নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণভোটের দাবি জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক যুব ঐক্য আয়েজিত গুণমানসম্পন্ন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, অধ্যাদেশ জারি করে ইসিকে গণভোট আয়োজনের নির্দেশ দিতে পারে সরকার। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের সাথে গণভোটের আয়োজন হলে সময় সাশ্রয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হবে না। গণভোটের বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। তবে তা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই করা সম্ভব। পাশাপাশি পিআর ইস্যুতেও দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনটি ব্যালটে ভোট দেয়া জনগণ দুটি ব্যালটে সংসদ ও গণভোটে অংশ নিতে প্রস্তুত। বিষয়টি নিয়ে যারা জটিলতা তৈরি করতে চান তাদের সুবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশা করেন তিনি। সুবহে সাদিকে ফ্যাসিবাদি গোষ্ঠীর মিছিলের ছবি অথবা দিল্লি বা ফ্রান্স থেকে পাঠানো বার্তা জনগণ পাত্তা দেয় না।
এ সময় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দায়িত্ব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দুটি ব্যালট দিলে জাতি বিভ্রান্ত হবে এমন কথা বলা হচ্ছে। অথচ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনটি ব্যালটে নির্বাচন হয়। সুতরাং জনগণ দুটি ব্যালটে সংসদ ও গণভোটে অংশ নিতে প্রস্তুত। শুধু নির্বাচন কমিশনকে প্রচারণা চালাতে হবে। গণভোট হবে একই দিনে। এর সুবিধা বলেছি এজন্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। আবার গণভোটের জন্য যেন একই আয়োজন করতে না হয়। এতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার যে কোনো প্রয়াস এড়ানো যাবে। যদিও কেউ কেউ এটা চায় না। আসলে নির্বাচন চ্যালেঞ্জ নয়, যারা নির্বাচন বিলম্ব করতে চায় সেটাই চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখলে নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট থাকবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চাইলে ফ্যাসিস্টদের বিচার ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে তা ভবিষ্যৎ জন্য হবে ভয়ঙ্কর চর্চা হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। তবে ঐক্য ধরে রাখলে তারা নির্বাচন বানচাল করার কোনো সুযোগ পাবে না। তাদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা ভবিষ্যতের রাজনীতিকে আরও ভয়ংকর করে তুলবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আগামী নির্বাচন নিয়ে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার বাস্তবতা স্বীকার করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণই আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীও নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন বিলম্বের যেকোনো আশঙ্কা এড়ানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, বরং যারা নির্বাচন বিলম্ব করতে চায় তারাই চ্যালেঞ্জ। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত, সরকারের প্রতি এ আহ্বানও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
এ সময় সুবহে সাদিকের ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর মিছিল কিংবা দিল্লি ও ফ্রান্স থেকে পাঠানো বার্তা জনগণ গুরুত্ব দেয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘জনগণ সুষ্ঠু ভোটের জন্য মুখিয়ে আছে। কেউ অনিয়ম করতে চাইলে জনগণই প্রতিহত করবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।’
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন,‘নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের প্রথা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জনগণ ৫ আগস্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশে ফ্যাসিবাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক বৈধতার জন্য এটা বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।’
অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে নির্বাচন হবে কি হবে না—এই প্রশ্ন করার পরিবেশ নেই। নির্বাচন হবেই।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সংস্কারের পথে হাঁটেনি, তাই সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা সংস্কারের পথে হেঁটে ঝামেলা বাড়িয়ে ফেলেছি।
তিনি বলেন, ৮৬টা সংস্কার যা সমাধান হয়েছে সেখানে পিআর নেই। সংস্কার কমিশনে পিআর নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেখানে নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে গণভোট। ভোট দুটা না তিনটা জোটে হবে তা নির্ধারণ হয়নি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, নাহিদ ইসলাম (এনসিপি আহ্বায়ক) যাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছে, তারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের কী বোঝে, তাদের সন্তানরা? নাহিদ ইসলামরা ভুল ছিলেন।
তিনি বলেন, কোন উপদেষ্টা জুলাইয়ের গাদ্দার—তাদের নাম প্রকাশ করুন। যে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন, সেই চুক্তি মানছে না। তারা কি নাহিদের কথা শুনছে না?
রাশেদ খান বলেন, ‘সংস্কারের জন্য কি আমাদের আবার জীবন দিতে হবে? আগের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার সংস্কার করতে পারে নাই।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বলেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচনের ভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ভোটে জামায়াত রাজি হয় নাই। ঐকমত্য কমিশনের ভেতরে ইতিবাচক থাকলেও বাইরে গিয়ে পরিবর্তন হয়েছে জামায়াতের।
তিনি বলেন, নিম্নকক্ষে পিআর দেশে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পিআর নিয়ে আন্দোলন ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিচ্ছে। বিভাজন নিয়ে নির্বাচনে গেলে তা বাঞ্চাল করে দেবে আওয়ামী লীগ ও ভারত।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন,‘নির্বাচন নিয়ে জোট ও তোড়জোড় চলছে। ইসলামী দলগুলো এক বাক্সে ভোট নিতে চায়। ইসলামী দলগুলোতে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। বামপন্থী দলগুলো জোট করার চেষ্টা করছে। মধ্যপন্থারাও চেষ্টা করছে জোট করার। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। অনিশ্চিতার দিকও আছে। ঝামেলা মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা নেই। আওয়ামী লীগ ও হিন্দু ভোটারদের নিয়ে টানাটানি চলছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবে, আর আওয়ামী লীগ লোকদের দলে ভেড়াবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেন, ‘নির্বাচনী মিছিলে আওয়ামী লীগের লোক আছে—এই অভিযোগে মারামারি হবে। যা মোকাবিলায় চিন্তা করা উচিত।’ তার মতে, বিএনপি-জামায়াতের ভেতরেও বেশি মারামারি হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে আদৌই আর নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
																			
										
																নিজস্ব প্রতিবেদক								 























