খুলনা নগরী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানীর দূরত্ব ২০৭ কিলোমিটার, বাসে যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা। আর নগরী থেকে খুলনারই উপজেলা কয়রার দূরত্ব ৯৯ কিলোমিটার, বাসে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। বিষয়টি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই বাস্তব চিত্র, খুলনা থেকে কয়রা যাওয়ার আগেই ঢাকায় যাওয়া যায়। এর ফলে খুলনা-কয়রা রুটে যাতায়াত করা লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘ সময় লাগার কারণগুলোর মধ্যে সড়কের বেহাল অবস্থা ও সরাসরি বাস সার্ভিস না থাকা অন্যতম।
নগরীর রয়্যাল মোড়ের গ্রিনলাইন পরিবহন কাউন্টারের সেলস অফিসার শহিদুল ইসলাম ও সোহাগ পরিবহনের বুকিং ক্লার্ক মাহবুবুর রহমান বুলবুল জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখন খুলনা থেকে বাসে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা।
খুলনা জেলা বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা জানান, খুলনা থেকে সরাসরি কয়রা পর্যন্ত কোনও বাস চলাচল করে না। নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে ১৫ মিনিট পরপর পাইকগাছা উপজেলা সদরের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। পাইকগাছা থেকে ২০ মিনিট পরপর কয়রার উদ্দেশে পৃথক বাস ছেড়ে যায়। ৯৯ কিলোমিটার সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানের অবস্থা ভাঙা। সড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক এবং কয়েকটি হাট-বাজার। ভাঙাস্থান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও হাট-বাজারে বাস ধীরে চালাতে হয়। এসব কারণে খুলনা থেকে কয়রা যেতে অনেক সময় লাগে।
বাসচালক আবদুল আজিজ ও আবদুল গণি জানান, খুলনা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার এবং বাস ভাড়া ১৪০ টাকা। সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। আর পাইকগাছা থেকে কয়রা পর্যন্ত দূরত্ব ৩১ কিলোমিটার, ভাড়া ৮০ টাকা। সময় লাগে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। অর্থাৎ খুলনা থেকে কয়রা পর্যন্ত বাসে যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা। কিন্তু খুলনা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত যাওয়ার পথে মোট ২৭টি স্থানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো হয়। একইভাবে পাকইগাছা থেকে কয়রা পর্যন্ত ১০টি স্থানে যাত্রী উঠানামা করে। সে কারণে সময় আরও বেশি লাগে।
নগরীর বাসিন্দা আবদুল মালেক কয়রায় একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তিনি নিয়মিত খুলনা থেকে বাসে কয়রায় যাওয়া-আসা করেন। তিনি বলেন, খুলনা থেকে কয়রা উপজেলা সদর পর্যন্ত বাসে যেতে যে সময় লাগে তার আগে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। ঢাকা যেতে লাগে ৪ ঘণ্টা, আর অর্ধেক দূরত্বে কয়রা যেতে লাগে সাড়ে ৪ ঘণ্টা।
তিনি আরও বলেন, অপ্রশস্ত ও ভাঙা সড়ক, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, সড়কের ওপর ২৫টি হাঁট-বাজার, ফিটনেসবিহীন বাসের কারণে ধীরগতি, সরাসরি বাস সার্ভিস না থাকা, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে স্টপেজ হওয়ায় দীর্ঘ সময় লাগে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়াও এসব লোকাল বাসে যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো হয়। এর ফলে যাওয়া-আসায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কয়রা সদরের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, খুলনার আদালতে কোনও মামলার কাজ থাকলে একদিন আগে বাড়ি থেকে রওনা দিতে হয়। তা না হলে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো যাবে এ রকম গ্যারান্টি এ রুটে নেই।
মনিরুল ইসলাম নামে আরেক বাস যাত্রী অভিযোগ করেন, এমন লক্কড়-ঝক্কড় বাস দেশের অন্য কোনও রুটে চলাচল করতে দেখা যায় না। অনেক সময় পথের মাঝে বাস বিকল হয়ে পড়ে।
পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, বছরের পর বছর এই রুটের যাত্রীরা চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এই সমস্যা নিরসন করতে হলে সড়ক সংস্কার এবং সরাসরি ভালো মানের বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় যোগদান করতে মাসে কয়েকবার সরকারি গাড়িতে খুলনায় যেতে হয়। কিন্তু সড়কের ভোগান্তির কথা মাথায় আসলে খুবই বিরক্ত লাগে। অনেক সময় সকালে সভা থাকলে আগের রাতে জেলা শহরে চলে যেতে হয়।
তিনি বলেন, সড়কটি অনেক দীর্ঘ, কিন্তু এর প্রশস্ততা কম। এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি বাঁকে সড়কের উপর হাঁট-বাজার রয়েছে। সেই সঙ্গে সারাবছর দীর্ঘ এ সড়কের কোথাও না কোথাও সংস্কার কাজ চালু থাকে। যে কারণে সময় বেশি লাগে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, খুলনা থেকে বেতগ্রাম ভায়া তালা ও পাইকগাছা হয়ে কয়রা উপজেলা পর্যন্ত সড়কে প্রায় ২৭টি বাঁক রয়েছে। বাঁক সরলীকরণ ও সড়কের উন্নয়নে বর্তমানে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে হয়তো এ পথে যাতায়াতে সময় কিছুটা কমবে।