Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে দেশে স্বাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

রোববার (১১ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলা হলে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২২ প্রদান করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি আজ আশাবাদী এদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিয়ে যেতে পারবে না। আবার অন্ধকার যুগে নিয়ে যেতে পারবে না। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই এদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তারপর ক্ষমতায় আসার পর উদ্যোগ নেয়া হয়। আজকে কিন্তু আমরা সেই কাজ করতে সফল হয়েছি; আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কারণ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা যদি তাল মিলিয়ে চলতে না পারি, তাহলে চলব কীভাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম বলেই মহামারি করোনা মোকাবিলা করা সহজ হয়েছে। এমন কি স্কুল-কলেজ যখন সব বন্ধ রাখা হয়, তখন অনলাইনে বিশ্ব মহামারি করোনার মধ্যে ‘আমার ঘর আমার স্কুল’ এ নীতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হয়। আজকে আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধা বিকাশের সুযোগ পেয়েছে। তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী যে শক্তিটা আছে সেটা প্রকাশিত হচ্ছে। আজ তারা যে বক্তব্য দিয়েছে, শুনে আমার মন ভরে গেছে।
নিজের পথচলা সহজ ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা, অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। যার ফলে আজকে বলতে পারি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি শাসনামলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির সময় ক্যাম্পাসে ছিল সেশনজট, অস্ত্রের ঝনঝনানি। বোমা গুলির শব্দ না শুনে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘুমাতে পারতো না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাঙ্গনে আর এমন অবস্থা নাই।

তিনি বলেন, বিশ্ব পরিবর্তনশীল, এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আজকে প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, গবেষণার যুগ। আমি ২১ বছর পর যখন ক্ষমতা পেলাম, তখন আমি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিলাম। একটা প্রজেক্ট নিয়েছিলাম নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। শিক্ষার্থীরাই শুধু শিক্ষা পাবে তা না, বয়স্করাও যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, এক একটা জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা দিয়ে অনেকটা সফল হয়েছিলাম। পাঁচ বছর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ প্রকল্প বাদ করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষিতে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ততটা করতে পারছি না। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এখন আমরা স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ সবদিক থেকে এগিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যখাতের গবেষণায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি তখন দেখি সেশনজট। ৬, ৭, ৮ বছর করে সেশনজট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। আমাদের বহু বন্ধু শিক্ষক ছিল, তারা বলতো আমাদের গুলির আওয়াজ আর বোমের আওয়াজ না শুনলে ঘুমই আসে না। এটাই আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। আমরা এটুকু দাবি করতে পারি ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর সেই পরিবেশ থেকে শিক্ষাঙ্গনকে আমরা মুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নতি হয়েছে। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ যখন খাদ্যে বেশি কষ্ট ভোগ করছে, হ্যাঁ আমাদের এখানেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে অন্তত খাবার পাওয়া যাচ্ছে। এটার কারণ আমি প্রথমবার সরকারে এসেই গবেষণার জন্য আলাদা করে টাকা দিয়েছিলাম। প্রথমে দিলাম ১২ কোটি টাকা। পরে বাজেটের সময় ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখলাম শুধু গবেষণার জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে চলি না। মাথা উঁচু করে চলি, মাথা উঁচু করে চলব। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই বিশ্বকে আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাই হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। জাতির পিতা বলেছিলেন, শিক্ষায় যত অর্থই ব্যয় হোক, এটা হচ্ছে বিনিয়োগ। শিক্ষিত জাতি ছাড়া দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না। তার জন্য আমাদের সব উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়ে যাচ্ছি।

কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রাপ্ত মেধাবীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১’র বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, অর্থাৎ স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি। আজকের ছেলে-মেয়েরাই ভবিষ্যৎ এবং ২০৪১’এ তারাই আমার মতো প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা বড় বড় উচ্চপর্যায়ে যাবে, দেশ চালাবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না। আরও কর্মসূচি তৈরি করে রেখে যাচ্ছি, সেটা হচ্ছে ডেলটা প্ল্যান।

