Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি : জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল আয়োজিত ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল: জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেন। সভায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি কমরেড বদরুদ্দীন উমর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্র্বতী বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গণদুশমন, ফ্যাসিবাদের দোসর, খুনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি অনেকে পালিয়ে গেছেন। কীভাবে তারা পালিয়ে যান, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন- তাদের কি চিহ্নিত করা হয়েছে?’

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ফয়জুল হাকিম বলেন, এ জনপদে বহু আন্দোলন হয়েছে। সংবিধান পড়লে মনে হয়, শুধু পাকিস্তান আমলে আন্দোলন হয়েছে। ইতিহাসের পাতা খুলে দেখুন, বিট্রিশ উপনিবেশ শাসনের বিরোধে কত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে, ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ হয়েছে, তিতুমীরের বিদ্রোহ হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোদ্ধে যে লড়াই, এই সংবিধান পড়লে তো বুঝা যায় না। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের জন্য। সংবিধান সভার নির্বাচন দিতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জনগনকে সমান অধিকার দিতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মেহনতী মানুষের প্রতিনিধি নেই জানিয়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এই নেতা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর এই সরকার গঠিত হতো, তাহলে এই সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন, প্রতিরোধ যারা গড়ে তুলেছিলেন, বিশেষ করে যারা গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, মেহনতী মানুষ তাদের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকতো। কিন্তু আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমজীবী জনগণের মুক্তি কোন পথে সেই সন্ধান করছেন।

‘গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্র্বতীকালীন বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে’, বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করার দাবি জানান নিহত পরিবারের স্বজনরা। একইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসাসহ নিহত ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানান অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারের স্বজনরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলন চলাকালে বাড্ডায় নিহত হাফিজুল ইসলামের শাশুড়ি নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি হত্যার বিচার চাই। আমার মেয়ে ও দুই নাতি নিয়ে চলতে কষ্ট হয়। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য কামনা করছি।’

বাড্ডায় নিহত আরেক যুবক ইমনের মা কুলসুম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০ জুলাই আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করা হয়েছে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

নিহত আমিনের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘২১ জুলাই আমার ছেলে সারা দিন ঘুমিয়ে ছিল। সন্ধ্যায় বাজার করতে ঘর বের হওয়ার পরই তার গুলি লাগে। কাজলা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার সময় রিকশায় তোলার সময় ওর বাবা দেখতে পায়। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফুটবলার হবে। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? কেন তাকে মারলো? কোথায় গেলে আমার ছেলেকে পাবো? এখন কেউ বলে না তুমি এতো কান্দো কেন মা? চার মাস হয়েছে আমি আমার ছেলেকে দেখি না। সরকারের কাছে আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’

আন্দোলন চলাকালে বাড্ডা এলাকায় আহত মো. মোজাহিদ বলেন, ৫ আগস্ট আন্দোলনের সময়ে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পানি বিতরণ করেছিলাম। বিকালে দেখি, পুলিশ বিভিন্ন বিল্ডিং থেকে গুলি ছুড়ছে। ছোট একটা মেয়ের হাতে গুলি লেগেছিল, তাকে বাঁচাতে গেলে আমার গুলি লাগে। তখন মাইক্রোবাস থেকে শটগান থেকে গুলি করে আমাকে। এখনও আমার শরীরের ১২৩টি গুলি রয়েছে। ডাক্তার বলেছে, বুলেট বের করলে আমি বাঁচবো না। আমি চাই, এর বিচার হোক।’

বাংলাদেশ লেখক শিল্পী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হঠাৎ করে ঘটেনি। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার লুটপাট, দুর্নীতি ও জুলুম নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে কৃষক শ্রমিক-জনতার মুক্তি মিলবে না। দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী দীপা মল্লিকসহ নিহত ও আহত পরিবারের স্বজনরা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কেয়ামত পর্যন্ত জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না : গয়েশ্বর

গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি : জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল

প্রকাশের সময় : ০৯:০১:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল আয়োজিত ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল: জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেন। সভায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি কমরেড বদরুদ্দীন উমর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্র্বতী বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গণদুশমন, ফ্যাসিবাদের দোসর, খুনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি অনেকে পালিয়ে গেছেন। কীভাবে তারা পালিয়ে যান, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন- তাদের কি চিহ্নিত করা হয়েছে?’

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ফয়জুল হাকিম বলেন, এ জনপদে বহু আন্দোলন হয়েছে। সংবিধান পড়লে মনে হয়, শুধু পাকিস্তান আমলে আন্দোলন হয়েছে। ইতিহাসের পাতা খুলে দেখুন, বিট্রিশ উপনিবেশ শাসনের বিরোধে কত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে, ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ হয়েছে, তিতুমীরের বিদ্রোহ হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোদ্ধে যে লড়াই, এই সংবিধান পড়লে তো বুঝা যায় না। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের জন্য। সংবিধান সভার নির্বাচন দিতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জনগনকে সমান অধিকার দিতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মেহনতী মানুষের প্রতিনিধি নেই জানিয়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এই নেতা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর এই সরকার গঠিত হতো, তাহলে এই সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন, প্রতিরোধ যারা গড়ে তুলেছিলেন, বিশেষ করে যারা গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, মেহনতী মানুষ তাদের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকতো। কিন্তু আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমজীবী জনগণের মুক্তি কোন পথে সেই সন্ধান করছেন।

‘গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্র্বতীকালীন বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে’, বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করার দাবি জানান নিহত পরিবারের স্বজনরা। একইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসাসহ নিহত ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানান অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারের স্বজনরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলন চলাকালে বাড্ডায় নিহত হাফিজুল ইসলামের শাশুড়ি নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি হত্যার বিচার চাই। আমার মেয়ে ও দুই নাতি নিয়ে চলতে কষ্ট হয়। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য কামনা করছি।’

বাড্ডায় নিহত আরেক যুবক ইমনের মা কুলসুম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০ জুলাই আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করা হয়েছে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

নিহত আমিনের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘২১ জুলাই আমার ছেলে সারা দিন ঘুমিয়ে ছিল। সন্ধ্যায় বাজার করতে ঘর বের হওয়ার পরই তার গুলি লাগে। কাজলা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার সময় রিকশায় তোলার সময় ওর বাবা দেখতে পায়। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফুটবলার হবে। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? কেন তাকে মারলো? কোথায় গেলে আমার ছেলেকে পাবো? এখন কেউ বলে না তুমি এতো কান্দো কেন মা? চার মাস হয়েছে আমি আমার ছেলেকে দেখি না। সরকারের কাছে আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’

আন্দোলন চলাকালে বাড্ডা এলাকায় আহত মো. মোজাহিদ বলেন, ৫ আগস্ট আন্দোলনের সময়ে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পানি বিতরণ করেছিলাম। বিকালে দেখি, পুলিশ বিভিন্ন বিল্ডিং থেকে গুলি ছুড়ছে। ছোট একটা মেয়ের হাতে গুলি লেগেছিল, তাকে বাঁচাতে গেলে আমার গুলি লাগে। তখন মাইক্রোবাস থেকে শটগান থেকে গুলি করে আমাকে। এখনও আমার শরীরের ১২৩টি গুলি রয়েছে। ডাক্তার বলেছে, বুলেট বের করলে আমি বাঁচবো না। আমি চাই, এর বিচার হোক।’

বাংলাদেশ লেখক শিল্পী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হঠাৎ করে ঘটেনি। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার লুটপাট, দুর্নীতি ও জুলুম নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে কৃষক শ্রমিক-জনতার মুক্তি মিলবে না। দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী দীপা মল্লিকসহ নিহত ও আহত পরিবারের স্বজনরা।