Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক, দূরপাল্লায় যাত্রী সংকট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ১১:০৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৯৮ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা সারাদেশব্যাপী লকডাউন কর্মসূচির মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় টার্মিনালগুলো প্রায় যাত্রীশূন্য পড়ে আছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, শাহবাগ, ফার্মগেট, সাইন্সল্যাব ও কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। বেশিরভাগেরই সড়কেই অটোরিকশার আধিক্য গেছে।

যেকোনও অপতৎপরতা মোকাবিলায় মাঠে রয়েছে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা জামায়াতসহ ৮ দল ও এনসিপি। অবশ্য বিএনপি সরাসরি মাঠে না থাকলেও যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সকাল থেকে প্রায় সব ধরনের গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে খুবই কম।
রাজধানীর গভঃ ল্যবরেটরি স্কুলের এক অভিভাবক জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সন্তানকে স্কুলে দেননি।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত রোগীর স্বজন আজিজুল হক সুজন বলেন, মায়ের অসুস্থতা নিয়ে সকালে উত্তরা থেকে রওনা হয়েছি। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হইনি। তারপরও এক ধরনের শঙ্কা কাজ করেছে।

গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারম্যান আলী আজগর বলেন, আজ যাত্রী অনেক কম। সকাল ৮টার মধ্যে সাধারণত অন্তত ৫টি বাস ছাড়ে, সেখানে মাত্র ২টি বাসে যাত্রী পেয়েছি—দুটোই ফরিদপুরের। বরিশাল, সাতক্ষীরা লাইনে কোনো যাত্রী পাইনি। গতকাল বিকাল থেকেই যাত্রী কম।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা রুবেল বলেন, আজ যাত্রী কম। গতকাল রাত থেকেই কম পাচ্ছি। আজকের ভোরের একটি গাড়ি বন্ধ রেখেছি।

সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সজিব বলেন, ‘আমাদের যশোরের সকাল সাড়ে ৯টার গাড়ি বন্ধ রেখেছি, যাত্রী কম। সকালের দুইটি গাড়ি ছাড়লেও যাত্রী ছিল মাত্র চার-পাঁচজন।

রংপুরগামী যাত্রী সুলায়মান হোসেন জানান, যাত্রী কম থাকায় সকালের গাড়ি ছাড়েনি, ৯টায় ছাড়বে। দুই ঘণ্টা ধরে টার্মিনালে বসে আছি। ৯টার বাস ঠিক সময়ে ছাড়বে কি–না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

ভেড়ামারাগামী যাত্রী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গাড়ি ৮টায় ছাড়ার কথা, কিন্তু এখনও আসেনি। যাত্রী কম বলে সময় লাগছে হয়তো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তাই হয়তো যাত্রী কম। কিছুটা ভয় লাগছে, কিন্তু জরুরি কারণে যেতে হচ্ছে। বেড়াতে এসেছিলাম, এখন বাড়ি ফিরছি।’
ফরিদপুরগামী যাত্রী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জরুরি কাজ থাকায় বের হয়েছি। রাস্তায় গাড়ি অনেক, কিন্তু মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে—কখন কী হয় বলা যায় না। এখন আবার গাড়ি পোড়ানোর রাজনীতি শুরু হয়েছে, মানুষের জীবনের দাম যেন নেই।’

গোমতি এক্সপ্রেস-এর সুপারভাইজার আমির হামজা বলেন, ‘যাত্রী নেই বললেই চলে। গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসীরা বেশ কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে এখনও এক গাড়িরও পুরো যাত্রী হয়নি।’

একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ টার্মিনাল এলাকাতেও। টার্মিনালে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু বেশিরভাগই ফাঁকা।

তিশা এক্সপ্রেস-এর সুপারভাইজার নাহিদ হাসান বলেন, ‘সাধারণ দিনে সকাল ৯টার আগেই ১০-১২টা গাড়ি ছেড়ে যায়, আর লাকসাম থেকেও গাড়ি আসে। আজ যাত্রী না থাকায় এখনও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।’

এদিকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নজরদারি দেখা গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ছাত্রদলের কর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ ছাড়া প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দল মোতায়েন রয়েছে, যাতে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি, তবুও ৩ মাসে তিতাস গ্যাসের লোকসান ২৪৯ কোটি

গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক, দূরপাল্লায় যাত্রী সংকট

প্রকাশের সময় : ১১:০৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা সারাদেশব্যাপী লকডাউন কর্মসূচির মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় টার্মিনালগুলো প্রায় যাত্রীশূন্য পড়ে আছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, শাহবাগ, ফার্মগেট, সাইন্সল্যাব ও কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। বেশিরভাগেরই সড়কেই অটোরিকশার আধিক্য গেছে।

যেকোনও অপতৎপরতা মোকাবিলায় মাঠে রয়েছে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা জামায়াতসহ ৮ দল ও এনসিপি। অবশ্য বিএনপি সরাসরি মাঠে না থাকলেও যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সকাল থেকে প্রায় সব ধরনের গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে খুবই কম।
রাজধানীর গভঃ ল্যবরেটরি স্কুলের এক অভিভাবক জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সন্তানকে স্কুলে দেননি।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত রোগীর স্বজন আজিজুল হক সুজন বলেন, মায়ের অসুস্থতা নিয়ে সকালে উত্তরা থেকে রওনা হয়েছি। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হইনি। তারপরও এক ধরনের শঙ্কা কাজ করেছে।

গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারম্যান আলী আজগর বলেন, আজ যাত্রী অনেক কম। সকাল ৮টার মধ্যে সাধারণত অন্তত ৫টি বাস ছাড়ে, সেখানে মাত্র ২টি বাসে যাত্রী পেয়েছি—দুটোই ফরিদপুরের। বরিশাল, সাতক্ষীরা লাইনে কোনো যাত্রী পাইনি। গতকাল বিকাল থেকেই যাত্রী কম।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা রুবেল বলেন, আজ যাত্রী কম। গতকাল রাত থেকেই কম পাচ্ছি। আজকের ভোরের একটি গাড়ি বন্ধ রেখেছি।

সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সজিব বলেন, ‘আমাদের যশোরের সকাল সাড়ে ৯টার গাড়ি বন্ধ রেখেছি, যাত্রী কম। সকালের দুইটি গাড়ি ছাড়লেও যাত্রী ছিল মাত্র চার-পাঁচজন।

রংপুরগামী যাত্রী সুলায়মান হোসেন জানান, যাত্রী কম থাকায় সকালের গাড়ি ছাড়েনি, ৯টায় ছাড়বে। দুই ঘণ্টা ধরে টার্মিনালে বসে আছি। ৯টার বাস ঠিক সময়ে ছাড়বে কি–না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

ভেড়ামারাগামী যাত্রী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গাড়ি ৮টায় ছাড়ার কথা, কিন্তু এখনও আসেনি। যাত্রী কম বলে সময় লাগছে হয়তো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তাই হয়তো যাত্রী কম। কিছুটা ভয় লাগছে, কিন্তু জরুরি কারণে যেতে হচ্ছে। বেড়াতে এসেছিলাম, এখন বাড়ি ফিরছি।’
ফরিদপুরগামী যাত্রী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জরুরি কাজ থাকায় বের হয়েছি। রাস্তায় গাড়ি অনেক, কিন্তু মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে—কখন কী হয় বলা যায় না। এখন আবার গাড়ি পোড়ানোর রাজনীতি শুরু হয়েছে, মানুষের জীবনের দাম যেন নেই।’

গোমতি এক্সপ্রেস-এর সুপারভাইজার আমির হামজা বলেন, ‘যাত্রী নেই বললেই চলে। গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসীরা বেশ কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে এখনও এক গাড়িরও পুরো যাত্রী হয়নি।’

একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ টার্মিনাল এলাকাতেও। টার্মিনালে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু বেশিরভাগই ফাঁকা।

তিশা এক্সপ্রেস-এর সুপারভাইজার নাহিদ হাসান বলেন, ‘সাধারণ দিনে সকাল ৯টার আগেই ১০-১২টা গাড়ি ছেড়ে যায়, আর লাকসাম থেকেও গাড়ি আসে। আজ যাত্রী না থাকায় এখনও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।’

এদিকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নজরদারি দেখা গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ছাত্রদলের কর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ ছাড়া প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দল মোতায়েন রয়েছে, যাতে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।