তিনি বলেন, জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

কবি সুকান্তের ভাষায় শেখ হাসিনা বলেন, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় মাথায় রাখতে হবে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা উঁচু করে চলি, মাথা উঁচু করে চলব। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই বিশ্বকে আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা এভাবেই এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথমে সরকারে এসে দেখি এখানে গবেষণার জন্য কোনো ফান্ড নেই। কোনো টাকা নেই, গবেষণার দিকে কারও দৃষ্টি নেই। এমনকি বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যায় না, এমন একটা অবস্থা ছিল। আমাদের অগ্রাধিকার ছিল কৃষি ও খাদ্য নিশ্চিত করা। কৃষি গবেষণায় আমরা সফল হলাম। তিন চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হলাম। বাংলাদেশের গবেষকরা সব উৎপাদন করতে পারে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের যে মেধা, সেই মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে এই দেশ আর কখনো পেছাবে না, এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের বাস্তবতা।
শিক্ষা বিস্তারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ ছিল সেটাকে আমরা ৬৫.৫ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আবার আট বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন তখন আবার আমরা সেই পুরনো জায়গায় ফিরে গেছি। আবার সেই ৪৫ ভাগে চলে গেছি। ৪৫ না আরও একভাগ কম। যাই হোক তারপর আমরা উদ্যোগ নিই। সেই সাথে সাথে শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আবার নতুন করে পদক্ষেপ নিই এবং আমরা প্রথম শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করি।

শিক্ষাখাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর একটা কথা তিনি বলতেন যে দারিদ্র বিমোচনের জন্য শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি দারিদ্রমুক্ত হতে পারে না। তাই তিনি ড. কুদরতই খুদাকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে দেন। যাতে করে আমাদের দেশে বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রণয়ন হয় এবং দেশের প্রতিটি মানুষ যেন শিক্ষার আলো পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) জাতীয়করণ করে দেন। মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেন, স্কুল-কলেজগুলো আবার পুনরায় চালু হয়। শিক্ষার অর্থ ব্যয়কে তিনি মনে করতেন এটা একটা বিনিয়োগ। এদেশের মানুষ শিক্ষিত হবে, উন্নত জীবন পাবে, এটাই ছিল তার একমাত্র স্বপ্ন। আমরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকে কাজ করে যাচ্ছি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

 

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গম আমদানির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:৩৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে দেশে স্বাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

রোববার (১১ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলা হলে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২২ প্রদান করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি আজ আশাবাদী এদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিয়ে যেতে পারবে না। আবার অন্ধকার যুগে নিয়ে যেতে পারবে না। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই এদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তারপর ক্ষমতায় আসার পর উদ্যোগ নেয়া হয়। আজকে কিন্তু আমরা সেই কাজ করতে সফল হয়েছি; আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কারণ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা যদি তাল মিলিয়ে চলতে না পারি, তাহলে চলব কীভাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম বলেই মহামারি করোনা মোকাবিলা করা সহজ হয়েছে। এমন কি স্কুল-কলেজ যখন সব বন্ধ রাখা হয়, তখন অনলাইনে বিশ্ব মহামারি করোনার মধ্যে ‘আমার ঘর আমার স্কুল’ এ নীতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হয়। আজকে আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধা বিকাশের সুযোগ পেয়েছে। তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী যে শক্তিটা আছে সেটা প্রকাশিত হচ্ছে। আজ তারা যে বক্তব্য দিয়েছে, শুনে আমার মন ভরে গেছে।
নিজের পথচলা সহজ ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা, অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। যার ফলে আজকে বলতে পারি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি শাসনামলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির সময় ক্যাম্পাসে ছিল সেশনজট, অস্ত্রের ঝনঝনানি। বোমা গুলির শব্দ না শুনে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘুমাতে পারতো না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাঙ্গনে আর এমন অবস্থা নাই।

