নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া আওয়ামী লীগ কোনো দিন সরকার গঠন করেনি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই সবকিছুর সংস্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের ভোটেই বারবার নির্বাচিত হয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগ কোনোদিন, মানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া কিন্তু সরকার গঠন করে নাই। আর আমরা দেশের নির্বাচনকে জনগণ যাতে তাদের ভোটের অধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য নির্বাচনি আইন, আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে যতগুলি সংস্কার, সবগুলি সংস্কার কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই করা হয়েছে শুধুমাত্র জনগণের ভোট নিশ্চিত করবার জন্য। রাতের অন্ধকারে অস্ত্র তুলে ক্ষমতা দখল করে আবার জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচন। আমরা রূপকল্প-২১ ঘোষণা দেই। আমরা সেই নির্বাচনে এককভাবে আওয়ামী লীগ ২৩৩টা সিটে আমরা জয়লাভ করি। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টা সিট। আর অন্যান্য সব দল মিলে বাকি সিট। এইভাবে আমরা সরকারে আসি। ২০১৪-এর নির্বাচনে আমরা জয়ী হই। তখনও নির্বাচন বানচালের অনেক চেষ্টা করা হয়; অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হয়। এরপর আবার ২০১৮ সালেও নির্বাচনের একই ঘটনা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে দেখে এখন আর কেউ বলতে পারবে না এ দেশ দরিদ্র দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, হাত পেতে চলার দেশ। আমরা এখন একটা মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে এত উন্নতি হয়েছে। ২০৪১ মধ্যে দেশকে স্মাট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ভোট চুরির সংস্কৃতি শুরু করে জিয়াউর রহমান। জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। বিএনপির সময় সাক্ষরতার হার ছিল ৪৭ শতাংশ। আর আওয়ামী লীগ সরকার সেটি নিয়ে এসেছে ৭৬ শতাংশ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে ভোট চুরির সংস্কৃতি শুরু করে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি আরও বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তাদের ক্ষমতায় বসায় জিয়া।
দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার চলার পথ মসৃণ ছিল না। বারবার আমার ওপর আঘাত এসেছে। তারপরেও আমি দমে যায়নি। আমার লক্ষ্য ছিল স্থির। তা হলো দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। কারণ বাংলাদেশের মানুষকে হৃদয়ে ধারণ করি। মানুষের জন্যই কাজ করি।
সরকারপ্রধান বলেন, জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি জারি করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে। বিচারের হাত থেকে তাদেরকে মুক্ত রাখে। যুদ্ধাপরাধী, নারী ধর্ষণকারী, লুটপাটকারী, গণহত্যাকারী, অগ্নিসংযোগকারী, যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হয়েছিল তাদেরকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি, পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল তাদেরকেও ফিরিয়ে এনে ক্ষমতায় বসায়।
তিনি বলেন, ভোট চুরির যে কালচার, ডাকাতির যে কালচার, সেই কালচার তারা (বিএনপি) শুরু করে। আমি ধন্যবাদ জানাই উচ্চ আদালতকে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য।
নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, হয়তো দুই একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ সময় ঘোষণা দেবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত রয়েছেন সবাইকে এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যারা সংযুক্ত রয়েছেন, যাদের আমি দেখতে পাচ্ছি, আর যাদের দেখতে পাচ্ছি না সবার জন্য আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। চোখে না দেখলেও মনে রাখবেন, বাংলাদেশের জনগণ যে যেখানে থাকেন আপনারা আমার হৃদয়ে আছেন। আমার হৃদয়ে আপনাদেরকে ধারণ করি। আপনাদের কল্যাণে আমি কাজ করতে চাই।
প্রসঙ্গত, ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।