নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত ১০ বছর ফ্যাসিবাদ বিরোধী দৃশ্যমান কিছু করেনি জামায়াত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর আইডিইবি মিলনায়তনে মউশিক কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদের এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১০ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী দৃশ্যমান কিছু করেনি জামায়াত। এতদিন পিআরের কথা বলে এখন সুর নরম করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার কথা ইসলাম সমর্থন করে না।
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি মহল, তারা কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতেই পারছিল না। আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদের সুযোগ করে দেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার। তারা আমাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। আমরাও তাদের নিয়ে কাজ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে শুনতে পাই ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকেছিল। শুনেছি, আমার জানা নেই। আমরা সরাসরি সামনাসামনি লড়াই করেছি। আমাদের ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমাদের ২০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১৭০০ মানুষকে, নেতা, আমাদের এমপিসহ অনেককে গুম করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০০, ৩০০, ৪০০ মামলা নিয়ে আছি।
তিনি বলেন, ‘জামায়াতের টিকিট কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে, এটা কোথায় আছে আমাকে বলুক। দেখিয়ে দিক কোথায় আছে। এটা ঠিক না। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়া, এটা কখনোই ইসলাম এই কথা বলে না।’
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আলেম ওলামারা ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছিলেন দেখে দুঃখ হয়েছিল বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ১৫/১৬ বছর ধরে দেখেছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা কী করে প্রতিটি মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমার ধর্ম পালনের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। তারপর আবার দাবি করে যে তারা ইসলামের পক্ষে কাজ করেছে। আরও দুঃখ হয় তখন, যখন দেখি আমাদের দেশেরই কিছু আলেম ওলামারা তার সঙ্গে মিটিং করে তাকে কওমি জননী উপাধি দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ১৫/১৬ বছর দেখেছেন, কিভাবে একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে। সব জায়গায় সে তার নিজের লোক, তার দলের লোক, তার নিজের লোককে বসানোর চেষ্টা করেছে। এ বসানোর চেষ্টা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন তো সবচেয়ে মর্যাদাশীল ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে যদি আপনার দলীয় লোককে বসানো হয়, পার্টির লোককে বসানো হয়, যারা বাইরে ইসলামের কথা বলবে কিন্তু মুখে ইসলাম বিশ্বাসই করে না। তাহলে তো সেটা সঠিকভাবে চলবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৫/১৬ বছরের দানবীয় একটা শাসন, সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। আপনাদের আলেম ওলেমা অনেকে মারা গেছেন, জেল খেটেছেন, ফাঁসি হয়েছে, জঙ্গি চিহ্নিত করে বছরের পর বছর জেলে থাকতে হয়েছে, আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, আমাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। সেই অবস্থায় আমরা সকলে আন্দোলন করে আমাদের ছেলেরা জীবন দিয়ে, প্রাণ দিয়ে, একটা পরিবর্তন নিয়ে আসছেন। এই পরিবর্তনটাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে আমরা দেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পার্মানেন্ট করতে চাই।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন হবে এবং সেটা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনের জন্য তারা আগে দেখেছেন সংস্কার কমিশন করা হয়েছিল। সংস্কার কমিশন খুব বড় বড় পন্ডিতরা দেশে এসেছে, বিদেশ থেকেও এসেছে। তারা ৯ মাস ধরে আলাপ-আলোচনা করেছে। অনেক সংস্কারের কথা বলেছে। সবশেষে যেটা বলেছে, এটা আমরা বুঝি না। দেশের মানুষ অনেকেই বুঝতে পারে না।
মানুষ পিআরের সঙ্গে পরিচিত না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বোঝে ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে তার মার্কা থাকবে, মার্কে আমি ভোট দেব৷ সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি। এখন আপনি এটাকে পরিবর্তন করবেন, তার জন্য গণভোট করবেন, গণভোটে হ্যাঁ-না প্রশ্ন থাকবে। গণভোটের চারটা প্রশ্ন থাকবে। চারটা প্রশ্ন একটা গণভোটের ব্যালটে, এটা মানুষ এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারছে না৷ কেউ বুঝতে পারছে না। শেষদিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না। দেখবেন শেষদিন পর্যন্ত কেউ বুঝতেও পারবে না।
‘একটা রাজনৈতিক দল সমানে চিৎকার করছে। পিআর দিতে হবে। পিআর দিতে হবে। পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুংকার টুংকার হয়েছে তাই না? এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের জন্য সব চতুর্দিকে দৌড়, ঢাকডোল চলছে। তাইতো? এই জিনিসগুলো ঠিক না। মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকলে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ছাত্র-জনতা যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।
জুলাই সনদে অনেক কিছু এসেছে যেটাতে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার কথা ইসলাম সমর্থন করে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণভোট নিয়ে মানুষ এখনো বুঝতে পারেনি। পিআর দেশের মানুষ বোঝে না। পিআরের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। গণভোটের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’- মানুষ বুঝতে পারছে না। শেষ দিন পর্যন্তও বুঝতে পারবে না।
তিনি বলেন, ১৫-১৬ বছর একটা ভয়াবহ দানবীয় সরকার ছিল। নিজের লোক, দলের লোক বসাতে গিয়ে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। শহীদ জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদেরকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, এতো মুসলমানের দেশ, এতো মাদ্রাসা, মসজিদ, এতো ইমাম, উলামা, বিদ্বান পণ্ডিতরা থাকা সত্ত্বেও দেশে এতো অন্যায় কেন? এতো পাপ কেন? কেন মানুষ এতো চুরি করে? এতো দুর্নীতি করে? আমার সম্পদ বিদেশে পাচার করে দেই? আমি বুঝতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, একটি মসজিদ তৈরির ব্যাপারে আমাদের মানুষের যে আগ্রহ-সেই আগ্রহ কোথায় যায় যখন একটি ভালো মানুষ তৈরির কথা আসে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজের খতিব ও ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