তিনি বলেন, বিশ্ব পরিবর্তনশীল, এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আজকে প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, গবেষণার যুগ। আমি ২১ বছর পর যখন ক্ষমতা পেলাম, তখন আমি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিলাম। একটা প্রজেক্ট নিয়েছিলাম নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। শিক্ষার্থীরাই শুধু শিক্ষা পাবে তা না, বয়স্করাও যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, এক একটা জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা দিয়ে অনেকটা সফল হয়েছিলাম। পাঁচ বছর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ প্রকল্প বাদ করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষিতে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ততটা করতে পারছি না। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এখন আমরা স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ সবদিক থেকে এগিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যখাতের গবেষণায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি তখন দেখি সেশনজট। ৬, ৭, ৮ বছর করে সেশনজট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। আমাদের বহু বন্ধু শিক্ষক ছিল, তারা বলতো আমাদের গুলির আওয়াজ আর বোমের আওয়াজ না শুনলে ঘুমই আসে না। এটাই আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। আমরা এটুকু দাবি করতে পারি ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর সেই পরিবেশ থেকে শিক্ষাঙ্গনকে আমরা মুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নতি হয়েছে। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ যখন খাদ্যে বেশি কষ্ট ভোগ করছে, হ্যাঁ আমাদের এখানেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে অন্তত খাবার পাওয়া যাচ্ছে। এটার কারণ আমি প্রথমবার সরকারে এসেই গবেষণার জন্য আলাদা করে টাকা দিয়েছিলাম। প্রথমে দিলাম ১২ কোটি টাকা। পরে বাজেটের সময় ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখলাম শুধু গবেষণার জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে চলি না। মাথা উঁচু করে চলি, মাথা উঁচু করে চলব। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই বিশ্বকে আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাই হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। জাতির পিতা বলেছিলেন, শিক্ষায় যত অর্থই ব্যয় হোক, এটা হচ্ছে বিনিয়োগ। শিক্ষিত জাতি ছাড়া দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না। তার জন্য আমাদের সব উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়ে যাচ্ছি।

কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রাপ্ত মেধাবীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১’র বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, অর্থাৎ স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি। আজকের ছেলে-মেয়েরাই ভবিষ্যৎ এবং ২০৪১’এ তারাই আমার মতো প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা বড় বড় উচ্চপর্যায়ে যাবে, দেশ চালাবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না। আরও কর্মসূচি তৈরি করে রেখে যাচ্ছি, সেটা হচ্ছে ডেলটা প্ল্যান।

তিনি বলেন, জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

কবি সুকান্তের ভাষায় শেখ হাসিনা বলেন, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় মাথায় রাখতে হবে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা উঁচু করে চলি, মাথা উঁচু করে চলব। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই বিশ্বকে আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা এভাবেই এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথমে সরকারে এসে দেখি এখানে গবেষণার জন্য কোনো ফান্ড নেই। কোনো টাকা নেই, গবেষণার দিকে কারও দৃষ্টি নেই। এমনকি বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যায় না, এমন একটা অবস্থা ছিল। আমাদের অগ্রাধিকার ছিল কৃষি ও খাদ্য নিশ্চিত করা। কৃষি গবেষণায় আমরা সফল হলাম। তিন চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হলাম। বাংলাদেশের গবেষকরা সব উৎপাদন করতে পারে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের যে মেধা, সেই মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে এই দেশ আর কখনো পেছাবে না, এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের বাস্তবতা।
শিক্ষা বিস্তারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ ছিল সেটাকে আমরা ৬৫.৫ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আবার আট বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন তখন আবার আমরা সেই পুরনো জায়গায় ফিরে গেছি। আবার সেই ৪৫ ভাগে চলে গেছি। ৪৫ না আরও একভাগ কম। যাই হোক তারপর আমরা উদ্যোগ নিই। সেই সাথে সাথে শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আবার নতুন করে পদক্ষেপ নিই এবং আমরা প্রথম শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করি।

শিক্ষাখাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর একটা কথা তিনি বলতেন যে দারিদ্র বিমোচনের জন্য শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি দারিদ্রমুক্ত হতে পারে না। তাই তিনি ড. কুদরতই খুদাকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে দেন। যাতে করে আমাদের দেশে বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রণয়ন হয় এবং দেশের প্রতিটি মানুষ যেন শিক্ষার আলো পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) জাতীয়করণ করে দেন। মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেন, স্কুল-কলেজগুলো আবার পুনরায় চালু হয়। শিক্ষার অর্থ ব্যয়কে তিনি মনে করতেন এটা একটা বিনিয়োগ। এদেশের মানুষ শিক্ষিত হবে, উন্নত জীবন পাবে, এটাই ছিল তার একমাত্র স্বপ্ন। আমরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকে কাজ করে যাচ্ছি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।