নিজস্ব প্রতিবেদক :
কেউ গণতন্ত্র নষ্ট করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার (১৯ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্কটল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তার বৈঠক হয়।
তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছি, আপনারা ভালো দিনে এসেছেন। আমরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবো। আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক যা যা করার, বায়োমেট্রিক ব্যালট, আইডি, স্বচ্ছ ব্যালট বক্স ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছি। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ অবাধ নির্বাচনের। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি সরকার পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার, সেটি হচ্ছে নির্বাচন। আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাই। কেউ গণতন্ত্র নষ্ট করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আব্দুল মোমেন উল্লেখ করেন, আমাদের দেশের অনেকগুলো দল, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়নি, তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন অজুহাত খোঁজে। গেল ২৮ অক্টোবর যা আমরা দেখেছি। তারা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার নামে যে কাণ্ড করেছেন; তারা বিচারকদের আক্রমণ করেছেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্কটল্যান্ডের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছে। তাদের মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য। একজন কনজারভেটিভ, আরেকজন লেবার ও তৃতীয়জন গ্রিন পার্টির সদস্য। তিন দলের তিনজন একসঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এমন হবে বলে আশা করছি।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কারো মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি গর্হিত কাজ করে, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব, অ্যাকশন নিচ্ছিও।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা আমার বলা উচিত না, আপনি যদি রাজনীতিবিদ হোন, তাহলে এক দল না এক দল আপনার সম্পর্কে বক্তব্য দেবে। আমরা যারা পাবলিক লাইফে, আমাদের সম্পর্কে পাবলিক বক্তব্য দেবে। আর যদি আপনি রাজনীতি থেকে সরে থাকেন, তাহলে কেউ আপনাকে এসব নিয়ে তিরস্কার করবে না। আর কে কী কোথায় বলল, এভিডেন্স তো আমাদের দেন নাই। আমাদের আগে এভিডেন্স প্রয়োজন।
ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশে আমরা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করি, ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব মিডিয়ায় বিশ্বাস করি। কারো মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি গর্হিত কাজ করে, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব, অ্যাকশন নিচ্ছিও।
তিনি বলেন, আমরা সব কূটনীতিককে নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা অক্ষরে অক্ষরে ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলি, আপনারাও এটা মেনে চলেন। আপনারা এসব ভায়োলেট করে আবার বড় বড় কথা বলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্যাংশনের দেশ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা তো একদিনে আমেরিকা হতে পারব না। আমাদের ইচ্ছে ওনাদের মতো ভালো হতে। কিন্তু আমরা একদিনে হতে পারব না।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মান উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি একটি নতুন স্মারকপত্র স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্মারকপত্র প্রকাশের পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার বক্তব্যে কল্পনা আক্তার নামে বাংলাদেশের এক গার্মেন্টস শ্রমিক ও নেত্রীর কথা উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে মোমেন বলেন, ওরা স্যাংশনের দেশ। ওরা দিতে পারে। ওরা বড় লোক। কিন্তু আমরা আমাদের মতো কাজ করব। বাস্তবতার নিরিখে আমরা কাজ করব। আমরা তো একদিনে আমেরিকা হতে পারব না। ওনারা (যুক্তরাষ্ট্র) যাদের টাকাটুকা দিয়ে রাখে তারা মনে করে একদিনে বাংলাদেশ আমেরিকা হয়ে যাবে। হঠাৎ করে ওনারা বড় লোকের কথা বললে তাজ্জবের বিষয় মনে হয়।
আমেরিকার শ্রমিক ইতিহাস টেনে ড. মোমেন বলেন, আমেরিকার এ অবস্থায় আসতে আড়াইশ বছরের মতো সময় লেগেছে। আমেরিকাতে এক সময় শ্রমিকরা ক্রীতদাস ছিল। আব্রাহাম লিংকনের সময় এটা বাদ পড়ে। এটা বাদ পড়ায় আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ হয়। ১৯০০ শতকের শুরুতে আমেরিকায় প্রতিটি শ্রমিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করত। ২০ সেন্ট মাত্র মজুরি পেত। সেই ইতিহাস তো আমরা ভুলিনি।
আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তুলনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে আমরা জানি। সে দিক থেকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পদক্ষেপে শ্রমিকরা আমেরিকার তুলনায় অনেক ভালো। এখন তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) জনপ্রতি আয় ৬৫ হাজার ডলার। আর আমার ২ হাজার ৮০০ ডলার। সেই তুলনায় আমার শ্রমিকরা অনেক ভালো। তাদের আমাদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসবে কিনা- জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমি জানি না। এটা অন্য দেশের এখতিয়ার।
তিনি আরো বলেন, আজ আমার সঙ্গে তাদের জলবায়ু, রোহিঙ্গা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি একটি ভালো আলোচনা ছিল। তারা শ্রম ইস্যু নিয়েও কথা বলেছেন। আমি বলেছি, শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন শ্রমিকদের বেতন ছিল ৮০০ টাকা। পরে সেটা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে। সেটা আবার বাড়িয়ে আট হাজার ৩০০ ও এবার সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে।
পৃথিবীর কোনো দেশে শ্রমিকদের এত বেশি বেতন বাড়ে না মন্তব্য করে এর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের বাসস্থান, চিকিৎসা সহায়তা ও গর্ভবতীদের জন্য ছয়মাসের ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।