) বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ভারতের দুই সাবেক ক্রিকেটার এস শ্রীশান্ত ও গৌতম গম্ভীর। সাবেক পেসার শ্রীশান্ত দাবি করেন, গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ইন্ডিয়া ক্যাপিটালস ও গুজরাট জায়ান্টসের মধ্যে এলিমিনেটর ম্যাচে গম্ভীর তাঁকে ‘ফিক্সার’ বলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক ভিডিও-ও পোস্ট করেন তিনি। এবার লেজেন্ডস ক্রিকেট লিগের (এলএলসি) কমিশনার শ্রীশান্তকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
গুজরাটের শ্রীশান্তের একটি ওভারে পর পর চার এবং ছয় মারেন গম্ভীর। তখন শ্রীশান্ত তার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকেন। পরের বলটি যায় ফিল্ডারের কাছে। তখনই শ্রীশান্ত গম্ভীরকে কিছু একটা বলেন। তার পাল্টা জবাব দেন গম্ভীরও। বিষয়টি যখন আয়ত্তের বাইরে চলে যায়, তখন দুদলের ক্রিকেটার এবং আম্পায়াররা এসে তাদের আলাদা করে দেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, এই আইনি নোটিশে বলা হয়েছে সাবেকদের নিয়ে আয়োজিত টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটি খেলার সময় শ্রীশান্ত চুক্তির ধারা ভেঙেছেন। গম্ভীরের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার পর ভারতের সাবেক ওপেনারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছেড়েছেন শ্রীশান্ত। সেসব ভিডিও তুলে নিলেই কেবল শ্রীশান্তের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসা সম্ভব বলে জানিয়েছে এলএলসি।
সে ম্যাচের আম্পায়াররাও শ্রীশান্ত-গম্ভীরের বাগ্বিতণ্ডা নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, কিন্তু সেখানে গম্ভীর শ্রীশান্তকে ‘ফিক্সার’ বলেছেন, এমন কোনো কিছুর উল্লেখ নেই।
ম্যাচের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে শ্রীশান্ত। সেখানে গম্ভীরের সঙ্গে তার কি হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের এই সাবেক পেসার। ভিডিওতে শ্রীশান্ত বলেন, ‘মিস্টার ফাইটারের সঙ্গে যা হয়েছে তা নিয়ে গোটা বিষয়টা পরিষ্কার করে দিতে চাই। গম্ভীর এমন একজন যে কোনও কারণ ছাড়াই সব সময় ঝগড়া করে। এমনকি তিনি তাঁর সতীর্থ সিনিয়র খেলোয়াড়, বীরু ভাই (শেবাগ) থেকে আরও অনেককেই সম্মান করেন না। আজও ঠিক সেটাই হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে একটানা কিছু বলে যাচ্ছিল যেটা খুব খারাপ। গৌতম গম্ভীরের মতো মানুষের মুখ থেকে সেটা আশা করা যায় না।’
ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, ‘আমার কোনও দোষই ছিল না। মিস্টার গম্ভীর যা করেছেন তা খুব তাড়াতাড়ি আপনারা জানতে পারবেন। যে শব্দ উনি ক্রিকেট মাঠে ব্যবহার করেছেন, তা কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমার পরিবার, আমার রাজ্য, প্রত্যেককে অনেক কিছু সইতে হয়েছে। আপনাদের সমর্থনের জোরেই আমি অনেক লড়াই লড়েছি। এখন কিছু মানুষ কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে টেনে নীচে নামাতে উদ্যত হয়েছে। ও এমন কথা বলেছে যেটা বলা উচিত হয়নি।’
গম্ভীর অবশ্য সরাসরি কিছু বলেননি। ভারতের হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই ওপেনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটু রহস্য রেখে লিখেছেন, ‘বিশ্ব যখন মনোযোগ চাইছে, তখন হাসতে থাক।’
এদিকে শ্রীশান্তের স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, শ্রীর (শ্রীশান্ত) কাছ থেকে শুনে চমকে গেলাম, একজন খেলোয়াড়, যিনি কি না ভারতের হয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন, তিনি এই পর্যায়ে নেমে এসেছেন। সেটাও অবসর নেওয়ার দীর্ঘদিন পর। মাঠে এমন কিছু দেখার পর বোঝা যায়, কে কীভাবে বেড়ে উঠেছে। জঘন্য, সত্যিই জঘন্য।
এলএলসি এর আগে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে এবং আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ‘বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা ঘটনাটির মাধ্যমে আচরণবিধি ভাঙা হয়েছে। যাঁরা এটা ভেঙেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিগের আচরণবিধি এবং নৈতিকতা কমিটির মাধ্যমে নিয়মগুলো পরিষ্কারভাবে বলা আছে।
২০১৩ সালে আইপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে রাজস্থান রয়্যালসের তিন খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, শ্রীশান্ত তাঁদের একজন। ২০১৯ সালে এসে সুপ্রিম কোর্ট শ্রীশান্তের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেন। ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সাত বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। ভারতের হয়ে একসঙ্গে ৪৯টি ম্যাচ খেলেছেন শ্রীশান্ত ও গম্ভীর। দুজনই ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য।